আন্দুলবাড়িয়ার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের জমি প্রাভাবশালীদের দখলে

 

আন্দুলবাড়িয়া প্রতিনিধি: জীবননগরের আন্দুলবাড়িয়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের জমি একের পর এক দখল করার অভিযোগ উঠেছে। কেন্দ্রের আশপাশের বাণিজ্যিক ও আবাসিক প্রতিষ্ঠানের প্রভাবশালী মালিকদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তুলেছে স্থানীয় জনতা ও কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি কাজি আশরাফুলদৌলা ওরফে মওলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জমিতে বাথরুমের হাউজ র্নিমাণ করায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ আপত্তি জানিয়ে অপসারণ করে নিতে বলেছেন। অবৈধ দখলমুক্ত করতে কয়েকদফা কর্তৃপক্ষের নিকট এলাকাবাসী গণ স্বাক্ষরিত অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। এ অভিযোগপত্র পেয়ে কর্তৃপক্ষ অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে জমি দখলমুক্ত করতে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পাশে ঝোপঝাড়, নোংরা পানি ও সম্প্রতি বাথরুমের হাউজ নির্মাণ করায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি নিজে পরিবেশ দূষণ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে সেবাদান করছে। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে প্রভাবশালী মহল সরকারি জমি জবর দখল নিয়ে ইচ্ছেমতো ভোগদখল করে আসছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগে জানা গেছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৯ সালে জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়িয়ায় ভৈরবনদীর তীরে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সচিব বাহাদুরের নামে ৬১ শতক জমি কিনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ও আবাসিক কোয়ার্টার নির্মাণ করা হয়। এ কেন্দ্রটি এলাকায় হাসপাতাল নামে পরিচিত। এলাকার দুস্থ, অসহায়, হতদরিদ্র, মা ও শিশুদের সেবাদান করে আসছে। অভিযোগ উঠেছে, স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও আবাসিক কোয়ার্টারের চারিদিকে প্রভাবশালী আবাসিক ও বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মালিকরা বাড়িঘর, বিল্ডিং, গেট, বাথরুমের হাউজ ও গাছপাল লাগিয়ে একের পর এক দখল করছে। সূত্র জানান, আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মালিকগণ কে কতোটুকু জমির মালিক তার দলিলপত্র দেখাতে নানা টালবাহনা করার অভিযোগ রয়েছে। ইতঃপূর্বে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা প্রতিবাদ করায় কেন্দ্রের দরজা ও তালায় মানুষের মল নিক্ষেপ করা হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী জানান। এছাড়াও কর্মকর্তা, কর্মচারীরা প্রতিবাদ করলে প্রকাশ্যে দেয়া হয় নানা হুমকি। এসব অত্যাচার ও হুমকির মুখে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মকর্তা, কর্মচারীগণ প্রভাবশালী দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। সরকারি জমি দখল নিয়ে আবাসিক বাসিন্দারা বাড়িঘর নির্মাণ করায় গাছা-পালা ও নোংরা পানিতে সয়লাব কেন্দ্রটি। মশা, মাছির উপদ্রবসহ পরিবেশ দূষণ হয়ে পড়েছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য কেন্দ্র চত্বরে গরু-ছাগলের অবাধ বিচারণ রয়েছে। গরু ছাগলের মলমূত্র নোংরা পরিবেশসহ গাছপালা তছরুপ করার অভিযোগ রয়েছে। এক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও পরিবেশ দূষণের মধ্যেই চলছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সেবাদান কার্যক্রম।সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভূমিকম্পে স্বাস্থ্য কেন্দ্রেটির বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। ঝুকিপূর্ণভাবে চলছে সেবাদান কার্যক্রম। আবাসিক কোয়ার্টারটি বসবাসের অনুপযোগী। এখন কেউ আবাসিক কোয়ার্টারে বসবাস করে না। অনেক আগেই ড্যামেজ হয়ে পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে। উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডা. আতাবুল মণ্ডল ও পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক আরিফুল ইসলাম আরিফ অভিন্ন ভাষায় বলেন, সরকারি জমিতে বাথরুমের হাউজ নির্মাণ করায় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কাজি আশরাফুল ইসলাম মওলাকে অপসারণ করে নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। এ ব্যাপরে কাজি আশরাফুলদৌলা মওলার নিকট সরকারি জমি দখল করে হাউজ নির্মাণের সত্যতা সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি নিজস্ব জমি বলে দাবি করেন। কর্তৃপক্ষের জমি দাবি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেশী কয়েকজন প্রভাবশালী দখলদারের নাম উল্লেখ করে বলেন, তাদের কবল থেকে জমি দখলমুক্ত করা হলে তিনি বাথরুমের হাউজ সরিয়ে নেবেন বলে জানান। আন্দুলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ শফিকুল ইসলাম মোক্তারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় অবৈধ দখলদারদের প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ অবৈধ দখলমুক্ত করতে উদ্যোগ নিলে তিনি স্থানীয় সরকারের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। জীবননগর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও মেডিকেল অফিসার ডা. মাহামুদা খাতুনের নিকট জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদকে বলেন, এ অত্যাচার দীর্ঘদিনের। চলতি অর্থবছরে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হবে। প্রাচীর নির্মাণ করার পূর্বে জমি পরিমাপ করে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে বলে তিনি জানান। উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা নুরুল হাফিজ বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a comment