দেশের উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসসমূহে সমন্বয়ের অভাবে বিনামূল্যের ২৯ কোটিরও বেশি পাঠ্যবই গুদামে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় চার টনের বেশি ওজনের বই পড়ার অনুপযোগী হয়ে গিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই বিষয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় চার টনের বেশি ওজনের এইসব বই ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রয় করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সংবাদটির মধ্যে আপাতভাবে একতরফা অপচয়ের গন্ধ খুঁজিলে বড় ভুল হবে। সরবরাহ যখন পর্যাপ্ত তখন স্বল্পপরিমাণে নষ্ট হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু বিস্ময় অন্যখানে। কয়েক দশক পূর্বেও কি কেউ কল্পনা করতে পারতো, দেশে একসময় ঠিক বছরের পয়লা দিনটিতেই কোমলমতি সকল শিক্ষার্থীর হাতে তুলিয়া দেয়া সম্ভবপর হবে নতুন পাঠ্যপুস্তক? আর নতুন সেইসব পুস্তকের মৌমাত ঘ্রাণে ভরে ওঠবে নতুন ক্লাসে ওঠার অপার আনন্দ? এটা কি মুখের কথা, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহের মতো বিপুল কর্মযজ্ঞ ফি বছর ১ জানুয়ারিতেই সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করে যাচ্ছে এই সরকার! সেখানে সংখ্যায় টানাপড়েন তো ঘটেই না, উল্টা উদ্বৃত্ত হয়। অথচ তিন/চার দশক পূর্বেও আমরা দেখেছি— গণশিক্ষা অভিযানের নামে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক ছাপা ও বিতরণের মাঝে বিদ্যমান ছিলো শুভঙ্করের ফাঁকি! প্রয়োজনের তুলনায় নামমাত্র পুস্তক ছাপিয়ে সরকারি অর্থের হরিলুটের ব্যবস্থা ছিলো বছরের পর বছর। জানুয়ারি মাস তো দূরের কথা নতুন পুস্তক পেতে পেতে মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত গড়িয়ে যেতো। আর সেই নতুন পুস্তকও পাওয়া যেতো লটারির মতো, অনেক শিক্ষার্থীর ভাগ্যেই তা জুটিত না। সেই ধূসর-মলিন চিত্রের বিপরীতে আজ কি-না পাঠ্যপুস্তক উদ্বৃত্ত থাকে! জানা গেছে, ২০১৭ সালের প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি ও সমমানের স্কুল, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৪ কোটি ২৬ লাখ ৩৬ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য প্রয়োজনীয় ৩৬ কোটি ২২ লাখ ৩৪ হাজার বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক পয়লা জানুয়ারিতে বিতরণের জন্য যথাবিহিত কর্মযজ্ঞ চলিতেছে। এটা যেন অমারজনীর অন্ধকারের বিপরীতে উজ্জ্বল আলোর অপরূপ রোশনাই!
প্রতিবছর বাফার স্টক হিসাবে এমনিতেই পাঁচ শতাংশ বই অতিরিক্ত ছাপা হয়। এই বইসমূহ বন্যাসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা আপতত্কালীন সময়ের জন্য। বছর শেষে অবিলিকৃত বইসমূহ পরবর্তী বছরের সাথে সমন্বয়ও করা হয় থাকে। এই বছর সেইখানে কিছুটা গলদ দেখা গিয়াছে বিধায় উদ্বৃত্ত বই গুদামে রয়েছে। আশা করা যায়, আগামীতে এই ক্ষেত্রে উপজেলা বা জেলা শিক্ষা অফিস যথাসময়ে সমন্বয়ের কাজটি সম্পন্ন করবে। মনে রাখতে হবে ফি বছর পাঠ্যপুস্তক উত্সবের অভাবিত সাফল্যের পর এই ধরনের দায়িত্বহীনতা সামান্য হলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে পারে। তা যাতে না হয়, সেই ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা বা জেলা শিক্ষা অফিসকে সচেতন থাকতে হবে।