টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের গৌরবদীপ্ত জয়

 

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ খুব একটা জেতেনি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৫টি এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২টিতে মাত্র। ক্রিকেট বিশ্বে এরা খুব শক্তিশালী দল এমনটি বলা যাবে না। তবে হারতে হারতে ক্লান্ত বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট টিমের কাছে এসব জয়ও অনেক বড় অর্জন। তবে সব অর্জন ছাপিয়ে বাংলাদেশ যেন আকাশ ছুঁয়ে ফেললো। ইংল্যান্ডের মতো ঝানু প্রতিপক্ষকে এভাবে নাস্তানাবুদ করে হারিয়ে দেয়া চাট্টিখানি কথা নয়। বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দল টাইগারবাহিনী সেই অসাধ্যটিই সাধন করলো। এ কারণেই ৩১ অক্টোবর ২০১৬ তারিখ জাতীয় দৈনিকগুলোতে ক্রিকেটীয় শিরোনামের ছড়াছড়ি। চট্টগ্রামে জয়ের মুখ দেখতে দেখতেই যেন তা হারিয়ে গেলো। ঢাকা টেস্ট নিয়ে তাই আগ্রহের সীমা ছিলো না দেশবাসীর। তবে নিয়মিত উইকেট পতনের পর ২৯৬ রান করে থেমে যাওয়া বাংলাদেশ কতোটা জয় ছিনিয়ে আনতে পারবে এ নিয়ে সংশয়ও ছিলো যথেষ্ট। শতরানেও ইংল্যান্ডের কোনো উইকেট না পড়ায় সংশয় এক সময় আতঙ্কে পরিণত হয়েছিলো। কিন্তু টাইগারবাহিনী প্রমাণ করেছে হেরে যাওয়ার আগেই তারা হারে না।

বাংলাদেশ এবং এই দেশের জনগণের কাছে ক্রিকেট এখন আর শুধু একটি খেলা মাত্রই নয়। ক্রিকেট মানে বহির্বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো অন্য এক বাংলাদেশ। ক্রিকেট মানে রাজনৈতিক, সামাজিক, পারিবারিক সব হিসাব-নিকাশ ভুলে পুরো জাতির অন্যরকম এক আনন্দে অবগাহন করার অনন্য এক উপলক্ষ। ক্রিকেট মানে নির্ভেজাল বিনোদনের প্রতিভূ। এই আনন্দের জোগানদার হয়ে ক্রিকেটদলে যুক্ত হচ্ছেন নতুন নতুন ক্রিকেটার। মাশরাফি, মুশফিক, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালদের হাত ধরে এখন দায়িত্বের সাথে লড়াই করছেন তাসকিন, মুস্তাফিজ, আরাফাত সানি, নাসির, সাব্বিরের মতো খেলোয়াড়। একশ তিরিশ বছরের টেস্ট রেকর্ড ভেঙে ইতিহাস গড়লেন যিনি তিনি মেহেদী হাসান মিরাজ। অনুর্ধ্ব-১৬ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নশিপে যিনি নিজের জাত চিনিয়ে দিয়েছিলেন। মাত্র উনিশ বছর বয়সী এই স্পিন বোলারের বলের আঘাতে তছনছ হয়ে গেছে ইংল্যান্ডের ব্যুহ দেয়াল। চট্টগ্রাম ও ঢাকা টেস্টে মিরাজের অর্জন উনিশটি উইকেট। তিনি এবং সাকিবের তোপের মুখে পড়ে হাতে দু দিন থাকতেই হারের স্বাদ নিতে হয়েছে ইংল্যান্ডের। এক বছরেরও বেশি সময় পর টেস্ট খেলতে নেমে ইংল্যান্ডকে তিন দিনেই হারিয়ে দেয়ার স্বপ্ন হয়তো শুধু কল্পনাই করা যায়। কিন্তু সেই কল্পনাকেই বাস্তবে রূপ দিলেন মিরাজ। চট্টগ্রামে অভিষেকে ৬ উইকেট নেয়ার পর ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসেও নেন ৬ উইকেট। পরে দ্বিতীয় ইনিংসেও ৬ উইকেট। আগের দুই ইনিংসের তুলনায় শেষবার রান কম দেয়াতে তার এই ৭৭ রানে ৬ উইকেটই হয়ে গেছে ক্যারিয়ারে সেরা। যে কারণে ম্যাচসেরা এবং সিরিজও সেরা তিনিই। মিরাজের ৬ উইকেটের সাথে সাকিবের ৪ উইকেট ইংল্যান্ডকে বড় হারের লজ্জা এঁকে দেয়।  জয় শেষে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহমান আইসিসির কাছে বাংলাদেশকে আরো বেশি বেশি টেস্ট খেলতে দেয়ার সুযোগ চেয়েছেন।

আমরা মনে করি, আইসিসির দায়িত্বশীলরা বিষয়টি বিবেচনা করবে। কারণ ধারাবাহিক জয় ও খেলায় আরো উন্নতি অর্জন করতে হলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে বেশি বেশি ক্রিকেট খেলাটা জরুরি। মিরপুর টেস্ট জয় বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এর ইতিবাচক প্রভাব যা হবে বহুমুখী তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট দলকে আন্তরিক অভিনন্দন।