শহীদ সাংবাদিক শামছুর রহমানের পত্যাশা পূরণ হওয়ার পথে

 

মহেশেপুরের নীল কুঠি থেকে ইকো পার্ক

দাউদ হোসেন: মহেশপুর উপজেলার খালিশপুর বাজারের কপোতাক্ষ নদের পাড়ে নীল কুঠি কাছারি বাড়ির জায়গাটি বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান ইকো পার্ক করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। দীর্ঘ দেড়যুগ আগে শহীদ সাংবাদিক শামছুর রহমান যা প্রত্যাশা করেছিলেন তা বাস্তবে পূরণ হওয়ার পথে।

১৯৯৭ সালের দিকে সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল নীল চাষের ইতিহাস সংগ্রহের জন্য খালিশপুর কাছারি বাড়িতে এসেছিলেন। এ প্রতিবেদকের সাথে সে সময় তিনি বলেছিলেন এই গ্রামে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের বাড়ি ছিলো। সেই সূত্রে এখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তৈরি করে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠতে পারে। তিনি তার সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু এর কিছুদিন পরে দুর্বৃত্তদের হাতে তিনি খুন হন। দীর্ঘ দেড়যুগ পর তার সেই প্রত্যাশা পূরণ হওয়ার পথে। এ গ্রামের নামকরণ হয়েছে হামিদনগর। এখানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান কলেজ রয়েছে। কলেজের সাথে স্মৃতি পাঠাগার এবং  সামনে সমাধি করা হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠের মায়ের। গত ৩১ অক্টোবর উপজেলা প্রশাসন এলাকার মানুষ নিয়ে নীল কুঠির কাছারি বাড়িকে ইকো পার্ক তৈরি করার ঘোষণা দেয়। এখানে প্রায় সরকারের ৩৭ বিঘা জমি রয়েছে।

ঐতিহাসিকদের মতে, ১৮১১ সালে কোটচাঁদপুরের দুতিয়ার কাঠি কুঠির মালিক মি. ব্রিজবেন খালিশপুরের নীল কুঠিটি স্থাপন করেন। সে সময় খালিশপুর থেকে সাঁগরদাড়ি হয়ে কোলকাতা পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল করতো। তৎকালে খালিশপুরের কুঠি কাছারি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কলকাতা থেকে অনেক কুঠিয়াল সাহেব নদী পথে মাঝে মাঝে কাছারি বাড়িতে আসতেন। ১৮০৫ সালে যশোর জেলায় অনেক ইংরেজ নীল ব্যবসায়ীর আগমন ঘটে এবং তারা বিভিন্ন স্থানে নীল কুঠি স্থাপন করেন। একাধিক নীল কুঠি নিয়ন্ত্রিত হতো কনসারণ অফিস দ্বারা। সে সময় কাঠগড়া কনসারণ অফিসের অধিনে ছিলো খালিশপুর নীল কুঠি। দক্ষিণমুখী কুঠি ভবনটির দৈর্ঘ্য ১২০ ফিট, প্রস্থ ৪০ফিট ও উচ্চতা ৩০ ফিট । দক্ষিণ দিকে প্রশস্ত বারান্দা। ১২ কক্ষ বিশিষ্ট দ্বিতল ভবন এটি। দেয়াল ২০ ইঞ্চি পুরু। নিচের তলার থেকে ওপরের তলার কক্ষগুলো আয়তনে বড়। চুন, সুড়কি ও পাকা ইটের তৈরি। ২শ বছরের পুরোনো ভবনটি এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। গোসল করার পাকা সিঁড়ি নদীর নিম্নে পর্যন্ত নামানো যা এখনও ভগ্নদশা অবস্থায় আছে। ১৯৯৯ সালে কলেজ এবং ২০০৭ সালে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের নামে জাদুঘর স্থাপনের পর খালিশপুরের সুনাম বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। কিন্তু নীলকুঠিয়ালদের অত্যাচার নির্যাতনের মর্মান্তিক কাহিনি এ অঞ্চলের মানুষ এখনও ভুলে যায়নি। কেনো না ধ্বংসপ্রায় নীল কুঠি তাদের মনে অতীত নিপীড়নের কথা জাগিয়ে তোলে।

এই ঐতিহাসিক স্থানটিকে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান ইকো পার্ক করার উদ্যোগ গ্রহণ করায় এলাকার মানুষ খুবই খুশি হয়েছে। এক সময়কার অত্যাচার বেদনার স্থানটি হবে আনন্দ খুশির স্থান।

স্থানীয় সংসদ সদস্য নবী নেওয়াজ এ প্রতিবেদককে জানান, ইকো পার্কটি আধুনিক মানের হবে এবং স্থানটি ক্রমান্বয়ে সরকারের সহযোগিতায় পর্যটন স্থানে পরিণত করা হবে এজন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।