বর্তমান বিশ্ব প্রযুক্তিনির্ভর। প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির উন্নয়নে নানা উদ্যোগ চলছে। মানুষের জীবনকে সহজ ও ঝঞ্ঝাটমুক্ত করার লক্ষ্যেই মূলত এ ধরনের কর্মকাণ্ড। মানবজাতি ইতোমধ্যে প্রযুক্তি সুবিধা পেতে শুরু করেছে। যতোদিন যাচ্ছে মানুষের ব্যস্ততার পরিধিও ততো বৃদ্ধি পাচ্ছে। একসময়ে চিঠি লিখে খামে ভরে পোস্ট করে স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করা হতো। জরুরি কিছু হলে টেলিগ্রাম বা টেলিগ্রাফের সহায়তা নিতে হতো। সেই দিন এখন অতীত। পৃথিবীর যে প্রান্তেই হোক মোবাইলে একটি সুইচ টিপেই কাঙ্ক্ষিত স্বজনের সাথে যোগাযোগ সম্ভব।
এমনি করে অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে যা প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কারণে মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনকে অর্থবহ করে তুলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকও এমন একটি মাধ্যম যেখানে নির্দিষ্ট একটি গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের মানুষের সাথে বন্ধুত্বের সূত্রে আবদ্ধ হওয়া সম্ভব এবং এর থেকে পারস্পরিক ভাব ও মত প্রকাশের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখাও সম্ভব। কিন্তু দুঃখজনক হলো, এ ধরনের একটি ইতিবাচক মাধ্যমকেও একটি অসৎ চক্র ভয়াবহভাবে বিপথে ব্যবহার করছে। বিশেষ করে নারী সমাজকে লক্ষ্য করেই তাদের নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ড চলছে। ৮ নভেম্বর ২০১৬ একটি পত্রিকায় এ সংক্রান্ত একটি সংবাদে যে ভয়াবহ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে তা রীতিমতো আতঙ্কের।
বিশ্বব্যাপী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ফেসবুক। বাংলাদেশেও এর জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। সব বয়সী এবং সব শ্রেণির মানুষের এটি ব্যবহার করার সুবিধা থাকায় তা আরো বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় ২ কোটি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করেন। ফেসবুকের এই জনপ্রিয়তা এবং সহজলভ্যতাকে কাজে লাগিয়ে একশ্রেণির অসাধু চক্র মেতে উঠেছে নানা অসামাজিক কার্যকলাপে। ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ, পেজ এবং ব্যক্তিগত প্রোফাইলের মাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে যৌনতা। বিভিন্ন পোস্ট দিয়ে, নোংরা ছবি আপলোড করে, গোপন ভিডিও আপলোড করে প্রতিনিয়ত নারীদের হয়রানি করা হচ্ছে। নারীদের পণ্য হিসেবে ব্যবহার করেও সামাজিকভাবে হেয় করা হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন সার্ভিসের নামে চলছে জমজমাট যৌন এবং মাদকের ব্যবসা প্রকাশিত সংবাদে এমন উদ্বেজনক চিত্রও উপস্থাপন হয়েছে। অতীতে এই মাধ্যমটিতে ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়িয়ে এদেশেরই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্মম হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এমনকি নানা আইন-কানুন এবং সতর্কতার পরও সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হামলার ঘটনার ক্ষেত্রেও ফেসবুককে আশ্রয় করা হয়েছে। বারবার একই ধরনের ঘটনা ঘটায় সর্বস্তরে নানা প্রশ্নেরও জন্ম হচ্ছে।
বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ করে গড়ে তুলতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। সে পথে তারা এগিয়েছেও অনেকদূর। প্রযুক্তি সহায়তা ছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করাও সম্ভব নয়। তাই প্রযুক্তির বিস্তারের সাথে সাথে সমাজব্যাপী অনাচারের বিস্তার যেন বৃদ্ধি না পায় এটি নিশ্চিত করা জরুরি। এক্ষেত্রে শুধু আইন করলেই হবে না। প্রথমত, কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে এবং যারা প্রযুক্তি সহায়তা নিয়ে নানা অপকাণ্ড ঘটাচ্ছে তাদের শনাক্ত করে কঠোর আইনি সাজাও নিশ্চিত করতে হবে। আমরা আশা করি, দায়িত্বশীল মহল এ ব্যাপারে দ্রুতই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।