প্রতিকার চেয়ে পৌরসভা মেয়রের নিকট লোকমোর্চার স্মারকলিপি পেশ
আলম আশরাফ: ক’দিনের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের সড়কগুলো যেন ঘিঞ্জি হয়ে উঠেছে। যেমন যানজট, তেমনই শব্দদূষণ। আর পথচারীদের চলাচলের রাস্তা? সেটাও বেদখলে। কোথাও কোথাও সারিবদ্ধ ট্রাক, কোথাও অবৈধ স্থাপনা। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের আশা স্মারকলিপি দিয়েছে চুয়াডাঙ্গা সদর লোকমোর্চা। গতকাল রোববার চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায় পৌর মেয়রের নিকট স্মারকলিপি পেশ করা হয।
চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের প্রধান সড়কে ডিভাইডার নির্মাণের সময়ও এমন যানজট পড়তে হতো না। অথচ কয়েক মাসের মধ্যেই জেলা শহরের সড়কগুলো দিনের অধিকাংশ সময়ই থাকছে যানজট। আর শহীদ হাসান চত্বর? ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও মাঝে মাঝেই গাড়ি চলাচলের ন্যূনতম নিয়ম মানতে দেখা যায় না। কেন? অল্প কিছুদিনের মধ্যে জেলা শহরে অসংখ্য অটো নামানোর কারণে সড়কের মূলত করুণদশা। ইজিবাইক বা ব্যাটারিচালিত অটো মালিক-চালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, প্রয়োজনের তাগিদেই রাস্তায় অটোর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। সমিতির সদস্য সংখ্যা ৫শ হলেও বাস্তবে কয়েক হাজার অটো শহরের সড়কে চলাচল করে। শহর থেকে বাইরে যেতে দেন না বাস মালিক সমিতির নিয়োজিত লোকজন। পুলিশও তাদের সহযোগিতা করে। ফলে সকল অটোই শহরের মধ্যে। তাছাড়া বাইপাস সড়ক নির্মাণ না করেই সকল রুটের বাস টার্মিনাল কেন্দ্রিক করতে গিয়ে শহরে বারোটা বাজানো হচ্ছে। বিশেষ করে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের বাস শহরের মধ্যে নেয়ার কারণে দুর্ভোগ বেড়েছে। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা পৌর ট্রাক টার্মিনাল না থাকার কারণে সড়কের দু ধারে ট্রাক রেখে ধোয়া মোছা করা হয়। এতে শুধু পথচারীদের চলাচলে বিঘ্নই হয় না, সড়কও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব সমস্যা থেকে শহরবাসী প্রতিকার চায়। এই চাওয়া ত্বরান্বিত করতে গতকাল লোকমোর্চা চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কমিটি স্মারকলিপি দিয়েছে।
লোকমোর্চা এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের জনগুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সমস্যার সমাধান চেয়েছে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা লোকমোর্চা। গতকাল রোববার তারা চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়রের কাছে দাবি সংবলিত স্মারকলিপি পেশ করেছেন। সভাপতি সহিদুল হক বিশ্বাস ও সম্পাদক পারভীন লাইলা মালিক স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিটি গতকাল পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপুর হাতে তুলে দেন তারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সভাপতি-সম্পাদকসহ সহসভাপতি শাহানা ইউসুফ কেয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ বিশ্বাস মিল্টু, প্রচার সম্পাদক মাবুদ সরকার, ওয়েব ফাউন্ডেশনের সমন্বয়কারী নুঝাত পারভীন, কানিজ সুলতানা, নির্বাহী সদস্য নাসির আহাদ জোয়ার্দ্দার, ইদ্রিস হোসেন, খলিলুর রহমান, শিখা সেন গুপ্ত, আনোয়ার হোসেন, কামরুজ্জামান সজল, সাব্বির কামাল ও সৈয়দ মমতাজ বেগম।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, চুয়াডাঙ্গা শহরে চাহিদা অতিরিক্ত অটোরিকশা, ইঞ্জিনচালিত ভ্যান ও রিকশায় ছেয়ে গেছে এবং স্থানীয় যাতায়াতের জন্য প্রধান যানবাহন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু শহরের মধ্যে একদিকে যেমন রিকশাস্ট্যান্ড নেই ফলে যত্রতত্র দাঁড়িয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে অন্যদিকে অদক্ষ ও প্রশিক্ষণবিহীন এসব অটোরিকশা চালকদের কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। এই অবস্থা উত্তরণের জন্য অটোরকিশা নিয়ন্ত্রণ, চালকদের প্রশিক্ষণ প্রদান ও রিকশাস্ট্যান্ড ব্যবস্থার জোর দাবি জানাচ্ছি।
চুয়াডাঙ্গা শহরের ড্রেনসমূহ অনেক ক্ষেত্রেই ময়লা আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে এবং মশা-মাছির উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। তাই নিয়মিত মশা-মাছি নিধন ও সকল ড্রেন নিয়মিত পরিষ্কার ও সংস্কার করা প্রয়োজন। পাশাপাশি অনেক স্থানে ড্রেনের উপরের স্লাবগুলো জরাজীর্ণ ও ভঙ্গুর অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে যখন তখন মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটছে। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
মাঝে মাঝেই সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ফুটপাত থেকে দোকানপাট উচ্ছেদ করা হচ্ছে কিন্তু কিছু দিন পরই আবার ভরে উঠছে। এভাবে ফুটপাত দখল করে জনগণের হাঁটার পথ বন্ধ করা যেমন অন্যায় তেমনি দরিদ্র মানুষগুলোকে পুনর্বাসিত না করে ক্ষতিগ্রস্ত করা উচিত নয়। শহরের মধ্যকার প্রশস্ত অংশের রাস্তার অব্যবহৃত জমি পৌরসভা কর্তৃক বন্দোবস্ত নিয়ে সবুজায়ন ও পরিবেশবান্ধব দোকানঘর নির্মাণ করে দরিদ্র মানুষগুলোকে পুনর্বাসিত করার দাবি করছি।