ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে দলিল লেখক সমিতির নামে চাঁদাবাজি

 

আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় অবৈধ সমিতি ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু সাব রেজিস্ট্রি অফিসে কথিত সেরেস্তা খরচের নামে দলিল লেখক সমিতির বেপরোয়া চাঁদাবাজি চলছে। বছরের পর বছর এই চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন জমির মালিকরা। হরিণাকুণ্ডু আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সমিতি ভেঙে দেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত হলেও তা কার্যকর হয়নি। উপজেলা প্রশাসন ও হরিণাকুণ্ডু সাব রেজিস্ট্রার এ বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। অন্যদিকে দরিদ্র কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। জমি কেনা-বেচা করতে অনেকেই অনিহা প্রকাশ করছেন। ফলে জমি রেজিস্ট্রির হারও দিনকে দিন কমছে।

হরিণাকুণ্ডু আইন-শৃঙ্খলা কমিটির এক সদস্য জানান, গত ৩ মাস ধরে বেআইনিভাবে গঠিত এ সমিতি ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সভায় হরিণাকুণ্ডুর প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণ সমিতি ভেঙে দেয়ার পক্ষে সাই দেন। কিন্তু সাব রেজিস্ট্রার হাসানুজ্জামান এ বিষয়ে কোনো কঠোর সিদ্ধান্ত নেন নি। কারণ তিনিও এই সিমিতির সুবিধাভোগী বলে কৃষকরা অভিযোগ করেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দলিল লেখকদের এই কথিত সমিতি প্রতি বছরে কমপক্ষে ৫০ লাখের বেশি টাকা আয় করে থাকে। সমিতির সভাপতি হিসেবে ওয়াজেদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিশারত আলী দায়িত্ব পালন করছেন। মূলত তারাই টাকা ভাগাভাগি করার দায়িত্বে রয়েছে।

সরকারি একটি সূত্র জানায়, নিয়মানুযায়ী একটি দলিল রেজিস্ট্রি করতে সরকারকে পৌরসভা এলাকায় প্রতি লাখে সাড়ে ১১ হাজার ও পৌরসভার বাইরে সাড়ে ৯ হাজার টাকা করে ফি দিতে হয়। হরিণাকুণ্ডুতে বেআইনিভাবে গঠিত এই সমিতি সরকার নির্ধারিত ফির বাইরে পৌরসভা এলাকায় প্রতি লাখে ১৬ হাজার ও ইউনিয়নে নিচ্ছে ১৫ হাজার। প্রতিটি দলিল বাবদ হাজার হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে। রসিদ বিহীন এই টাকা কোনো ব্যাংক একাউন্টে রাখা হয় না এবং সাধারণ সদস্যদেরও কোনো হিসেব দেয়া হয় না। অফিসকে একটি ঘুষের অংশ দিয়ে বাকি টাকা নিজেরা ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়া হয়।

কয়েকজন দলিল লেখক জানান, আমাদের কাছ থেকে সেরেস্তা খরচ আদায় করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন খাতে দেয়ার নামে মোটা অঙ্কের টাকা লোপাট করা হয়। অভিযোগ উঠেছে দীর্ঘদিন ধরে নিরুপায় হয়েই এ টাকা দিতে হচ্ছে জমির মালিকদের। লেখক সমিতির এ আইন কেউ না মেনে চললে জমি রেজিস্ট্রি করা হয় না। যা ভোক্তা সংরক্ষণ আইনের পরিপন্থি।

একজন আইনজ্ঞ জানান, ভোক্তা সংরক্ষণ আইনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইচ্ছা করলে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জেল জরিমানা করতে পারেন। কিন্তু হরিণাকুণ্ডুর ক্ষেত্রে তা করা হচ্ছে না। কয়েক যুগ ধরে দলিল লেখকদের এই চাঁদাবাজিতে জমির মালিকরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন।

এ ব্যাপারে হরিণাকুণ্ডু উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাড এমএ মজিদ জানান, হরিণাকুণ্ডু আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সমিতি ভেঙে দেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছিলো। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয় সাবরেজিস্ট্রারকে। কিন্তু তিনি দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেননি।

বিষয়টি নিয়ে দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ওয়াজেদ আলী জমির মালিকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কথা স্বীকার করে বলেন, আমরা তো কোনো সরকারি ভাতা পাই না, তাই সবাই মিলেই এ টাকা গ্রহণ করি। এছাড়া এ টাকা অসহায়-অস্বচ্ছল দলিল লেখকদের মাঝে বন্টণ এবং বিভিন্ন ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দিয়ে থাকি।