স্টাফ রিপোর্টার: দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর বিচ্ছিন্ন হামলা অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় আরো দুই জেলায় মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জ সদরে একটি পারিবারিক মন্দিরে ও ঝালকাঠি সদরে সর্বজনীন কালী মন্দিরে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। এসব ঘটনায় এলাকার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এদিকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলার ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চৌধুরী মোয়াজ্জাম আহমেদকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আরো ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গতকাল রোববার এক আদেশে নাসিরনগরের ইউএনও সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা মোয়াজ্জাম আহমেদকে পরবর্তী পদায়নের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করে। এর আগে এই ঘটনার জের ধরে নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কাদেরকে প্রত্যাহার করা হয়।
ঝালকাঠিতে মন্দিরে হামলা: ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান, সদর উপজেলার পোনাবালিয়া বাজার সংলগ্ন সর্বজনীন কালী মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। এসময় তারা মন্দিরের সীমানা পিলার উপড়ে ফেলে এবং পূজার ঘণ্টাসহ অন্যান্য সরঞ্জাম ভাঙচুর করে পুকুরে ফেলে দেয়। শনিবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে। মন্দির কমিটির সদস্য লিটন দেবনাথ জানান, বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে রাতের কোন এক সময় দুর্বৃত্তরা এ হামলা চালায়। সকালে এসে তারা প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তরুন কর্মকার জানান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের জন্য একটি চক্র এই ঘটনা ঘটাচ্ছে। সকালে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রকিব ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ আটক হয়নি। তবে যারাই জড়িত থাকুন না কেন তাদের আটক করে আইনের আওতায় আনা হবে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
সিরাজগঞ্জে প্রতিমা ভাঙচুর: সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, শনিবার গভীর রাতে সদর উপজেলার বাগবাটি ইউনিয়নের ফুলকোচা গ্রামের কুণ্ডুবাড়ি কালী মন্দিরে ২টি প্রতিমা ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সংবাদ পেয়ে জেলা প্রশাসক কামরুন্নাহার সিদ্দিকা ও পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহম্মেদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি জানান। এদিকে জেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট সুকুমার চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ কুমার কানু অবিলম্বে মন্দিরে হামলাকারীদের বিচার দাবি করেছেন।
নাসিরনগরে দুই মামলায় গ্রেফতার ৫৩: ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি ও নাসিরনগর সংবাদদাতা জানান, ফেসবুকে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত ৩০ অক্টোবর উপজেলার ১২টি মন্দির এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের শতাধিক ঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এ ঘটনায় বিভিন্ন মহল থেকে ইউএনওসহ স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ ওঠে। হামলায় জড়িত সন্দেহে গতকাল বিভিন্ন গ্রাম থেকে আরো ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ব্যাপক পুলিশি অভিযানের কারণে উপজেলায় গ্রেফতার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। থানার নবাগত ওসি মো. আবু জাফর আটকের কথা স্বীকার করে জানান, এ ঘটনায় দুটি মামলায় এ পর্যন্ত ৫৩ জনকে গ্রেফতার করা হলো।
ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে কাদের সিদ্দিকী: নাসিরনগরে মন্দিরে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের পাশাপাশি সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বি. চৌধুরী ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে একটি বেসরকারি তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। গতকাল ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ দাবি জানান। তিনি এ ঘটনার জন্য প্রশাসন ও পুলিশের দায়িত্বহীনতা এবং ব্যর্থতাকেও দায়ী করেন।
প্রতিবাদ কর্মসূচি: হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ ও সচেতন হিন্দু সমাজের ব্যানারে স্থানীয় শহীদ মিনার চত্বরে গতকাল সকালে ঘন্ট্যাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে বক্তব্য রাখেন পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কাজল জ্যোতি দত্ত, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অঞ্জন কুমার দেব প্রমুখ।
নেত্রকোনায় মন্দিরে হামলার ঘটনায় মামলা: নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, শহরের সাতপাই একতা সংঘ কালী মন্দিরে গত শনিবার ভোরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আটক সুমন ইসলাম জাহাঙ্গীরসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু তাহের দেওয়ান জানান, একতা সংঘের সম্পাদক অনিমেষ সরকার শনিবার রাতে মামলাটি দায়ের করেন। সুমনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অন্য আসামিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় গতকাল ফরিদপুরের মধুখালীতে প্রতিবাদ সভা করেছে উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় হিন্দু নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন পৌর মেয়র এমরান উদ্দিন জুয়েল।