চুয়াডাঙ্গার ইজতেমায় জুমার নামাজে লাখো মুসল্লির ঢল

আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে মুখর গোটা এলাকা : আজ আখেরি মোনাজাতের মধ্যেদিয়ে সম্পন্ন

আলম আশরাফ: লাখো মুসলিম জনতা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শরিক হলেন চুয়াডাঙ্গার আঞ্চলিক বিশেষ ইজতেমার জুম্মার নামাজে। গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া মহিলা কলজেপাড়ায় ইজতেমায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখ লাখ মুসল্লি অংশ নেন। তাদের সাথে গতকাল ইজতেমার দ্বিতীয় দিন জুম্মার নামাজে জেলার ধর্মপ্রাণ মুসলমানরাও যোগ দেন। সকাল ১০টার পর পরই দলে দলে সবাই যোগ দেন জুম্মার নামাজে। বেলা দেড়টার পর শুরু হয় চুয়াডাঙ্গার স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জুম্মার নামাজের জামাত। এর আগে থেকেই মুসল্লিদের আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। আজ আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে তিন দিনব্যাপী আঞ্চলিক এই বিশেষ ইজতেমা। ইজতেমায় ঢাকার কাকরাইল মসজিদের খতিব মাও. জুবায়ের আহমেদের ইমামতিতে মুসল্লিরা জুম্মার নামাজ আদায় করেন। নামাজে জাতীয় সংসদের হুইপ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়রসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতা ও সাধারণ মানুষ শরিক হন। ইজতেমায় নির্ধারিত স্থান সংকুলন না হওয়ায় মুসল্লিরা জায়নামাজ, পাটি, চাদর, কাঁথা বিছিয়ে বিভিন্ন স্থানে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেন। জুম্মার নামাজের পর দুজন বৃদ্ধ নারী ও পুরুষের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

কুষ্টিয়া থেকে আসা জামাল উদ্দিন জানান, তিনি তার সাধ্যমতো বিভিন্ন ইসলামিক অনুষ্ঠানে হাজির হন। অধিক মানুষের কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করলে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন, তাই তিনি চুয়াডাঙ্গার আঞ্চলিক বিশেষ ইজতেমায় এসেছেন। ঝিনাইদহের কামরুল ইসলাম বলেন, দৈনন্দিন কাজের কারণে প্রতিনিয়ত পর্যাপ্ত ইবাদতের সময় পাই না। ইজতেমার খবর শুনে এখানে এসেছি। পুরো তিনদিন আল্লাহর ইবাদতে কাটাবো বলে। আর মেহেরপুরে নওশাদ হোসেন জানান, তিনি বরাবরই ঢাকার ইজতেমায় যান। চুয়াডাঙ্গার ইজতেমা হচ্ছে শুনে তিনি এখানেই যোগ দিয়েছেন। এর আগে শুক্রবার ফজরের নামাজের পর ইসলামের আর্দশ, কোরআন ও সুন্নাহর বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বয়ান করেন। এরপর জুম্মার নামাজের পর বয়ান করা হয়। পরে বিভিন্ন ইমাম ও তাবলীগের মেহমানদের বয়ান চলে মধ্য রাত পর্যন্ত।

গত বৃহস্পতিবার থেকে চুয়াডাঙ্গায় শুরু হয় তিনদিনের ইজতেমার আঞ্চলিক পর্ব। চুয়াডাঙ্গায় অনুষ্ঠিত এ ইজতেমায় প্রথমদিনেই লক্ষাধিক মুসল্লি জমায়েত হয়। গতকাল জুম্মার দিনে যা কয়েক লাখে রুপ নেয়। কেউ ইজতেমায় দুই লাখ, আবার কেউ তিন লাখের বেশি মুসল্লি জমায়েত হয়েছে বলে দাবি করেন। আয়োজকদের ধারণা অনুযায়ী গতকাল ইজতেমা ময়দানে মুসল্লিদের ঢল নামে। এজন্য শহরের মহিলা কলেজপাড়া, পলাশপাড়া সবুজপাড়ার মাঝে বিশাল মাঠ নামাজের জন্য প্রস্তুত করা হয়। নির্মাণ করা হয় ইজতেমা মাঠ। গোটা এলাকাজুড়ে তৈরি করা হয় প্যান্ডেল। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মুসল্লিদের থাকা খাওয়াসহ সুষ্ঠু পরিবেশে বয়ান শোনার সব ব্যবস্থা আগে থেকেই করে রাখেন আয়োজক কমিটি। যার কারণে মুসল্লিদের ওজু, গোসল ও নির্বিঘ্ন ইবাদত করতে কোনো সমস্যা হয়নি। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে আসা মাও. রবিউল ইসলাম জানান, তিনি এর আগে একাধিকবার ঢাকার টঙ্গীর তুরাগ পাড়ে ইজতেমায় যোগ দিয়েছেন। কিন্তু এতো সাবলিলভাবে তিনি সেখানে আল্লাহর ইবাদত করতে পারেননি। ব্যবস্থাপনায় সন্তুষ্টু প্রকাশ করে মাগুরার মাও. হেদায়েত আলী আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান।

ঝিনাইদহের মহেশপুর থেকে আসা ইমান আলী জানান, ঢাকার টঙ্গীর তুরাগ পাড়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু আল্লাহ এবার একটি সুযোগ দিয়েছেন। তাই লাখো মুসল্লির সাথে তার ইবাদত করতে তিনি ইজতেমায় যোগ দিয়েছেন।

ইজতেমার আয়োজকরা জানান, চুয়াডাঙ্গার মানুষ ছাড়াও ইজতেমায় মেহেরপুর কু্ষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, নড়াইল, মাগুরা, সাতক্ষীরা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মুসল্লিরা জুম্মার নামাজ আদায় ও আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে জমায়েত হন।

ইজতেমা বাস্তবায়ন কমিটি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি জানুয়ারি মাসে ঢাকার টঙ্গীর তুরাগ পাড়ে তাবলীগ জামাতের সবচেয়ে বড় সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। দেশ বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লির সমাগম ঘটে ওই ইজতেমায়। কিন্তু কয়েক বছর ধরে লোকসমাগম বেড়ে যাওয়ায় তুরাগ পাড়ে স্থান সংকুলনের সমস্যা প্রকট হতে থাকে। এজন্য আয়োজকরা সিদ্ধান্ত নেন ২০১৬ সালের ইজতেমায় তুরাগ পাড়ে মাত্র ৩২ জেলার মুসল্লিরা অংশ নেবেন। বাকী জেলার লোকজন নিজ নিজ এলাকায় বিশেষ ইজতেমার আয়োজন করবেন। তার অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার থেকে চুয়াডাঙ্গায় আঞ্চলিক বিশেষ ইজতেমা শুরু হয়। যা আজ আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হচ্ছে।