আইনি জটিলতায় জেলা পরিষদ নির্বাচন : রিট আবেদনের শুনানি আজ

 

স্টাফ রিপোর্টার: আইন প্রণয়নের ১৬ বছর পর আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে আইনি জটিলতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল ও স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ) আইনের তিনটি ধারার কার্যকারিতা স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে দাখিল করা একটি রিট আবেদনের ওপর আজ রোববার শুনানি হতে যাচ্ছে। এছাড়া নির্বাচনে পরোক্ষ ভোটারদের তালিকা নিয়েও জটিলতা দেখা দিয়েছে।

মূলত জেলা পরিষদ নির্বাচনে সাধারণ ভোটারদের পরিবর্তে ‘নির্বাচকমণ্ডলী’ তথা পরোক্ষ ভোটারদের বৈধতা নিয়ে রিট আবেদনটি করা হয়েছে। কারণ এই নির্বাচনের ভোটার হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট জেলার পৌরসভাগুলোর মেয়র, কাউন্সিলর, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং ইউনিয়ন পরিষদগুলোর চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মেম্বাররা যারা পরোক্ষ ভোটার হিসেবে পরিচিত। তাদের মধ্যে সর্বশেষ গত অক্টোবরে যারা নির্বাচিত হয়েছেন, তারা শপথগ্রহণ ছাড়াই ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, গত ২৯ অক্টোবর করা ওই রিট আবেদনে জেলা পরিষদ নির্বাচনের বিদ্যমান ব্যবস্থা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে দাবি করা হয়েছে। রিটকারী আইনজীবী ইউনূস আলী আকন্দ গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, জেলা পরিষদ আইনে নির্বাচকমণ্ডলী হিসেবে যাদের নির্ধারণ করা হয়েছে তাঁরা কেউই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বা সদস্য নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য নির্বাচিত হননি। সংবিধানেও কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এ ধরনের পরোক্ষ ভোটের বিধান নেই। এ অবস্থায় জেলা পরিষদে পরোক্ষ ভোট হওয়াটা সংবিধানসম্মত নয়।

বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর ডিভিশন বেঞ্চে গত ২৯ অক্টোবর রিট আবেদনটি উপস্থাপন করা হলে ওই দিন আদালত শুনানির জন্য ৪ অক্টোবর (আজ রোববার) তারিখ ধার্য করেন। রিটে মন্ত্রিপরিষদসচিব, আইনসচিব, স্থানীয় সরকার সচিব ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বিবাদী করা হয়েছে।

ইউনূস আলী আকন্দ গত রাতে এ রিট সম্পর্কে আরো বলেন, সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রশাসনের সব পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। এছাড়া সংবিধানের ৫৯(১) অনুচ্ছেদে স্থানীয় শাসন সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘আইনানুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানসমূহের ওপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক একাংশকে স্থানীয় শাসনের ভার প্রদান করা হবে। তিনি বলেন, যেহেতু সংবিধানে নির্বাচকমণ্ডলী নির্ধারণের কোনো বিধান নেই, তাই কোনো আইন দ্বারা তা করা বেআইনি। স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ) আইন-২০০০-এর ৪(২) ধারা অনুযায়ী নির্বাচকমণ্ডলী গঠন এবং ১৭ ধারা অনুযায়ী ভোটার কারা হবেন তা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া রিটে ওই আইনের সর্বশেষ সংশোধনীর ৫ ধারা বাতিল করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

জানা যায়, গত ২৯ নভেম্বর বিকেলে আবেদনটি শুনানির জন্য হাইকোর্টে উপস্থাপন করা হলে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস আদালতে বলেন, রিটের বিষয়বস্তুর সঙ্গে আইনের ব্যাখ্যার বিষয়টি জড়িত। আইন পর্যালোচনা করতে হবে। তখন আদালত শুনানির জন্য দিন ধার্য করে বলেন, ‘আপনারা আইনের ব্যাখ্যাগুলো জেনে আসবেন।

এদিকে জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটার তালিকা নিয়েও কিছু ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠেছে। গত ৩১ অক্টোবর বিলুপ্ত ছিটমহলসংশ্লিষ্ট ইউনিয়নগুলোসহ প্রায় ৪শ টি ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচিতদের অনেকেরই শপথ ও দায়িত্বভার গ্রহণ সম্পন্ন হয়নি। কিন্তু ভোটার তালিকায় তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত নেয়, গত ২০ নভেম্বর জেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দিন যাঁরা এ নির্বাচনের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিলেন তারাই ভোট দিতে পারবেন। তবে ২৪ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনের এক নির্দেশনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেয়া হয়, যাদের নির্বাচনের ফল সরকারি গেজেটে প্রকাশ হয়েছে তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কিছু জেলায় ২০ নভেম্বরের পরও ভোটার তালিকা সংশোধন করতে হচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশন আবার সিদ্ধান্ত নেয়, ২০ নভেম্বর পর্যন্ত যাঁরা ভোটার তালিকায় ছিলেন, তারাই ভোটার হবেন। এ অবস্থায় নতুন করে জটিলতায় পড়েছেন স্থানীয় নির্বাচন কর্মকর্তারা। এ ছাড়া মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও নির্বাচন হয়নি এমন কিছু ইউনিয়ন ও পৌরসভার ভোটার নিয়েও সমস্যা রয়েছে।

গতকাল এক জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, ২৪ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি গেজেটে প্রকাশিত নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তারা অনেকে প্রার্থীদের সমর্থক ও প্রস্তাবকও হয়েছেন। কিন্তু গত বৃহস্পতিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আবারও ২০ তারিখের আগের তালিকা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। ফলে নতুন অন্তর্ভুক্ত ভোটারকে এখন তালিকা থেক বাদ দিতে হচ্ছে। এ কারণে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে জটিলতা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ গত রাতে সাংবাদিকদের বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য ২০ নভেম্বরে যে ভোটার তালিকা ছিলো তা অপরিবর্তিত থাকবে।

প্রসঙ্গত, ঘোষিত তফসিল অনুসারে আগামী ২৮ ডিসেম্বর জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনে গত ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার কাজ শেষ হয়েছে। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই আজ ৪ ডিসেম্বর শেষ হবে। আপিল নিষ্পত্তির তারিখ নির্ধারিত হয়েছে ৮ ও ১০ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১১ ডিসেম্বর এবং প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে ১২ ডিসেম্বর।