মাথাভাঙ্গা মনিটর: রাজকোট টেস্টের প্রথম চারদিন ব্যাটসম্যানদের দাপটে নিষ্প্রাণ ড্র’র দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো ভারত-ইংল্যান্ডের মধ্যকার প্রথম টেস্ট। তবে ম্যাচের পঞ্চম ও শেষ দিনের শেষ দু সেশনের প্রাণ ফিরে পায় টেস্টটি। ফলে প্রথমবারের মতো জমজমাট হয়ে উঠে রাজকোট টেস্ট। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ড্র’তে শেষ হলো টেস্টটি। ৩ উইকেটে ২৬০ রান তুলে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে জয়ের জন্য ভারতের সামনে ৩১০ রানের টার্গেট ছুড়ে দেয় ইংল্যান্ড। এরপর নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস ব্যাট হাতে নেমে ৬ উইকেট হারিয়ে চিন্তায় পড়ে যায় ভারত। এতে জমে উঠে টেস্ট। তবে শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেটে ১৭২ রান তুলে নিশ্চিন্তে ম্যাচ শেষ করে ভারত। ফলে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে কোন দলই এগিয়ে যেতে পারলো না।
চতুর্থ দিন দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে বিনা উইকেটে ১১৪ রান করেছিলো ইংল্যান্ড। লিড ছিলো ১৬৩ রানের। পঞ্চম দিনে সেই লিডটাকে আরও বাড়িয়ে ভারতের সামনে বড় টার্গেট ছুড়ে দেয়ার প্রত্যাশা ছিলো ইংলিশদের। পাশাপাশি দুই ওপেনার অধিনায়ক অ্যালিষ্টার কুক ও হাসিব হামিদের সেঞ্চুরির আশায় বুক বেধেছিলো ইংল্যান্ড। কারন চতুর্থ দিন শেষে হামিদ ৬২ ও কুক ৪৬ রানে অপরাজিত ছিলেন। আর ব্যাট হাতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই ছিলেন কুক ও হামিদ। সেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ পঞ্চম দিনের শুরু থেকেই অব্যাহত রেখেছিলেন ইংল্যান্ডের দুই ওপেনারের। ফলে সেঞ্চুরির দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন কুক ও হামিদ। কিন্তু দুর্ভাগ্য হামিদের। ব্যক্তিগত ৮২ রানে ভারতের লেগ স্পিনার অমিত মিশ্রর বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে হতাশা নিয়েই প্যাভিলিয়নে ফেরত যান ১৯ বছর বয়সী হামিদ। ফলে কুকের সাথে ১৮০ রানের উদ্বোধনী জুটিও ভেঙ্গে যায়। ভারতের মাটিতে ইংল্যান্ডের ওপেনারদের সর্বোচ্চ রানের জুটির নতুন রেকর্ড এটি। তবে টেস্ট ক্যারিয়ারের ৩০তম সেঞ্চুরির স্বাদ নিতে ভুল করেননি কুক। তিন অংকে পা দেয়ার পরও নিজের ও দলের স্কোরটা বাড়িয়েছেন কুক। তবে ইনিংসের ৭৬তম ওভারের তৃতীয় বলে ভারতের অফ-স্পিনার রবীচন্দ্রন অশ্বিনের বলে সমাপ্তি ঘটে কুকের ইনিংসটি। ফলে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসেরও ঘোষণা দিয়ে দেন কুক। ১৩টি বাউন্ডারিতে ২৪৩ বলে ১৩০ রান করেছেন কুক। এছাড়া জো রুট ৪ রানে আউট হন। আর ২৯ রানে অপরাজিত থেকে যান বেন স্টোকস। ভারতের পক্ষে মিশ্র ২টি উইকেট নিয়েছেন। ৩ উইকেটে ২৬০ রান তুলে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে ভারতের সামনে ৪৯ ওভারে ৩১০ রানের টার্গেট দেয় ইংল্যান্ড। সেই লক্ষ্যে খেলতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারানোর ধাক্কা সইতে হয় ভারতকে। শূন্য রানে প্যাভিলিয়নে ফিরেন ওপেনার গৌতম গম্ভীর।
এরপর ৪৭ রানের জুটি গড়ে শুরুর ধাক্কা সামাল দেন আরেক ওপেনার মুরালি বিজয় ও তিন নম্বরে নামা চেতেশ্বর পূজারা। ব্যক্তিগত ১৮ রানে পূজারাকে ফিরিয়ে ইংল্যান্ডকে জয়ের স্বপ্ন দেখান দলের লেগ-স্পিনার আদিল রশিদ। পূজারাকে শিকার করার পর ওপেনার বিজয়কেও তুলে নেন রশিদ। দলীয় ৬৮ রানে বিজয়কে ব্যক্তিগত ৩১ রানে থামিয়ে দেন রশিদ। এতে চাপে পড়ে যায় ভারত। সেই চাপ আরও বড় হয় মঈন আলীর আঘাতে। বিজয়ের জায়গায় ক্রিজে আসা আজিঙ্কা রাহানে ১ রানের বেশি করতে দেননি মঈন। ফলে নাটকীয়ভাবে ম্যাচ জয়ের স্বপ্ন দেখা শুরু করে দেয় ইংল্যান্ড। কিন্তু পঞ্চম উইকেটে অধিনায়ক বিরাট কোহলির সাথে জুটি বেধে ইংল্যান্ডের স্বপ্ন ধুলিসাৎ-এর পথ তৈরি করেন অশ্বিন। ম্যাচ বাচাঁতে জুটিতে ৯২ বল কাটিয়ে দেন তারা। ঐ সময় রানের চেয়ে বল মোকাবেলা করার কাজটাই মূখ্য ছিলো ভারতের। এমন মূখ্য কাজটি ভালোভাবেই করছিলেন কোহলি ও অশ্বিন। তবে অশ্বিনকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙ্গেন ইংল্যান্ডের বাঁ-হাতি স্পিনার জাফর আনসারি। ৩২ রানে থেমে যায় অশ্বিনের ইনিংস।
অশ্বিনের বিদায়ের কিছুক্ষণ পরই আবারো ভারত শিবিরে আঘাত হানেন রশিদ। এবার তার শিকার ভারতের উইকেটরক্ষক ঋদ্ধিমান সাহা। ১৩ বলে ৯ রান করে রশিদের তৃতীয় শিকার হন ঋদ্ধি। এতে জমে উঠে রাজকোট টেস্ট। তবে দিনের বাকী সময়টুকু বিপদ ছাড়া পার করে দিয়ে জমে উঠা টেস্টকে ড্র’তে শেষ করেন কোহলি ও রবীন্দ্র জাদেজা। কোহলি ৯৮ বলে ৪৯ ও জাদেজা ৩৩ বলে ৩২ রানে অপরাজিত থাকেন। এ সময় ভারতের স্কোর ছিলো ৬ উইকেটে ১৭২ রান। এ ইনিংসে ইংল্যান্ডের পক্ষে ৩ উইকেট নেন রশিদ। ম্যাচের সেরা হয়েছেন ইংল্যান্ডের মঈন। আগামী ১৭ নভেম্বর থেকে বিশাখাপত্তমে শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট।