বিশেষ বিধান যুক্ত করে মেয়েদের বিয়ের বয়স আঠারোই থাকছে

 

স্টাফ রিপোর্টার: বিশেষ বিধান রেখে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ বছরই অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। ‘বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন, ২০১৬’-এর খসড়ার এ অনুমোদন দেয়া হয়। খসড়ায় মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছরই রাখা হয়েছে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে যে কোনো অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের সর্বোত্তম স্বার্থে আদালতের নির্দেশে এবং মা-বাবার সম্মতিতে বিয়ে হতে পারবে। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে  সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এসব তথ্য জানান। তবে বৈঠকের প্রথম এজেন্ডা ‘সরকারি কর্মচারী আইন, ২০১৬’র খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়নি মন্ত্রিসভা। এটি ফেরত দেয়া হয়েছে এবং আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে উপস্থাপন করতে বলা হয়।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনের যে খসড়া মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে, তাতে বিভিন্ন অপরাধের ক্ষেত্র যেমন বাড়ানো হয়েছে, তেমনি সাজার মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, আইন অনুযায়ী, আদালত নিজ উদ্যোগে বা কারো অভিযোগের ভিত্তিতে বাল্যবিয়ে থামিয়ে দিতে পারবেন। বাল্যবিয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পর্যালোচনাও করতে পারবেন। আইনের ১৯ ধারায় বিশেষ বিধান রাখা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব বলেন, এই আইনের অন্যান্য বিধানে যা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্ত বয়স্ক কোনো নারীর সর্বোত্তম স্বার্থে আদালত কর্তৃক নির্দেশনাক্রমে এবং মাতা-পিতার সম্মতিক্রমে বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে বিয়ে সম্পাদিত হলে তা এই আইনের অপরাধ বলে গণ্য হবে না। এটা একটা ডিপারচার রাখা হয়েছে, স্পেশাল কেইস বলেন তিনি।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ১৮ বছরের নিচে নারীর বিয়ে হলে অপরাধ হলেও এই স্পেশাল কেইসের ক্ষেত্রে অপরাধ হবে না। কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্ত বয়স্ক কোনো নারীর সর্বোত্তম স্বার্থে, যেমন ধরুন আনমেরিড মাদার কিন্তু তার বাচ্চা আছে। এ রকম কেইস যদি হয়, এসব ক্ষেত্রে তাকে প্রটেকশন দেয়ার জন্য এই বিধান করা হয়েছে। এই বিশেষ বিধানযুক্ত এবং তা আদালত কর্তৃক নির্ধারণ করে আইনের নতুন পরিবর্তন আনা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব বলেন, বিশেষ প্রেক্ষাপটের আর কোনো সংজ্ঞা নেই, তবে এটা আদালত নির্ধারণ করবে। বিশেষ প্রেক্ষাপটে বয়সের কোনো সীমা নেই।

বাল্যবিয়ে বন্ধে আদালতের নির্দেশ অমান্য করলে ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে আইনে। বাল্যবিয়ে-সংক্রান্ত বিষয়ে মিথ্যা অভিযোগ করলে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ৩০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
দুজন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে বা মেয়ে বাল্যবিয়ে করলে তাদের ১৫ দিনের আটকাদেশ ও অনধিক পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা যাবে। কোনো প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি অপ্রাপ্তবয়স্ক কাউকে বিয়ে করলে দুই বছর কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। মা-বাবা আইন লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড করা যাবে। বিয়ে পড়ানোর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা আইন না মানলে দুই বছর কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেয়া যাবে। বিভিন্ন শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, জন্মনিবন্ধন সনদ বা পাসপোর্টর এগুলোর যে কোনো একটি বিয়ের বয়স নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিবেচ্য হবে।

এ সংক্রান্ত মামলার বিচার অন্যান্য ফৌজদারি অপরাধের মতোই হবে। এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতেও বিচার করা যাবে। সরকারি কর্মচারী আইন ফেরত দিল মন্ত্রিসভা: অভিযোগপত্র হওয়ার আগে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অনুমতি নেয়ার বিধান রেখে আইন করার প্রস্তাবে চূড়ান্ত অনুমোদন মেলেনি। এটিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে তার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রিসভা আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ‘সরকারি কর্মচারী আইন-২০১৬’-এর খসড়া ফেরত পাঠিয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানিয়েছেন। সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি কর্মচারী আইনে মন্ত্রিসভা চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়নি। সিদ্ধান্ত হয়েছে, আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পুনরায় পেশ করা হবে। সরকারি দায়িত্ব পালন সংক্রান্ত ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র হওয়ার আগে গ্রেফতারে সরকারের অনুমতি নেয়ার বিধান রেখে গত বছরের ১৩ জুলাই এই আইনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিলো মন্ত্রিসভা। ওই সময়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সেদিন বলেছিলেন, আইনে গ্রেফতার বিষয়ে বলা আছে চার্জশিট হলে গ্রেফতারে কোনো সমস্যা নেই, আদালত কর্তৃক চার্জশিট গৃহীত হওয়ার আগে যদি কাউকে গ্রেফতারের প্রয়োজন হয়, তাহলে সরকারের অনুমোদন লাগবে।
গ্রেফতারের আগে অনুমোদনের প্রয়োজন হলেও সরকারি কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগের তদন্ত বা মামলা মামলা করতে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর বাধা থাকবে না বলে জানিয়েছিলেন তিনি। বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা রাষ্ট্রপতির প্রণীত বিধিমালা দিয়ে পরিচালিত হন। এর বাইরে সরকারি কর্মচারীদের চাকরি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিধিমালাও রয়েছে।

 

 

Leave a comment