স্টাফ রিপোর্টার: ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া ডিগ্রি কলেজ সরকারিকরণ আন্দোলনের ৪৩ তম দিনের বিক্ষোভ মিছিলে গতকাল রোববার আকস্মিকভাবে চড়াও হয় পুলিশ। তাদের লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেটে কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ এবং ছফর আলী (৫৫) নামের এক পথচারী নিহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, পুলিশের লাঠির আঘাতে এই দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছে।
গতকাল বেলা ৩টার দিকে হাসপাতালে কলেজ শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ মারা যাওয়ার পর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। উত্তেজনা দমন করতে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ শুরু করে। ফলে কলেজের শিক্ষক শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছিলো। উপজেলা সদরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কলেজের আন্দোলনকারীরা মিছিল বের করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। এরপর শিক্ষার্থীরা ফুলবাড়ীয়া-ময়মনসিংহ সড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করলে আবারো ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় অনেকে আহত হন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন কলেজের সহকারী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন, উপেন্দ্র চন্দ্র দাস, ফজলুল হক, ইমাম হোসেন ও শরীর চর্চা শিক্ষক মজিবুর রহমান। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাত্ক্ষণিকভাবে অন্য আহতদের নাম জানা যায়নি।
নিহত পথচারী ছফর আলীর বাড়ি উপজেলার কুশমাইল কড়ইতলায়। তার আত্মীয় কমলা জানান, পুলিশের লাঠিপেটায় ছফর আলীর মৃত্যু হয়েছে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময় পুলিশ তাকে লাঠিপেটা করে। ছফর আলীর মরদেহ সড়কেই পড়ে ছিলো। তার লাশের সামনে পুলিশের একটি গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ফুলবাড়ীয়া কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইমাম হোসেন জানান, কলেজের অফিস কক্ষে ঢুকে পুলিশ শিক্ষকদের ওপর বেধড়ক লাঠিচার্জ করে। এ সময় আবুল কালাম আজাদ সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। তাকে ময়মনসিংহের চুরখাই কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিত্সক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ইমাম হোসেন বলেন, ১৯৭২ সালে স্থাপিত ফুলবাড়ীয়া কলেজটি সরকারি না করে অন্য একটি নন এমপিওভুক্ত কলেজ সরকারিকরণের ঘোষণা দেয়ার পর থেকে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে আসছি। এরই মধ্যে ৪টি মামলা দিয়ে দুই শতাধিক লোককে অজ্ঞাতনামা আসামি করে পুলিশ শিক্ষার্থীদের হয়রানি করছে। পুলিশ এ পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি ও কলেজ সরকারিকরণের দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচির ৪৩তম দিনে এই হতাহতের ঘটনা ঘটলো। ফুলবাড়ীয়া কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সরকারিকরণ আন্দোলন দাবি আদায় বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক এসএম আবুল হাসেম বলেন, কলেজ ক্যাম্পাসের অফিস কক্ষে ঢুকে পুলিশ গরুর মত শিক্ষকদের পেটানো শুরু করে। পুলিশের লাঠিচার্জেই শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ মারা গেছেন। আমরা শিক্ষক সমাজ ঘাতক পুলিশের বিচার চাই।
ফুলবাড়ীয়া থানার অফিসার ইনচার্জ রিফাত খান রাজিব লাঠিপেটার কথা অস্বীকার করে বলেন, পথচারী ঘটনাস্থল থেকে একটু দূরে সড়কে পড়ে ছিল। শিক্ষকের মৃত্যু নিয়ে তিনি বলেন, আগে থেকে বুকে ব্যথা নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। কি পরিমাণ রাবার বুলেট, টিয়ার সেল নিক্ষেপ করা হয়েছে তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। উপজেলা সদরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। র্যাবের একটি টিম টহল দিচ্ছে।