চুয়াডাঙ্গাকে বিদায় জানালেন পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান

 

তখনই তার চোখ হয়ে উঠেছিলো অশ্রুসজল : চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি সহকর্মীরাও

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রথমেই যে নাম আসে, সেটা হলো পুলিশ। বলা হয়ে থাকে পুলিশ জনগণের সেবক। পুলিশ দেশমাতার নির্ভীক সৈনিক। পুলিশ সদাজাগ্রত বীর। পুলিশ জনগণের বন্ধু। বিপদে যার কাছে আশ্রয় নেয়া যায় তিনিই বন্ধু। শুধু তাই নয় পুলিশ সমাজের ভারসাম্য রক্ষা করে। অপরাধ নির্মূলে সচেষ্ট থাকে, থাকে নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্বে। এ গুরুদায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে চাই দেশপ্রেম। দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে নিজ দায়িত্ব পালন করতে পারলেই যেমন সফল হওয়া যায়। তেমনি দক্ষ, সৎ, সাহসী পুলিশ অফিসার দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করবে এটাই কাম্য। জনগণের নিরাপত্তা বিধান ও আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে যোগ্য, সৎ, সাহসী, পুলিশের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তেমনই একজন দেশমাতার নির্ভীক সৈনিক চুয়াডাঙ্গার বিদায়ী পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান। তিনি গতরাতে চুয়াডাঙ্গা থেকে বিদায় নিয়ে নতুন কর্মস্থল জয়পুরহাটের উদ্দেশে ট্রেনযোগে রওনা দেন।

তিনি ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর যোগদান করেন চুয়াডাঙ্গায়। যোগদানের পর থেকে জেলার পুলিশ অফিসারদেরকে চৌকস করে গড়ে তুলতে প্রতিমাসে আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে তাদের সম্মানিত করেন। এসব চৌকস অফিসারদের নিয়ে রাত দিন জেলার আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নে কাজ করেছেন। যার ফলে জেলাজুড়ে থানা ও পুলিশ বিভাগের প্রতি জনগণের স্বস্তি আসা ও বিশ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে। ইতঃপূর্বে অন্য কেউ এমন বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হননি। এসপি হিসেবে যোগদান করার পর থেকেই চুয়াডাঙ্গাবাসী যেন এক নিরাপত্তার চাদরে বসবাস করেছে। এর আগে হরহামেশাই চোখে পড়তো চুয়াডাঙ্গায় অপকর্মের সব বড় বড় ঘটনা। প্রকাশ্যে দিবালোকে ও অনেকেই দেখেছে অপরাধীদের অপকর্মের ঘটনা। জেলার অপরাধ এখন অনেকটাই কমে এসেছে।

তিনি সম্মান করেন সাধারণ মানুষকে। মানুষের আপদে-বিপদে কাছে থাকতে চান। সে জন্যই বিচিত্র সমস্যা নিয়ে সাধারণ মানুষ ছুটে যেতেন তার কাছে। সাধ্যমতো তিনি চেষ্টা করেছেন সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধানে। এছাড়াও সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পুলিশ সুপার রশীদুল হাসনের অবাধ বিচরণ। এজন্য সাধারণ মানুষের কাছে তিনি হয়ে ওঠেন নির্ভরতার প্রতীক। হয়ে ওঠেন বন্ধু। সেই পুলিশ সুপার রশীদুল হাসানকে বিদায় কতোই না করুণ! কেউ না চাইলেও নিয়ম মেনে বিদায় নিতে হবেই। সে বিদায়টাই নিয়ে নিলেন ক্ষণজন্মা, অসামান্য, অসাধারণ এক পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান। গতরাতে ছল ছল চোখে, পুলিশ সুপার হাত নেড়ে বিদায় বলে ট্রেনে উঠেলেন। তখনই তার চোখ হয়ে উঠেছিলো অশ্রুসজল। সহকর্মীরাও ধরে রাখতে পারেননি চোখের পানি। এ সময় এক হৃদয়বিদায়ক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। গতরাত ১২টা ৩৫ মিনিটে সীমান্ত এক্সপ্রেসে ট্রেনযোগে নতুন কর্মস্থল জয়পুরহাটের উদ্দেশে রওনা দেন। এর আগে তিনি চুয়াডাঙ্গার বাসভবন থেকে বেরিয়ে পথে পথে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হন। তিনি সহকর্মীদের সাথে করে গাড়িবহর নিয়ে চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে ১২টা ২৫ মিনিটে এসে পৌঁছান। সাথে ব্যান্ডপার্টি। এ সময় স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ প্রশাসন ও সাধারণ জনতা ফুলে ফুলে ভরিয়ে তোলেন। ব্যান্ডপার্টির বাদ্যযন্ত্রে মুখরিত হয়ে স্টেশন প্লাটফর্ম। ট্রেন আসার সাথে সাথে যাত্রীরা সাধারণের মধ্যেও দেখা যায় এক অন্যরকম কৌতূহল। যাত্রীরা জানতে চান কোন নেতা যাচ্ছেন, এতো আয়োজন? পুলিশ সুপারকে বিদায়ের কথা জানতে পেরে তারা অনেকেই বলে ওঠেন অনেক পুলিশ সুপারকে বিদায় দিতে দেখেছি! এতো আয়োজন তো দেখিনি! পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান আজ রোববার জয়পুরহাটে তার নতুন কর্মস্থলে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।