ভারত প্রশ্নে অবস্থান বদলাচ্ছে বিএনপি

 

স্টাফ রিপোর্টার: ভারত প্রশ্নে অবস্থান বদলাচ্ছে বিএনপি। কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দলটির নীতিতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। যার প্রতিফলন পড়ছে নেতাদের সামপ্রতিক কথাবার্তায়। চড়তে শুরু করেছে নেতাদের সুর। বর্তমান সরকারকে সহযোগিতা, রামপাল বিদ্যুত্ কেন্দ্র, তিস্তা চুক্তি, সীমান্ত হত্যাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে দলের নেতারা প্রায় প্রতিদিনই ভারতের সমালোচনা করে বক্তব্য দিচ্ছেন। গতকাল বুধবারও দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ভারত বাংলাদেশের জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ভারত বর্তমানে গণতন্ত্র হত্যার জন্য সহযোগিতা করছে। অনির্বাচিত সরকারকে মদদ যোগাচ্ছে। কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী জনগণের বিপক্ষে গিয়ে বর্তমান সরকার ভারতের পক্ষ নিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ রয়েছে কাশ্মীরের সাথে। এ কথা ভারতের মনে রাখা উচিত। বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সাথে আলাপকালে তারা বলেন, যেদিকে লাভ সেদিকে যাবে বিএনপি। বিএনপির সমর্থকরা দলকে ভারতবিরোধী হিসাবে দেখতে চায়। ভারত সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়তে কম লবিং তদবির হয়নি। তবে দিনের শেষে ফলাফল আমাদের পক্ষে নয়। সরকারি দলের প্রতি ঝুঁকে আছেন তারা।

বিশ্ব রাজনীতির প্রভাবশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে বৈরী সম্পর্ক রেখে ক্ষমতায় যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি উপলব্ধি করেই ভারত ইস্যুতে বিএনপি তার অবস্থান বদলেছিলো। এ জন্যই ২০১২ সালে খালেদা জিয়ার ভারত সফর। ২০১৫ সালের জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে বেগম খালেদা জিয়ার একান্ত বৈঠকের পর দলে ভারতবান্ধব নীতি জোরালো হয়। বিএনপি ভারতবিরোধী অবস্থান থেকে সরে এসে দেশটির সাথে গভীর সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্ব দেয়। দলটির পক্ষ থেকে ভারতবিরোধিতার নীতি থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা দেয়া হয় আনুষ্ঠানিকভাবেই। বিএনপির এই সুসম্পর্ক গড়ার অভিপ্রায় ও আদতে তাদের চাওয়া পাওয়ার ব্যবধান বাড়তে থাকায় ক্রমশ: সেই অবস্থা ফিকে হয়ে আসে। চীনের প্রেসিডেন্টের সাথে বেগম খালেদা জিয়ার বৈঠকের পর এখন অনেকটা আত্মবশ্বাসী হয়ে উঠেছে দলের নেতারা। ভারতমুখী অবস্থান পরিবর্তন করছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে আরও গভীর সম্পর্ক গড়তে নতুন করে তত্পরতা শুরু করেছে দলটি। রামপাল বিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতা করে সংবাদ সম্মেলনে বেগম খালেদা জিয়ার মুখে ভারতবিরোধিতার বিষয়টি উঠে আসে। পর্যায়ক্রমে দলের সিনিয়র নেতারাও সভা সেমিনারে প্রকাশ্যেই ভারতবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন। বিশেষ করে উরি কান্ডে পাক-ভারত উত্তেজনার পটভূমিতে ভারতের পক্ষে বাংলাদেশ সরকার অবস্থান ঘোষণার পর কাশ্মীর ইস্যুতে বিএনপি সোচ্চার হয়। কাশ্মীরের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দেন দলের নেতারা। বিএনপি নেতারা বলছেন, ভারত আন্তরিক হলেই আওয়ামী লীগ সরকার দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে। তবে তারা সে ব্যাপারে আন্তরিক নন।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান (অব.) বলেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করা ভারত বিরোধিতা নয়। আমরা চাই ভারত আমাদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করবে। পাশাপাশি আমাদের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে। যেভাবে ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রেখেছিলো। তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক ঐতিহাসিক। মাঝে একবার একটু সমস্যা হয়েছিলো। তা কেটে গেছে। এখন সম্পর্ককে আমরা নতুন মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার চেস্টা করছি। বিএনপির সাথে চীনের এখন সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক বিরাজ করছে।

এদিকে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু অভিযোগ করেছেন, ভারত বাংলাদেশের গণতন্ত্র হত্যার সহযোগিতা করছে। তিনি বলেন, ভারত যেমন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহযোগিতা করছিলো ঠিক একইভাবে গণতন্ত্র হত্যার জন্য সহযোগিতা করছে। এই অনির্বাচিত সরকারকে মদদ দিচ্ছে। বিশ্বের কোন দেশ এই সরকারকে স্বীকৃতি না দিলেও ভারত দিচ্ছে। এটা দেশের মানুষ পছন্দ করে না।