রোহিঙ্গা নিধন অভিযান শুরু করেছে মিয়ানমার : জাতিসংঘ

 

স্টাফ রিপোর্টার: মিয়ানমার তার ভূখন্ড থেকে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের সমূলে নির্মূল করতে চায়। জাতিসংঘের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এ কথা বলেছেন। কক্সবাজারের জাতিসংঘ হাইকমিশনার ফর রিফিউজিস অফিসের প্রধান জন ম্যাককিসিক বলেন, রাখাইন প্রদেশে দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের হত্যা করছে। এসব রোহিঙ্গাদের অনেককে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য করছে।

গত অক্টোবরে এক পুলিশ চেকপোস্টে অতর্কিত হামলায় ৯ পুলিশ নিহতের পর বিদেশি সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে অভিযোগ তুলে রাখাইন প্রদেশে সেনা অভিযান শুরু হয়। প্রায় দুই মাস ধরে চলা ওই অভিযানে রাখাইনে বসবাসরত রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে নির্বিচারে হত্যা, মহিলা ও কিশোরীদের ধর্ষণ, তাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। সেনাবাহিনী বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। টানা অভিযোগের এক পর্যায়ে তারা সম্প্রতি শুধু ৬৯ জন রোহিঙ্গা (তাদের ভাষায় বাঙালি) এবং ‘সহিংস হামলাকারী’কে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। যাদেরকে মিয়ানমারের বেশির ভাগ বৌদ্ধরা অবৈধ অভিবাসী মনে করে থাকে। অথচ শতশত বছর ধরে ওই অঞ্চলে রোহিঙ্গারা বসবাস করে আসছে।

রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে করণীয় বিষয়ে জাতিসংঘের কর্মকর্তা ম্যাককিসিক বলেন, এই সমস্যার সমাধানে মিয়ানমারের অভ্যন্তরের ‘প্রধান সমস্যা’তেই জোর দিতে হবে। বর্তমানে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং বর্ডার গার্ড পুলিশ যৌথভাবে রোহিঙ্গাদের নিঃশেষ করতে কাজ করছে। তারা পুরুষদের হত্যা করছে, গুলি করছে, শিশুদের হত্যা করছে, নারীদের ধর্ষণ করছে, তাদের বাড়িঘর লুটপাট করছে। তাদেরকে নদী পার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য করছে।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সংগঠন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে বাংলাদেশকে সীমান্ত খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এ বিষয়ে ম্যাককিসিক  বলেন, বাংলাদেশের জন্য সীমান্ত খুলে দেয়ার ঘোষণা দেয়া খুবই কঠিন। কারণ এটা হলে মিয়ানমারের সরকার নৃশংসতা বাড়াবে এবং নিপীড়ন চালাতে উত্সাহিত হবে। রোহিঙ্গাদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করবে। সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের নির্মূল করার লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের বর্বরতা অব্যাহত রাখবে।

বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গা মিয়ানমারে নাগরিক অধিকার থেকে সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ স্যাটেলাইটে ধারণ করা বিভিন্ন চিত্র বিশ্লেষণ করে বলেছে, এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ১ হাজার ২৫০টির বেশি বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে মিয়ানমারের সেনারা। এর আগে ২০১২ সালে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের নিপীড়নের মুখে এক লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়। এখনো অনেক রোহিঙ্গা জরাজীর্ণ ক্যাম্পে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন। এদিকে নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও সুরক্ষা দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি আবারও আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। গতকাল বুধবার এ সংস্থার দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের পরিচালক মীনাক্ষী গোস্বামী এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান।

ওপারে বর্বরতা, এপারে হাহাকার: এদিকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জবানিতে ভয়াবহ নির্যাতনের চিত্র ফুটে উঠেছে। আমাদের স্টাফ রিপোর্টার আজহার মাহমুদ ও  টেকনাফ প্রতিনিধি আবদুর রহমান এরকম নির্যাতনের বেশ কিছু দৃশ্যপট তুলে আনার চেষ্টা করেছেন ওরা ছয় ভাই বোন। দু বোনের বয়স ১৫ থেকে ১৮’র মধ্যে। বাড়ি মংডুর জাম্বুনিয়ায়। মিয়ানমার সেনাবাহিনী সেখানে আক্রমন করে ১২ নভেম্বর শেষরাতে। শুরুতেই প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যান বাবা। সেনাবাহিনী ঢুকে বাড়িতে। বন্দী করে সবাইকে। তারপর বড় দুই বোনের উপর শুরু করে বর্বর নির্যাতন। মা রেহানা বেগম সইতে পারেননি। বাধা দিতে যান, সেনাবাহিনী হয়ে ওঠে আরও পাশবিক। গলা কেটে করে হত্যা করে রেহানাকে। তারপর সকাল পর্যন্ত সে বাড়িতে চলে নগ্ন উল্লাস। তারপর সেনাদলটি চলে যায়। দুপুরে আসে অন্যদল। তার ফাঁকেই এক এক করে পালিয়ে বের হয় বাড়ির বাসিন্দারা। এরপর থেকে বাবার খোঁজ নেই। নানাবাড়ি, এপাড়া ওপাড়া করে শেষ পর্যন্ত সীমান্তবর্তী আত্মীয়ের বাড়িতে জড়ো হয়। তারপর আরো ১৪ জনের সঙ্গে গত বুধবার ভোরে বাংলাদেশে ঢোকে ছয় ভাই বোন।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর। টেকনাফের লেদা বস্তিতে ছয় ভাইবোনের সঙ্গে দেখা হয়। কিন্তু তাদের মুখে কোনো কথা নেই। তিন ভাই-বোন বয়সে ছোট। নির্মমতা বোঝার বয়স হয়নি। আর যে দু বোন কৈশোর ও যৌবন পার করছে তারা সামনেই আসতে চাচ্ছিলো না। তবে সবার বড়জন যিনি, তিনি বিবাহিত। কোলে এক বছরের ছেলে সন্তান। মূলত তার স্বামী মো. সাকেরের হাত ধরেই এখানে এসেছে তারা। তাদের সাথে আরো দুই গ্রামের ছয় কিশোরীও এসেছে। তারা জানান, সুযোগ পেয়ে সেখানকার সৈনিকরা উম্মত্ত হয়ে উঠেছে।

কেন এলেন বাংলাদেশে: জানতে চাইলাম বিবাহিত বোনটির কাছে। কিন্তু ছোট বোনদের নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে বারবার থেমে যাচ্ছিলেন তিনি। আচ্ছা, কে পারে। নিজ বোনের সঙ্গে এমন নৃশংস, বর্বর নির্যাতন করলে তা স্বাভাবিক বর্ণনায় কয়জন বলতে পারে ! হয়তো এ জন্যই তার মুখ নিচু হচ্ছিলো। কিন্তু তিনি হয়তো এও বুঝছিলেন, তাদের কোনো দোষ নেই। হয়তো নারী হওয়া, কিংবা ওদেশে জন্মানোটাই তাদের পাপ।

তবে সাকের জানালেন বিস্তারিত। বললেন, ‘সেনাবাহিনীকে সন্ত্রাসী ধরতে বলা হয়েছে। কিন্তু তারা ধর্ষণ-নির্যাতনে লিপ্ত। তারা যেদিন যে পাড়ায় খুশি রাতের বেলা ঢুকে পড়ছে। যতোক্ষণ তাদের মকছুদ (চাহিদা) পূরণ হয় না, ততোক্ষণ তারা পাড়া ঘিরে কিশোরী যুবতীদের নির্যাতন চালাচ্ছে। সোনার গয়না, টাকা লুট করছে। তারপর ঘরে আগুন দিচ্ছে। প্রতিবাদ করলে গুলি করে, জবাই করে হত্যা করছে। মায়ের কোল থেকে শিশুদের কেড়ে নিয়ে আগুনে নিক্ষেপ করছে। সরকার সব জেনেও চুপ। মানে, এসব করার অনুমতি সরকারই দিয়েছে।’

গত বুধবারের দুপুর। উখিয়া থানার ছোট্ট হাজতের ভেতরে গাদাগদি করে আছেন বেশকিছু রোহিঙ্গা। আগের রাতে তাদের আটক করা হয়। থানা প্রাঙ্গনেই তাদের জন্য দুপুরের খাবারের আয়োজন হয়। এরপর দেয়া হয় খাবার। তিনদিন ধরে অভুক্ত থাকা বেশিরভাগ রোহিঙ্গা হুমড়ি খেয়ে খাবার গ্রহণ করে। তবে দুই কিশোরী তা গ্রহণে অসম্মতি জানায়। একাধিকবার অনুরোধের পরও তারা খেতে রাজী হলোনা। কারণ জানতে চাইলেও নির্বাক ছিলো তারা। দুদিন আগে অনুপ্রবেশ করেছেন গজিরবিল এলাকার গৃহবধূ ছমিরা বেগম। তার ছোট দুই বোন সদ্য কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে প্রবেশ করেছে। সেনাবাহিনীর ভয়ে দুবোনকে নিজ বাড়িতে এনে রেখেছিলেন। কিন্তু গত সপ্তাহের এক ভোরে মিয়ানমারের সৈন্যরা তাদের বাড়িতে ঢোকে। তিনবোনকে একসাথে বেঁধে রাখে। খানিক পরে স্বামীকে ঘরের বাহিরে নিয়ে যায়। ফিরে এসে বাঁধন খুলে ছোট দুবোনকে নিয়ে যায়। ততোক্ষণে স্বামীকে জবাই করে হত্যা করা হয়। তা দেখেও বোনদের না নিতে সৈন্যদের পায়ে পড়েন ছমিরা। কিন্তু সৈন্যরা তাকে মারধর করে মাটিতে ফেলে যায়। তিন ঘন্টা পরে ছোট বোনদের বাড়িতে দিয়ে যায়। ঘটনা জানতে চাইলে, বোন দুটি নিশ্চুপ হয়ে কাঁদতে থাকে।

উখিয়া থানার ওই ওই কিশোরীরা কেনো খেতে রাজী হলেনা, তা অবশ্য শেষ পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে তাদের ওই নির্বাক চাহনী, তাদের অভিব্যাক্তি, আচরণ বলে দিচ্ছিলো- সীমান্তের ওই কাটাতারের কাছে চরম অসহায় তারা। নিজের দেশ বলে কিছু নেই তাদের। আচ্ছা, কেনইবা খাবে। যখন জীবন একটি পরিহাসের নাম। যখন পরবর্তী দিনের ভাগ্য জানা নেই, যখন হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়ে, সম্ভ্রম নিয়ে প্রতিটি মিনিট কাটাতে হয়, তখন গলা দিয়ে খাবার ঢুকবে কিভাবে। চোখের সামনে মা-বাবা হারিয়ে, স্বজন পরিজন থেকে ছিন্ন হয়ে কে-ই বা পেটপুরে খেতে পারে।

মিয়ানমারের চলমান নৃশংসতায় এসব দৃশ্যপট শুধুই এক একটি ছোট্ট। ঘটনা মাত্র। হয়তো নির্যাতনের এই চিত্র আরো ভয়াবহ ও বিস্তৃত। যুগ যুগ ধরে রাখাইন রাজ্যের ওই জনপদে নির্যাতিত হয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির ভাগ্য এখন আরো নির্মম। সারাবিশ্বের আনাচে কানাচে যখন আধুনিকতার ছোঁয়া লাগছে, যখন মানুষের জীবন উন্নত ও নিরাপদ করতে, নারীর সম্মান রক্ষায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে, তখন সাগরপাড়ের ওই জনপদে এভাবেই চলছে বর্বর নির্যাতন। ভাগ্য বদলানো দূরে থাক, উল্টো মিয়ানমার সেনাবাহিনী, সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও স্থানীয় রাখাইন অধিবাসীদের অত্যাচার, নির্যাতন সয়ে হাতের মুঠোয় জীবন নিয়ে দিন কাটছে হাজার হাজার রোহিঙ্গার দিনকাল।

গত এক মাসের বেশি সময় থেমে থেমে জঙ্গি নিধনের নামে আবারও নির্বিচারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে হত্যার যে অভিযোগ উঠেছে তার রূপ আসলেই ভয়ানক। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন, গনমাধ্যমগুলো খবরে বলা হচ্ছে- মিয়ানমারের মংডু শহরের আশপাশের খেয়ারীপাড়া, বড়গজির বিল, ছোট গজিরবিল, রাবাইল্যা, খোলা বিল, হাতগুইজ্যাপাড়া, বাঙ্গাবিল, হাতির ঢেরাসহ গ্রামের পর গ্রামে তান্ডব চালাচ্ছে সেদেশের সেনাবাহিনী, পুলিশ ও স্থানীয়রা। তারা সেখানে জঙ্গি নিধনের নামে ধরে ধরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে হত্যা করছে। গত এক মাসে অন্তত শতাধিক রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়। ঘরবাড়ি পুড়িয়ে বাস্তুহারা করা হয় অন্তত ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে। এছাড়া নারী শিশুদের উপরও চলছে নির্মম নির্যাতন। প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে পরিবার-আত্মীয় স্বজনকে কোথায় আছেন তার খবরও নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না তারা। অনেকেই পরিবার স্বজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিখোঁজ হয়ে আছেন।

তবে নাফ নদীর এপার থেকে বোঝার ওপায় নেই, ওপাড়ে ঠিক কি হচ্ছে আসলে। সে দেশের সেনাবাহিনী গণমাধ্যম কিংবা অন্যকোন সংস্থাকে সেখানে ঢুকতে দিচ্ছেনা। যদিও গত কয়েকদিন ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা অন্তত ১০ জন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেখানে এখনো পর্যন্ত থেমে থেমে সেনাবাহিনীর নির্যাতন চলছে। তাদের ভয়ে রোহিঙ্গা পুরুষরা জনমানবহীন পাহাড়, জঙ্গলে আশ্রয় নিচ্ছে। আর নারী ও শিশুরা বাংলাদেশের প্রবেশের চেষ্টা করতে বাধ্য হচ্ছে। তবে যখন বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের এদেশে প্রবেশে বাধা দিচ্ছে, তখন ফিরে যেতে চাইলে তাদের পড়তে হচ্ছে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলির মুখে। সেখানকার সেনাবাহিনী ইচ্ছে করেই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দিতে চাচ্ছে।

কিন্তু বাংলাদেশে এসেও রোহিঙ্গারা কী সুখে আছেন। এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, তারা আসলে আপাতত আশ্রয় খুঁজে পেলেও তাদের হাহাকার থামছে না। একদিকে বেশিরভাগের স্বামী সন্তান, স্বজন-পরিজন সেখানে রয়ে গেছেন। অন্যদিকে এখানে এসেও বাসস্থানের পাশাপাশি খাবার, পানি, ওষুধের অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে। আবার টেকনাফ উখিয়া এলাকার অনেক বাংলাদেশীরও সেদেশে আত্মীয় স্বজন রয়েছে। তারাও প্রতিদিন মায়ানমারে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনায় দুশ্চিন্তা ও হাহাকার করছেন।

পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, মিয়ানমারের সহিংস পরিস্থিতিতে সেদেশে নির্যাতিত জনগণের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা থেমে নেই। সর্বশেষ গত বুধবার দিবাগত রাতে বিজিবি নাফ নদীর কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে অন্তত ২০টি নৌকা বোঝাই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে বাংলাদেশে ঢুকতে বাধা দিয়ে মিয়ানমারের দিকে পাঠিয়েছে। এছাড়া গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আরো আটটি নৌকা বোঝাই রোহিঙ্গাকে বাধা দেওয়া হয়। এর আগে গত কয়েকদিনে উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে অনুপ্রবেশকালে ৬৬১ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে বিজিবি। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। তাদের খাবার ও মানবিক সহায়তা দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। এরপরেও টেকনাফ ও উখিয়া এলাকার বস্তিগুলোতে সদ্য অনুপ্রবেশকৃত রোহিঙ্গাদের দেখা মিলছে।

যদিও টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুজার আল জাহিদ দাবি করেছেন, নাফ নদীর যেসব পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গারা বেশি প্রবেশের চেষ্টা করছে সেসব পয়েন্টে বিজিবির সর্বোচ্চ নজরদারি আছে। ইতিমধ্যে অতিরিক্ত তিন প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

এদিকে উখিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের গত সন্ধ্যায় ইত্তেফাককে জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবার রাতে উখিয়ার সীমান্ত এলাকায় যে ৬২ জনকে আটক করা হয়েছিলো, তাদের মানবিক সহায়তা দিয়ে সেদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

সীমান্তের ওপারে সহিংস পরিস্থিতিতে সীমান্ত খুলে না দেয়ার পক্ষেই এখনো পর্যন্ত অনড় রয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারকে সীমান্ত এলাকায় সহিংস পরিস্থিতি এড়িয়ে শান্তি বজায় রাখতে বার বার অনুরোধ জানিয়ে আসছে। সহিংসতা বন্ধে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো থেকে মিয়ানমার সরকারকে যেটুক চাপ দিচ্ছে তা পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছেন উখিয়া টেকনাফের সাধারণ মানুষ ও এই এলাকায় কাজ করা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনের নেতারা। এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থানকে সমর্থন করে স্থানীয় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলছেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশকে সীমান্ত খুলতে যে অনুরোধ করছে, তা মোটেও যৌক্তিক নয়। বরং মিয়ানমার সরকারকে এ বিষয়ে কঠোর চাপ দেয়া উচিত।’