জেলা পরিষদ নির্বাচনে মাইক তোরণ বিলবোর্ড ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা

 

স্টাফ রিপোর্টার: জেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচারে মাইক ব্যবহার, বিলবোর্ড, গেট ও তোরণ নির্মাণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এ সংক্রান্ত আচরণ বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। স্থানীয় সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে এ ধাপের নির্বাচনের প্রচারণায় বাড়তি বিধি-নিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। বিধিমালা লংঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রার্থিতা বাতিল ও আর্থিক সাজার পাশাপাশি কারাদণ্ডও ভোগ করতে হবে। এসব বিধানসহ জেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা-২০১৬ এবং জেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা-২০১৬ আইন মন্ত্রণালয় থেকে ভেটিং হয়ে নির্বাচন কমিশনে পৌঁছেছে রোববার। ইসির কর্মকর্তারা জানান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিদেশে বসেই জেলা পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের বিধিমালার ভেটিংয়ে অনুমোদন দিয়েছেন। এরপরই বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে বিধিমালা কমিশনে পৌঁছে।

আচরণ বিধিমালায় প্রচারের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ইসি সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচন স্থানীয় সরকারের অন্যান্য ধাপের মতো নয়। এখানে মূলত পরোক্ষ ভোট হবে। এ নির্বাচনে শুধু জনপ্রতিনিধিরা ভোটার। প্রতিটি জেলায় কয়েকশ’ ভোটারের বিষয় বিবেচনায় রেখে হয়তো নির্বাচনী প্রচারণায় বাড়তি বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তিনি বলেন, জেলা পরিষদের নির্বাচন বিধিমালা এবং আচরণ বিধিমালা ভেটিং হয়ে এসেছে। এটি গেজেট আকারে জারি করা হবে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, চলতি সপ্তাহে জেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। মনোনয়ন দাখিলের সম্ভাব্য শেষ সময় ৩ ডিসেম্বর, প্রত্যাহারের শেষ সময় ১২ ডিসেম্বর এবং ১৩ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের দিন রেখে প্রাথমিক কর্মপরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। বিধিমালায় বলা হয়েছে, নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো গেট, তোরণ বা ঘের নির্মাণ করা যাবে না। চলাচলের পথে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। নির্বাচনী প্রচারণার জন্য ৩৬ বর্গমিটারের বেশি স্থান নিয়ে কোনো প্যান্ডেল বা ক্যাম্প করা যাবে না। নির্বাচনের প্রচারণার অংশ হিসেবে বিদ্যুতের সাহায্যে কোনো ধরনের আলোকসজ্জা করা যাবে না। কোনো সড়ক কিংবা জনগণের চলাচল ও সাধারণ ব্যবহারের নির্ধারিত স্থানে নির্বাচনী ক্যাম্প বা অফিস স্থাপন করা যাবে না। প্রচারণায় ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করে বক্তব্য দেয়া যাবে না। কোনো ধরনের তিক্ত বা উস্কানিমূলক বা মানহানিকর কিংবা লিঙ্গ, সাম্প্রদায়িকতা বা ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে এমন কোনো বক্তব্য দেয়া যাবে না। নির্বাচনে কোনো প্রার্র্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে ভোটারদের প্রভাবিত করতে বল প্রয়োগ বা অর্থ ব্যয় করা যাবে না। আচরণ বিধিমালা লংঘনের অভিযোগে ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিধি লংঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে কমিশন তার প্রার্থিতা বাতিল করতে পারবে। পাঁচ বছর মেয়াদি জেলা পরিষদগুলোতে বর্তমানে অনির্বাচিত প্রশাসক দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর ৬১ জেলায় আওয়ামী লীগের নেতাদের প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার। তাদের মেয়াদপূর্তির পর এবারই প্রথম জেলা পরিষদে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন পরোক্ষ ভোটে। জেলার আওতাভুক্ত সিটি কর্পোরেশন (যদি থাকে), উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ভোটে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। ১৯৮৯ সালে তিন পার্বত্য জেলায় একবারই সরাসরি নির্বাচন হয়েছিলো। আর কোনো জেলা পরিষদ নির্বাচন হয়নি। নির্বাচন আচরণবিধির ২১ নম্বর ধারায়, প্রচারণায় মাইক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে চেয়ারম্যান বা সদস্য পদে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় প্রচারের লক্ষ্যে মাইক্রোফোন বা শব্দের মাত্রা বৃদ্ধি করে এমন যন্ত্র ব্যবহার করতে পারবে না। সভা-সমিতি অনুষ্ঠানের বিষয়ে ৭ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, কোনো প্রার্থী কিংবা তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান ঘরোয়া সভা ব্যতীত কোনো পথসভা বা জনসভা বা শোভাযাত্রা করতে পারবেন না। ৮ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট আকারের শাদা-কালো রঙের পোস্টার ব্যবহার করা যাবে। প্রার্থী নিজ ছবি ও প্রতীক ছাড়া অন্য কারও নাম, ছবি বা প্রতীক ব্যবহার করতে পারবেন না। নির্বাচনী ক্যাম্প বা অফিস স্থাপন প্রসঙ্গে আচরণবিধির ১২ ধারায় বলা হয়েছে, চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিটি থানা বা উপজেলায় একের অধিক এবং সদস্য প্রার্থী সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় একের অধিক নির্বাচনী ক্যাম্প বা অফিস স্থাপন করতে পারবে না। ক্যাম্প বা অফিসে কোনো খাবার পরিবেশন করা যাবে না।