ওষুধ জীবনরক্ষাকারী অন্যতম উপাদান। ওষুধ এতোই জরুরি উপাদান যে, রোগাক্রান্ত ব্যক্তির জন্য এটি ভিন্ন গত্যন্তর নেই। ওষুধ আর দশটা পণ্যের মতো নয়। ওষুধের মূল্য দেশের বাজারে ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গার প্রধান প্রতিবেদনে প্রকাশ, ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন। ইচ্ছামতো ওষুধের দাম বাড়াচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ নেই ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের। এর মধ্যে নিম্নমান ও ভেজাল ওষুধের ছাড়াছড়ি তো আছেই। কোনো কারণে ওষুধের দাম বেড়ে গেলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিক্রেতা কিংবা ভোক্তাদের এর কারণ জানানো হয়। কিন্তু আমাদের দেশে উৎপাদনকারী কোম্পানি ইচ্ছামতো ওষুধের দাম বাড়িয়ে থাকে। তাদের তরফে এ জন্য ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের কোনো নজির নেই। ওষুধের ক্রমাগত দাম বৃদ্ধির পরও ওষুধ প্রশাসন নির্বিকার এমন অভিযোগ বারবার উত্থাপিত হলেও তাদের নির্বিকারত্ব কাটছে না। এমন অভিযোগও রয়েছে যে, কোম্পানিগুলোর কাছে ওষুধ প্রশাসন জিম্মি হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে ওষুধ বিক্রেতা ফার্মেসি মালিক সংগঠনের তরফে বলা হয়েছে, গত এক দেড় মাসে ৬০ থেকে ৯০ ভাগ ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে। এজন্য প্রায়ই ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটছে।
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর সূত্রে প্রকাশ, ১৯৯৪ সালে তৎকালীন সরকার ওষুধের দাম বৃদ্ধিতে কোম্পানিকে ক্ষমতা প্রদান করে। এক্ষেত্রে অধিদফতরের শুধু রয়েছে ভ্যাট প্রদানের সার্টিফিকেট দেয়ার ক্ষমতা। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের অভিমত এ কারণেই কোম্পানিগুলো ইচ্ছামতো ওষুধের দাম বাড়ানোর সুযোগ নিচ্ছে, তাদের এও অভিমত, এদেশের মতো ওষুধ নিয়ন্ত্রণে এমন অব্যবস্থাপনা আর কোথাও নেই। সম্প্রতি দফায় দফায় যেসব রোগের ওষুধের দাম বেড়েছে এর মধ্যে রয়েছে ভায়াবেটিস, স্নায়ুরোগ, গ্যাস্ট্রিক, হদরোগ ছাড়াও ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম গ্রুপের ওষুধের দাম। ওষুধের প্যাকেটে উৎপাদনের পর যে মূল্যের উল্লেখ রয়েছে পরে তা আবার সিল মেরে বাড়ানো হয়েছে এমন দৃষ্টান্ত রয়েছে অনেক। ওষুধের বাজারে যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে তা ভোক্তাদের জন্য অসহীয় হয়ে পড়েছে। ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য আশু কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। ওষুধের দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে কোম্পানির একক ক্ষমতার বিষয়েও নতুন করে ভাবার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। একই সাথে ভেজাল, নিম্নমানের ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের ছড়াছড়ির ব্যাপারেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া অত্যন্ত জরুরি। এসব ক্ষেত্রেই ওষুধ প্রশাসনকে শক্তিশালী ও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। ওষুধ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনায় যে হ-য-ব-র-ল অবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে এর নিরসন ঘটানো আশু জরুরি। সার্বিক ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি জবাবদিহিতার আওতায় আনার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা ছাড়া উপায় নেই। শুধু জেনেরিক নামের ওষুধের দামই নয় বাণিজ্যিক নামের ওষুধের দামও ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরকে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা দরকার।