সরকারি রাস্তা অবৈধভাবে দখল করে পাকা ঘরবাড়ি তৈরি করার অভিযোগ

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সরকারি রাস্তা সম্পূর্ণ দখল করে পাকা বসতবাড়ি ও ল্যাট্রিন নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে নির্দেশ দিলেও কয়েক দিনের ব্যবধানেও তা বন্ধ করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে এসিল্যান্ড রাস্তা দখল করে ঘরবাড়ি নির্মাণ কাজ বন্ধের নির্দেশ দিলেও তার অধিন্যস্ত কর্মচারী সংশ্লিষ্ট তহশিলদার মতিয়ার রহমান মোল্লা উল্টো সেই অবৈধ নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আলমডাঙ্গার কুয়াতলা গ্রামে প্রায় ২শ ফুট সরকারি রাস্তা অবৈধভাবে দখল করে পাকা ঘরবাড়ি ও পায়খানা তৈরি করার অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার নতিডাঙ্গা গ্রামের মৃত ফকির চাঁদের ছেলে ইকতার আলী (৬০)। তিনি বিয়ে করেন উপজেলার হারদী ইউনিয়নের কুয়াতলা গ্রামের মৃত করম আলীর মেয়েকে। বিয়ের পর এক পর্যায়ে ইকতার আলী শ্বশুরালয়ে ঘরজামাই হিসেবে বসবাস শুরু করেন। পরে চাচাতো শ্যালক কিতাব আলীর দেয়া জমিতে বাড়িঘর করেন। সম্প্রতি তিনি নিজ বাড়ির পাশের ২৫ ফিট চওড়া সরকারি রাস্তা প্রায় ১শ ৯৫ ফুট অবৈধভাবে দখল করে পাকা ঘরবাড়ি ও ল্যাট্রিন নির্মাণ করছেন। ফলে বন্ধী হয়ে পড়েছে। তাদের বাড়িতে প্রবেশ ও বের হওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে দেখা যায় সরকারি রাস্তাটি আর এস খতিয়ানভূক্ত। এমনকি ম্যাপেও রাস্তাটির অস্তিত্ব রয়েছে। এহেন সরকারি রাস্তা ইকতার আলী বেশ কয়েক বছর ধরে অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছেন। সেখানে গাছও লাগিয়েছেন। বেশ কৌশলে তিনি সরকারি রাস্তা গায়েব করার পরিকল্পনা করেছেন। বর্তমানে ইকতার আলী তার দানসূত্রে প্রাপ্ত জমিতে বসবাস করলেও দখলকৃত রাস্তার জমিতে প্রথমে গাছ লাগিয়েছেন। গাছ কিছুটা বড় হয়েছে। এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিজের জমি থেকে ঘরবাড়ি স্থানান্তর ঘটিয়ে অবৈধভাবে দখলকৃত সরকারি রাস্তার জমিতে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে একেবারে রাস্তাটি পাকাপাকি দখল করার।

প্রতিবেশিদের অনেকে অভিযোগ করেন, স্থানীয় হারদী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার মতিয়ার রহমান মোল্লার সাথে যোগসাজসে ইকতার আলী অবৈধভাবে সরকারি রাস্তা দখল করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করছেন। প্রতিবেশি জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু রাস্তা দখল করে অবৈধভাবে বাড়িঘর নির্মাণ বন্ধ ও সরকারি রাস্তা উদ্ধারের জন্য এসিল্যান্ডের নিকট লিখিত অভিযোগ করেন। জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়ে গত সোমবার বিকেলে আলমডাঙ্গা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম টেলিফোনে রাস্তা সম্পূর্ণ দখল করে অবৈধভাবে নির্মাণাধীন ঘরবাড়ি ও ল্যাট্রিন নির্মাণ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিতে বলেন হারদী ইউনিয়ন তহশিলদার মতিয়ার রহমান মোল্লাকে। এসিল্যান্ডের আদেশ মতো তহশিলদার ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন ঠিকই, তবে এসি ল্যান্ডের নির্দেশনা মতে স্থাপনা বন্ধের নির্দেশ দেন নি। বরং কাজ যখন অনেকটা হয়ে গেছে, তখন খুব দ্রুত সম্পন্ন করতে উল্টো পরামর্শ দিয়ে এসেছেন। সরেজমিন ঘুরে দেখার সময় কথা হয় নির্মাণ শ্রমিক দর্শনার প্রতাবপুর গলাইদড়িঘাটের আব্দুর রহমানের সাথে। তিনিও এই অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, তহশিলদার স্যার আসছিলেন। তিনি বলেছেন কাজ যখন অর্ধেক করে ফেলছো বাকি কাজ খুব দ্রুত করে ফেলো।

আলমডাঙ্গা উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মাজেদুল ইসলাম বলেন, এসিল্যান্ডের নির্দেশ মোতাবেক গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে আমি ঘটনাস্থলে জমি মাপ-জোক করতে যায়। গিয়ে আমিও একই অভিযোগ শুনেছি। তিনি বলেন, জমি পরিমাপ করে সীমানা নির্ধারণ করেছি। নির্মাণাধীন ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ রাস্তার জমিতে। পরে এসিল্যান্ডের নির্দেশ মতে সরকারি রাস্তা থেকে ওই অবৈধ স্থাপনা ৭ দিনের মধ্যে সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়ে এসেছি।