নিয়মিত কর আদায় করে রাজস্ব সমৃদ্ধ করা

 

রাজস্ব সরকারের নিজস্ব অর্থনৈতিক শক্তির মূল উৎস। যারা বার্ষিক আয়ের ওপর কর দিতে সক্ষম তারা যদি নিয়মিত কর আদায় করেন তবে সরকারের রাজস্ব অত্যন্ত সমৃদ্ধ হতে পারে এবং সরকারের পক্ষে জনস্বার্থে আরো বেশি কল্যাণমূলক কাজে সম্পৃক্ত হওয়া সহজ হয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আয়কর প্রদানে সক্ষম ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এ ব্যাপারে উদাসীন। তারা নিয়মিত আয়কর দেন না বা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু রাষ্ট্রের একজন বৈধ এবং প্রতিষ্ঠিত নাগরিক হিসেবে এটি প্রত্যেকের নাগরিক দায়িত্ব। আগের তুলনায় আয়কর প্রদান এখন অনেক সহজ। কর প্রদানে আগ্রহী কেউ যেন কোনোভাবে কোনো ধরনের দুর্ভোগের শিকার না হন সেই লক্ষ্যে প্রতিবছর মেলার আয়োজনও করা হচ্ছে। করদাতাকে সর্বোচ্চ সেবা প্রদানের লক্ষ্যে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বৃহৎ পরিসরে সাত দিনব্যাপী জাতীয় আয়কর মেলা শুরু হয়েছে নভেম্বরের প্রথম দিন থেকেই। আজ থেকে চুয়াডাঙ্গায় শুরু হবে ৫ দিনব্যাপী আয়কর মেলা। জেলা সমবায় সমিতির কার্যালয়ে এ মেলার উদ্বোধন করা হবে।

আয় প্রদানে অনেকেরই এক ধরনের ভীতি কাজ করে। কী পরিমাণ সম্পদ বা বার্ষিক আয়ের ওপর সরকারকে কর প্রদান করতে হয়, কী ধরনের কাগজপত্র তৈরি থাকতে হয় কিংবা এজন্য কোনো নির্দিষ্ট ফরম আছে কি-না এ ধরনের নানা প্রশ্নের জবাব অনেকের জানা নেই। কর দিতে ইচ্ছুক এমন কেউ যাতে ভীতির শিকার না হন এবং কর প্রদান যাতে সহজ থেকে সহজতর হয় এ জন্যই মূলত আয়কর মেলার আয়োজন। কেন্দ্রীয়ভাবে যদিও এবারের মেলা অনুষ্ঠিত হবে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নির্মাণাধীন নিজস্ব ভবনে। তবে একই সাথে সারাদেশে বিভাগীয় শহরে সাতদিন, জেলা শহরে চারদিন এবং ২৯টি উপজেলায় দুই দিনব্যাপী স্থায়ী এবং ৫৭টি উপজেলায় একদিনের ভ্রাম্যমাণ মেলা অনুষ্ঠিত হবে। এবার মেলা থেকেই অনলাইনে আয়কর বিবরণী জমা দেয়ার কার্যক্রম (ই-ফাইলিং) শুরু হচ্ছে প্রকাশিত সংবাদে এমন তথ্যই তুলে ধরা হয়েছে। রাজস্ব ভবনের দাফতরিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা ২০১৮ সালে। কিন্তু এ মেলার মাধ্যমে দুই বছর আগেই নির্মাণাধীন ভবন ব্যবহার শুরু হলো। এর আগে বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাবে এ মেলার আয়োজন করা হতো। সেখানে এর আয়তন ছিলো ২২ হাজার বর্গফুট। কিন্তু নতুন ভেন্যুতে এ মেলার আয়তন হচ্ছে ৬২ হাজার বর্গফুট। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মাঝামাঝি সময়ে ট্যাক্সকার্ড প্রদান করা হবে। শেষ সপ্তাহে পালন করা হবে আয়কর সপ্তাহ। আর শেষ দিন পালন করা হবে আয়কর দিবস। ২০১৬-১৭ করবর্ষের আয়কর দেয়ার শেষ দিন ৩০ নভেম্বর। ভবিষ্যতে নভেম্বর মাসকে আয়করের জন্য বিশেষ মাস হিসেবে বিবেচনা করা হবে এমন চিন্তা-ভাবনা রয়েছে সংশ্লিষ্টদের। করদাতাদের নানান সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে আয়কর প্রদানে আগ্রহী করে তোলার প্রচেষ্টা রয়েছে মেলাকে কেন্দ্র করে। শুধু সরকারের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ শক্তিশালী করার জন্যই নয়, নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের প্রতি দায় পালনের জন্যও আয়কর প্রদান করা কর্তব্য। সরকারের উচিত, এ বিষয়ে আরও বেশি প্রচার-প্রচারণা চালানো এবং করদাতাদের আস্থা সৃষ্টিতে আরও দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নেয়া।