ভিশন ২০৪১’র রূপরেখা তৈরির নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

আ.লীগ কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক

 

স্টাফ রিপোর্টার: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে একটি রূপরেখার খসড়া তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল বুধবার রাতে গণভবনে দলের কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের মুলতবি বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি এ নির্দেশ দেন। শেখ হাসিনা সদ্যসমাপ্ত জাতীয় সম্মেলনে দেয়া অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে নেতাদের উদ্দেশে বলেন, আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে দেশে কোনো দারিদ্র্য থাকবে না। একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। এ জন্য মাঠপর্যায়ে তালিকা প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছি। এখন আপনাদের কার কী ধারণা রয়েছে তা দিন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা তৃণমূল থেকে দেশের উন্নয়ন করে যাচ্ছি। গ্রামাঞ্চলের চেহারাও আজ পাল্টে গেছে। উন্নয়নের এ ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য দেশবাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সেদিন আর বেশি দূরে নয়, উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড় করানোর মাধ্যমে আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ করব, ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর আমরা ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমরা সেই অর্জনের পথে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার ভিশন জাতির সামনে তুলে ধরেছি।
ইনশাআল্লাহ এই ভিশনও আমরা পূরণ করতে পারব। আজ গোটা বিশ্ব বলছে- বাংলাদেশে ঈর্ষণীয় উন্নতি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে আমরা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। বাংলাদেশের মাটিতে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের ঠাঁই হবে না। দেশের মানুষ সোচ্চার হলে এসব বন্ধ হবে। ইতিমধ্যে দেশের মানুষকে আমরা সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ করেছি। এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। এ জন্য দেশের মানুষের কাছে যেতে হবে। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে মানুষকে আরও সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়েই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ রুখে দেব। ‘দেশে গণতন্ত্র নেই’- বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির দুর্ভাগ্য- যে দলটির জন্মই অবৈধভাবে সেই দলের নেতাদের মুখে গণতন্ত্রের ছবক শুনতে হয়। তারা (বিএনপি নেতারা) এখন গণতন্ত্রের জন্য সোচ্চার হয়েছেন।’ তিনি প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, ‘বিএনপি কি জিয়াউর রহমানের মতো প্রতি রাতের কারফিউ গণতন্ত্র চায়?’ শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘বিএনপির কাছে গণতন্ত্র কী? আন্দোলনের নামে শত শত মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা?’

যুদ্ধাপরাধীর বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু করেছিলেন। জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে যুদ্ধাপরাধীর বিচার বন্ধ করে দিয়েছেন। আমরা ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীর বিচার করছি। যেসব যুদ্ধাপরাধীর বিচার করা হচ্ছে, সেসব যুদ্ধাপরাধীকে বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া মন্ত্রী-এমপি বানিয়েছিলেন। যুদ্ধাপরাধীর বিচার যেমন চলছে, সেইসঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের মদদতাদেরও বিচার হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ এমন একটি রাজনৈতিক দল যার নিজস্ব অর্থনৈতিক পরিকল্পনা রয়েছে। দেশটাকে কীভাবে দেখতে চাই সেটা দলীয় পরিকল্পনায় গ্রহণ করা হয়। সরকারে এসে সেগুলো বাস্তবায়ন করি। ইতিমধ্যে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, সেগুলো বাস্তবায়ন করছি। আমাদের রাজনীতি মানুষের কল্যাণের জন্য। আমাদের দলীয় নীতিমালা প্রণয়ন ছিলো বলেই বিশ্ব মন্দা থাকা সত্ত্বেও প্রবৃদ্ধির হার ৭-এ আনতে পেরেছি। অনেকেই বিস্মিত হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করেন, কীভাবে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি, কীভাবে দারিদ্র্য বিমোচনের পথে এগিয়ে যাচ্ছি। কেবল মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করি বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, ক্ষমতা ভোগ করার বিষয় না।