শিশু মিথ্যা বলছে? চিকিৎসক যা বললেন

 

স্টাফ রিপোর্টার: রোহিতের (ছদ্মনাম) বয়স ৭ বছর। সে রোজ স্কুলভ্যানে যাওয়া-আসা করে। আর মা অফিস থেকে বাসায় ফিরলে তার সঙ্গে স্কুলের সব গল্প করতে বসে যায়। স্কুলের ওই বান্ধবী তাকে এটা বলেছে, সেই বান্ধবী তার খাতায় পানি ফেলে দিয়েছে এরকম নানা অভিযোগও করে সে। মা সেটাই মেনে নিয়ে স্কুলে শিক্ষককে ঠিকমতো পড়া দিয়েছে কি না সেটা প্রশ্ন করেন? রোহিত এবারও লক্ষ্মী শিশুর মতো মাথা নেড়ে বলে সে সব পড়া করেছে এবং স্কুলের শিক্ষককেও নিয়মিত পড়া দেয়। কিন্তু মায়ের ভুলটা ভাঙে তখনি যখন রোহিতের সহপাঠী শানিলার মায়ের সঙ্গে দেখা হয়। রোহিত প্রায় প্রতিদিন বাড়ির কাজের খাতা জমা দেয় না। স্কুলে কয়েকবার শাস্তিও পেতে হয়েছে তাকে। স্কুলভ্যান আসতে দেরি হলে রোহিত  বাইরে খেলা করে অনেক সময় একাই বাইরে গিয়ে ফেরিওয়ালার কাছ থেকে ঝালমুড়ি কিনে খায়। এ বিষয়গুলো রোহিতকে জিজ্ঞাসা করলে প্রথমে সে স্বীকার করে না। শেষে রেগে গিয়ে বলে, সে স্কুলের পড়া বোঝেনি তাই বাড়ির কাজ করতে পারেনি। কিছু জিজ্ঞেস করলে যদি বকা দেয় এ আশংকায় শিক্ষকের কাছে সে দ্বিতীয়বার পড়া জানতে চায়নি। এইটুকু শিশুর বানিয়ে বানিয়ে কথা বলতে শিখেছে দেখে মায়ের বুক তো শুকিয়ে কাঠ। শিশুর এমন নির্দোষ অসত্য যেনো কঠিন আকার ধারণ না করে সেটা দেখার দায়িত্ব প্রতিটি মা-বাবার। আর শিশুকে প্রাথমিকভাবে সত্য-মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যটা বোঝানো জরুরী। এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু বিশেষজ্ঞ  ড. সাখাওয়াত আলম :

প্রথমেই শিশুর মিথ্যা কথা বলার কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। সে নিজেকে কোনো অসুবিধা থেকে বাঁচাতে মিথ্যা কথা বলছে? ও কি ভেবেছে সত্যি কথা বললে শাস্তি পাবে? না কি অভ্যাসবশত অসত্য বলেছে? কারণটা খুঁজে পেলে সংশোধন করতে সুবিধা হয়।

অনেক সময় শিশুরা কথা বাড়িয়ে বলে। যেমন সে পড়ছিলো, হয়তো বন্ধুদের কাছে বলল- মাঠে খেলতে গেছে। এটা ঠিক মিথ্যা নয়, বরং নিজেকে জাহির করা। এই বানানো আচরণ দেখে বকাবকি না করে বরং তার কল্পনাশক্তিকে ঠিকভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করুন।

মিথ্যা বললে শিশুকে জোর করে মারধর করে সত্যি কথা বলানোর চেষ্টা করবেন না। এতে সে জেদী হয়ে যাবে। বরং নরম গলায় তার কাছে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চান। তাকে বোঝানোর চেষ্টা করুন।
অবসর সময়ে শিশুকে ছবিতে রঙ করতে দিন অথবা কোনও কার্টুনের ভালো চরিত্রগুলো আঁকতে বলুন। তারপর ওই কার্টনের চরিত্র নিয়ে আলোচনা করুন। এতে শিশুটি নিজের ভুল বুঝতে পারবে এবং আপনাকে সরি বলবে।

শিশুর মধ্যে ভালো অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য বাবা-মা তার সঙ্গে গল্প করুন। দু’জনেই বন্ধুর মতো আচরণ করুণ। তাকে শিক্ষামূলক গল্প পড়ে শুনিয়ে জানতে চান যে, এই গল্পটা থেকে সে কী শিখল।
শিশুকে ডায়েরি লেখায় উৎসাহ দিন, যাতে সে রোজ কী ভালো কাজ করেছে তা লিখে রাখতে পারে। সপ্তাহ শেষে ভালো কাজের জন্য তাকে পুরষ্কৃত করুন। শিশুকে সময় দিন এবং নিজেদের ব্যবহারে পরিবর্তন আনুন। বাচ্চার সামনে কখনও এমন কোনও কাজ করবেন না, যা তার কোমল মনে কঠোর প্রভাব ফেলতে পারে। আর সময় পেলে আপনার আদরের সন্তানকে বেড়াতে নিয়ে যান। সবার সঙ্গে মিশতে শেখান, কারণ আপনার আদরের শিশুটিই তো আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।