বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে অস্বীকার : গাংনীতে সেনা সদস্য গ্যাঁড়াকলে

 

গাংনী প্রতিনিধি: সাত বছর ধরে প্রেমসম্পর্ক। দীর্ঘদিন ধরেই গোপনে দেখা-সাক্ষাত। প্রেমিকার বাড়িতে প্রকাশ্যে ও গোপনে আসা-যাওয়া চলছিলো। যেকোনো সময় প্রেমিকাকে বধূরূপে বরণের আশ্বাসও ছিলো। কিন্তু হঠাতই বেকে বসেন প্রেমিক। পরিবারের অমতের দোহাই দিয়ে প্রেমিকাকে অন্যত্র বিয়ে করতে বলেন। কিন্তু মানতে পারেননি প্রেমিকা। এরপরেও চলছিলো দুজনের মেলামেশা। বিষয়টি প্রেমিকার পরিবার ছাপিয়ে গ্রামের মানুষও টের পায়। আর যাই কোথায়। প্রেমিক-প্রেমিকাকে একসঙ্গে পেয়ে আটকে দেয় গ্রামবাসী। হয়ে বিয়ে না হয় আত্মহত্যার হুমকি প্রেমিকার। কিন্তু মন গলেনি প্রেমিক আসাদুজ্জামান রুবেলের। গ্রামের মানুষ ঘটনার এমনই বর্ণনা দিয়ে বিয়ের দাবিতে অনড় রয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে মেহেরপুর গাংনী উপজেলার চাঁদপুর গ্রামে। আটক প্রেমিক গাংনী উপজেলার পার্শ্ববর্তী এলাকা কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ঝুটিয়াডাঙ্গা গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে। তিনি একজন সেনা সদস্য। প্রেমিকার নাম লাভলী খাতুন। পিতা ডাবলু হোসেন চাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দা। গাংনী সরকারী কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী লাভলী খাতুন।

লাভলী খাতুন জানান, ২০১১ সালে এক বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে রুবেলের সাথে তার পরিচয়। তার পর দুজনের মন দেয়া-নেয়া। ভাব বিনিময়ের এক পর্যায়ে তা গড়ায় প্রেমসম্পর্কে। প্রথম দেখাতেই দুজন দুজনের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েন। চলতে থাকে প্রেম সম্পর্ক। প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে বেশ কয়েকবারই তার বাড়িতে গিয়েছিলেন রুবেল। ২০১৩ সালে সেনাবাহিনীর চাকুরী পেয়ে প্রশিক্ষণে যায়। সেখান থেকে ফিরে এসে দ্রুত বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেয়। এভাবে গড়াতে থাকে প্রেমের সম্পর্ক। রাতে ও দিনে বেশ কয়েকদিন প্রেমিকের বাড়িতে দেখা করতে আসে। বিষয়টি টের পায় পরিবার ও প্রতিবেশীরা। দ্রুত তাদের বিয়ে হচ্ছে বলেও গ্রামে রটে যায়। কিন্তু কিছুদিন আগে বিয়ে করবে না বলে লাভলীকে জানায় রুবেল। সম্প্রতি ছুটিতে বাড়ি আসেন রুবেল। গতকাল সোমবার তার ছুটি শেষ তাই প্রেমিকার সঙ্গে তার বাড়িতে দেখা করতে আসেন। দুজনকে একই ঘরের মধ্যে পেয়ে প্রতিবেশীরা তাদের আটক করার চেষ্টা করেন। এসময় ছাদ থেকে লাফিয়ে পালানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ রুবেল। দুজনকে আটকে রাখা হয় একই কক্ষে। খবর পেয়ে রুবেলের পরিবারের লোকজন সেখানে ছুটে আসে। সেনাবাহিনীর নিয়মানুযায়ী এখনো তার বিয়ে করার সময় না হওয়ায় বিয়েতে রাজি হয়নি রুবেল। কিন্তু তা মানতে নারাজ লাভলির পরিবার ও গ্রামবাসী। এদিকে বিয়ের দাবিতে অনড় থাকায় পর কোনো সমাধান না হওয়ায় বিষয়টি গড়ায় প্রশাসনের দরবারে। রাত বারটার দিকে গাংনী থানা পুলিশের একটি দল রুবেলকে উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে নেয়।

গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, রুবেল সেনা সদস্য বিধায় তার সেনা ইউনিটের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে বিয়ের দাবিতে অনড় রয়েছেন লাভলী। তিনি গতরাতে বলেন, রুবেলের বিয়ের আশ্বাসে সে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছে। পরিবার থেকে কয়েকটি বিয়ে ঠিক করলেও রুবেলের আশ্বাসে সে বিয়ে করেনি। বিষয়টি সবারই জানা। বিয়ে না করায় সে এখন নিরুপায়। তার জীবনে নেমে এসেছে অন্ধকার। তাই স্বাভাবিকভাবে যদি সে বিয়ে না করে তাহলে অনশনসহ যা যা করার তাই করতে প্রস্তুত বলেও জানান লাভলী। লাভলীর পরিবারের কয়েকজন জানান, রুবেল প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। তার প্রতারণায় একজন মেয়ের জীবন নষ্ট হতে চলেছে। বিষয়টি নিয়ে তারা আইনগত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি রুবেল ও তার পরিবারের সদস্যরা।