খালেদাকে ক্ষমা চাইতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

 

স্টাফ রিপোর্টার: নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রস্তাব দেয়ার আগে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার জন্য খালেদা জিয়াকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হাঙ্গেরি সফর থেকে ফেরার পর শনিবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি চেয়ারপারসনকে তিনি এ পরামর্শ দেন। খালেদা জিয়ার তুলে ধরা ১৩ দফা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার বিষয়ে মতামত চাইলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, তিনি নির্বাচন করেননি, একটা দল হিসেবে বা দলের প্রধান হিসেবে একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাচন থেকে বিরত থেকে ছিলো। এখন এতোদিন পর উনার টনক নড়লো। এরপর উনি মানুষ খুন করে আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাত করার আন্দোলন করলেন। যেকোনো প্রস্তাব দেয়ার আগে তার তো জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিলো যে, সে যে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছে তার জন্য। নৃশংস সেসব হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, একটু হিসাব করে দেখেন যে, কতো মানুষকে সে পুড়িয়ে মেরেছে। তার তো আগে প্রথমে এ কথাই বলা উচিত ছিলো যে, তার ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিলো। এতো সাধারণ মানুষ, বাসের ড্রাইভার, হেলপার, রেল, লঞ্চ, কোথায় না আঘাত করছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ তো ধ্বংস করেছে। বিদ্যুতকেন্দ্র পুড়িয়েছে, ইঞ্জিনিয়ারকে ফেলে দিয়ে মেরেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার ২০ জন সদস্যকে হত্যা করেছে। আগে সেই জবাবটা জাতির কাছে দিক। তারপর তার প্রস্তাব নিয়ে কথা বলবো। তিনি একটি বাড়িতে বসে থাকবেন, সরকার উৎখাত না করে বাড়ি ফিরবেন না। আর মানুষ পোড়াবে। তার কাছ থেকে আর কি আশা করবেন। ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে গেলে তাকে বাড়িতে ঢুকতে না দেয়ার ঘটনাকে অভদ্রতা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি এই ধরনের অভদ্র যারা, তারা কি প্রস্তাব দিল না দিল ওটা নিয়ে আমার মতামত চান কেন আপনারা? এ ধরনের ছোটলোকি যারা করে, অভদ্রতা যারা করে তাদের কোনো মতামতের ওপর মতামত দেয়ার অভিপ্রায় আমার নেই। যারা খুনি, খুনিদের কথার আবার কিসের জবাব দেবো। নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে বিএনপির দোলাচলের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা আজকে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তো কালকে ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। তাদেরও তো সিদ্ধান্তের কোনো মিল নেই। পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তারা জিতেছিল। তখন নির্বাচন কমিশন নিয়ে অভিযোগ উঠাল না কেন? তখন কিন্তু কথা বলেনি। আজকে একটা অংশগ্রহণ করবে, জিতলে ভালো, হারলে সব খারাপ। বিএনপি নেতৃত্বের কোনো সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতাই নেই মন্তব্য করে জবাবের শেষ পর্যায়ে খালেদা জিয়ার উদ্দেশে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, ‘সাজুগুজু করে বসে থাকলেই সব হয় না।

স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামী ও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের নিয়ে গঠিত ফ্রিডম পার্টির সঙ্গেও নির্বাচন কমিশনের আলোচনায় বসতে বিএনপির দাবির বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কারণ এটা তো বাস্তব, তিনি একেবারে সেই ৭২’র পর থেকে যত পার্টি; ফ্রিডম পার্টি থেকে শুরু করে খুনিদের দল, স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামী সবাইকে নিয়েই উনি কথা বলতে চায়। উনার ভাব তো বোঝাই গেল উনি কি চাচ্ছে। বিএনপি স্বাধীনতাবিরোধীদের মন্ত্রী এবং ভোট কারচুপির নির্বাচন করে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সংসদে বসিয়েছিল বলেও উল্লেখ করেন তিনি। খালেদা জিয়ার প্রস্তাব নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তার প্রস্তাব নিয়ে এতো তোলপাড় করার কি আছে আমি তো বুঝি না। যে দেশের স্বাধীনতায়ই বিশ্বাস করে না।’  তবে খালেদা জিয়ার প্রস্তাবের বিষয়ে সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপতির ওপর ছেড়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা রাষ্ট্রপতি ভালো বুঝবেন। তিনি পদক্ষেপ নেবেন। যে পদক্ষেপ নেবেন সেটাই হবে। এখানে আমাদের কোনো বলার কিছু নেই।’ বিএনপির ক্ষমতায় থাকার সময় বিতর্কিত নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে প্রশ্ন একটাই আসে যে, তারা যখন ক্ষমতায়, তারা যে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছিল সেগুলো কি তাদের স্মরণে আছে? সে কথাগুলো তো তাদের একটু স্মরণ করে দেয়া উচিত যে নির্বাচন নিয়ে কি খেলা তারা খেলেছে।’ এর আগে সার্চ কমিটি তৈরি করে যেভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছিল এখনো সেই পদ্ধতিই অনুসরণ করা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। এটা যান্ত্রিক ত্রুটি ছিলো আর কিছুই না। আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলনে যোগ দিতে হাঙ্গেরি যাওয়ার পথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানের জরুরি অবতরণ নিছক যান্ত্রিক ত্রুটি ছিলো বলে জানিয়েছেন তিনি। এ সময় জীবন মৃত্যু পায়ের ভৃত্য- চরণটি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এটা যান্ত্রিক ত্রুটি ছিলো। আর কিছুই না। আল্লাহর রহমতে সহি-সালামতে ফিরে এসেছি। যান্ত্রিক ত্রুটি হতেই পারে। সবার দোয়া চাই।

শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা জানেন, আমার বাবা-মাকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমি এসেছি। ঝুঁকির মধ্যে আছি, চলতে থাকবো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ঘটনা যান্ত্রিক কারণে হতে পারে আবার মনুষ্য সৃষ্টিও হতে পারে। তবে দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। এ নিয়ে এতো টেনশন করার কিছু নেই।

আলাদা বিমানে চড়বেন না প্রধানমন্ত্রী: ভিভিআইপিদের জন্য নতুন এয়ার ক্রাফট কেনার কথা নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, যে বিমানে সাধারণ মানুষ চড়েন, সেই বিমানেই তিনি চড়বেন। তিনি বলেছেন, আমি তো সাধারণ মানুষের জন্য রাজনীতি করি, তারা যেভাবে যাতায়াত করেন তাদের মতোই আমি চলবো। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর জন্য নতুন এয়ার ক্রাফট কেনার বিলাসিতার সময় আমাদের এখনো আসেনি। এয়ার কারও ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য কেনা হয় না। সাধারণ মানুষের জন্য কেনা হয়।

মধ্যবর্তী নির্বাচনের সম্ভাবনা নাকচ: দেশে মধ্যবর্তী নির্বাচনের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এক সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিলো, বিভিন্ন টকশোতে অনেকেই মধ্যবর্তী নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখতে পান। আপনি পান কি না? জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, এখন আর মধ্য নেই, মধ্য পার হয়ে গেছে। আমরা তিন বছর পার করছি। মধ্যবর্তী যদি বলেও থাকেন, সেটা পরবর্তীর বিষয়ে বলেছেন। তিনি আরও বলেন, স্বপ্ন দেখা ভালো।

সন্ত্রাসীকে ঠাঁই দেয়া হবে না: মিয়ানমারে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে এসে বাংলাদেশে কেউ ঠাঁই পাবে না বলে সতর্ক করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে নয়জনকে হত্যা করা হয়েছে। এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে বাংলাদেশে এসে কেউ আশ্রয় পাবে না। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, সেখানেতো মানুষ কষ্টে আছে। কিন্তু এই যে নয় জন মানুষকে হত্যা করা হলো… আমি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনদের বলে দিয়েছি, তাদের কেউ যদি বাংলাদেশে ঢুকে থাকে তাহলে তাদের যেন গ্রেফতার করা হয়।

Leave a comment