বাংলাদেশের মাটি সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করতে দেবো না

আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতি শেখ হাসিনা

 

স্টাফ রিপোর্টার: আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ ও ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার রোডম্যাপ ঘোষণা করে বলেছেন, দারিদ্র্য বলে বাংলাদেশে আর কিছুই থাকবে না। দারিদ্র্য শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা হবে। এ জন্য সংসদ সদস্যসহ তৃণমূল পর্যায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীকে সঠিক তালিকা প্রণয়নের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে চিহ্নিত করুন কতজন দুঃস্থ, হতদরিদ্র, নিঃস্ব-রিক্ত, ছিন্নমূল, বয়োবৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও গৃহহারা মানুষ আছে। আমরা সবাইকে বিনা পয়সায় ঘর করে দেবো, ঠিকানা করে দেবো। যাতে তারা ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারে। সঠিক তালিকা করতে পারলে আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি, দেশে আর কেউ দরিদ্র থাকবে না। গতকাল শনিবার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দেশের প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বর্ণাঢ্য এ সম্মেলনে সারাদেশ থেকে আগত হাজার হাজার কাউন্সিলর, ডেলিগেট, বিদেশি অতিথি, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা অংশ নেন। বিশ্বের ১২টি দেশ থেকে আসা ৫৫ জন বিদেশি অতিথিও সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী তার ৪০ মিনিটের বক্তৃতায় আরও বলেন, বাংলাদেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হবে। ইতোমধ্যে দারিদ্র্যমুক্তির পথে যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ। কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষে কোনো বৈষম্য থাকবে না। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। বর্তমানে দেশে ৭৮ শতাংশ মানুষ বিদ্যুত সুবিধা ভোগ করছে। আগামীতে শতভাগ মানুষ বিদ্যুত পাবে, সবার ঘরে জ্বলবে আলো। তিনি আরও বলেন, দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো উন্নত করা হবে। অর্থনীতিতে আরো গতিশীল, প্রবৃদ্ধি ৮ ভাগে উন্নীত, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের দেশ। প্রতিটি খাতে যাতে উন্নয়ন হয় সেজন্য ব্যাপক কার্যক্রম চলছে। ক্ষুদ্র ঋণের পরিবর্তে ক্ষুদ্র সঞ্চয় করে দারিদ্র্য দূর করতে আমরা সফল হচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সেতুবন্ধন হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তার দল ও সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরে বলেন, আমাদের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমরা জিরোটলারেন্স নীতিতে অটল। আমরা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদকে কখনোই প্রশ্রয় দেবো না। এদেশের ভূ-খণ্ড কেউ কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করতে পারবে না। প্রতিবেশী দেশে সন্ত্রাসবাদ চালাতে কাউকে আমাদের দেশের মাটি ব্যবহার করতে দেয়া হবে না।

শত চেষ্টা করেও আমাকে দেশে ফেরা ঠেকাতে পারেনি: প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর অবৈধভাবে মার্শাল ল দিয়ে ক্ষমতা দখলকারীরা আমাকে দেশে আসার অনুমতি দেয়নি। প্রায় ৭টি বছর আমাদের দু বোনকে রিফিউজি হিসেবে কাটাতে হয়েছে। সে সময় ক্ষমতাসীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী তার দেশে আমাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। ১৯৮১ সালে আমার অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর তারা শত চেষ্টা করেও আমাকে দেশে ফেরানো ঠেকাতে পারেনি। আমি গণমানুষের সমর্থনে বাংলাদেশে ফিরে আসি। আওয়ামী লীগই আমাকে সভাপতি করে দেশে আসার সুযোগ করে দিয়েছিলো। এ জন্য সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। জাতির পিতার হত্যকাণ্ডের ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন। এ সময় তিনি বলেন, আমরা দু বোন বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যাই। কিন্তু সব হারানোর ব্যথা-বেদনা যে কী কষ্টের, তা আমরা সব সময় অনুভব করি। কিন্তু দেশে ফেরার পর দলের নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর মধ্যেই আমি ফিরে পেয়েছিলাম আমার বাবা, মা ও ভাইদের। তাদের ভালবাসা ও স্নেহই আমাকে সাহস যুগিয়েছে, দেশের জন্য কাজ করার উত্সাহ পেয়েছি। তিনি বলেন, আমাদের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা আত্মত্যাগ, শত আঘাত ও শত ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে এই সংগঠনকে ধরে রেখেছে। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাই আওয়ামী লীগকে ধরে রেখেছে। তারাই এ দলের প্রাণ।

মানুষ যা কিছু পেয়েছে তা আওয়ামী লীগের কাছ থেকে: শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীকার থেকে স্বাধীনতা, ভাষার মর্যাদা, সামরিকতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে উত্তর, উন্নয়ন-সমৃদ্ধি দেশের মানুষ যা কিছু পেয়েছে তা আওয়ামী লীগের কাছ থেকেই পেয়েছে। আওয়ামী লীগ জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে বাংলাদেশে সকল অর্জন এনে দিয়েছে। আজকের বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আর আওয়ামী লীগের রাজনীতিই হচ্ছে জনগণের জন্য, জনগণের কল্যাণে। আর এ কাজটা করতে পারলে বাংলাদেশ দারিদ্র্যমুক্ত হবে। বাংলাদেশে দারিদ্র্য বলে কিছু থাকবে না। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমরা দেশ চালাচ্ছি। ২০০৮ সালে দেশের মানুষ আমাদের ভোট দেয়, ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পরে দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করেছি, দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছি।

দারিদ্র্যমুক্তির পথে যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর দেশে হত্যাকাণ্ডের রাজনীতি শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন নিয়ে এদেশকে স্বাধীন করেছিলেন তা ধূলিসাত করে দেয়া হয়। অবৈধ দখলকারীরা গণতন্ত্রের বদলে সামরিকতন্ত্র উপহার দেয়। দেশের মানুষ দীর্ঘ ২১টি বছর হয়েছে শোষিত-বঞ্চিত। ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা ফের দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফিরিয়ে আনি। আজ দারিদ্র্যমুক্তির পথে যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ। যে শিক্ষা পিতার (বঙ্গবন্ধু) কাছ থেকে পেয়েছি, সেই শিক্ষা নিয়ে দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। তিনি আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে নেতা-কর্মীদের নিরলসভাবে কাজ করারও আহ্বান জানান।

ডিজিটাল বাংলাদেশ আর স্বপ্ন নয়: প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে আর কোনো দরিদ্র যেন না থাকে সেজন্য ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পরই আমরা বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, দুস্থ নারীদের জন্য ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ বিভিন্ন ভাতার প্রবর্তন করি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর কার্যক্রম আমরা চালু করি। বর্তমানে ১৪৫টি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর কর্মসূচি আমরা চালিয়ে যাচ্ছি, যার সুফল এদেশের মানুষ পাচ্ছে। ৫৫ লাখ ৫৫ হাজার মানুষ এই ভাতা পাচ্ছে। তাছাড়া যারা একবারে অনগ্রসর যেমন হিজড়া, বেদে, হরিজন সম্প্রদায়-তাদেরকে আমরা ৬শ টাকা করে মাসিক ভাতা দিচ্ছি। চা শ্রমিকদের জন্য অনুদান দিচ্ছি। এভাবে আমরা সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের সহযোগিতা করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরাই প্রথম দেশে খাদ্যোত্পাদন বাড়িয়ে দেশে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। এটা সম্ভব হয়েছিল কোনো জামানত ছাড়া স্বল্প সুদে ১৯৯৮ সাল থেকে বর্গা চাষিদের আমরা কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ দিতে শুরু করি। কৃষিপণ্যের দাম কমিয়ে কৃষকদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসি। স্বল্পমূল্যে সার ও কীটনাশক দেওয়ার ব্যবস্থা করি। ১০ টাকায় একজন কৃষক যেন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে সেই ব্যবস্থা নেই এবং সেই সাথে ৯৮ লাখ ৫৪ হাজার ৬০৬ জন কৃষক ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলে সরাসরি ভর্তুকির টাকা গ্রহণ করতে পারছেন। ২ কোটি ৭৫ লাখের বেশি কৃষককে কৃষি উপকরণ কার্ড দিয়েছি। এভাবেই আজকে দেশে আমরা ৩ কোটি ৯০ লাখ মেট্রিক টনের অধিক খাদ্য উত্পাদন করতে পারছি। দরিদ্রদের মধ্যে বিনা পয়সায় খাদ্য বিতরণ করে যাচ্ছি। একটি লোকও যেন বিনা খাদ্যে কষ্ট না পায় সেটা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। তিনি বলেন, বাংলাদেশের যোগাযোগের প্রতিটি সেক্টর সড়ক, সেতু, রেল, নৌপথ-বিমানের যেন উন্নতি হয় তার ব্যাপক কার্যক্রম আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মানুষকে স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প গ্রহণ করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ কিন্তু আর স্বপ্ন না। সমগ্র বাংলাদেশে ইন্টারনেট সার্ভিস আছে। আমরা টেলিফোন- মোবাইল ফোন সকলের হাতে হাতে তুলে দিয়েছি। কৃষকসহ সাধারণ জনসাধারণের তথ্য প্রাপ্তির জন্য বিভিন্ন বিনামূল্যে সার্ভিস চালু করেছি। ইতোমধ্যে ৪৯৯টি কৃষি তথ্য যোগাযোগ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ৭২৭টি কৃষি পরামর্শ কেন্দ্র আমরা স্থাপন করেছি। সমগ্র বাংলাদেশে ৫ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ই গভার্নেন্স চালু করেছি। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছি। বেকার যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংক করে দিয়েছি। সেখান থেকে যুবকরা বিনা জামানতে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিয়ে নিজস্ব কর্মক্ষেত্র গড়ে তুলে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছে। যারা ভূমিহীন তাদের বিনা পয়সায় ঘরবাড়ি করে দিচ্ছি। ইতোমধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ১ লাখ ৪০ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। দরিদ্র বয়োবৃদ্ধ, দুস্থ মহিলাদের জন্য ‘শান্তি নিবাস’ তৈরি করে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ১৯৩ কোটি বিনামূল্যে বই বিতরণসহ সরকার প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা খাতে বৃত্তি, উপ-বৃত্তি প্রদানসহ মাল্টিমিডিয়া ‘ক্লাসরুম তৈরি করা হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৬ হাজার ৪৩৮টি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র থেকে ৩০ রকমের ওষুধ বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। যার ফলে আজকে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার কমেছে। আমরা একলাখ পরিবারের মধ্যে স্বাস্থ্যকার্ড বিতরণের পরিকল্পনা নিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের সময় উপস্থিত থেকে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনকে সফল করার জন্য সকল রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিদেশি অতিথিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। সময় স্বল্পতার কারণে অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের বক্তব্যের সুযোগ দিতে না পারার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আজ রোববার আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় অধিবেশনে সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের বক্তব্য শুনবো।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ১০টা ৫ মিনিটে সম্মেলনস্থলে পৌঁছান। প্রথমে তিনি বর্ণিল সাজে সজ্জিত ও কানায় কানায় পরিপূর্ণ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশাল কাঠের তৈরি নৌকা সদৃশ্য মঞ্চে উঠেন। এ সময় সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হাজার হাজার ডেলিগেট, কাউন্সিলর ও অতিথিরা তুমূল করতালি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে পুরো এলাকা। মঞ্চে উঠেই বিশাল মঞ্চের দু পাশে হেঁটে হেঁটে হাতনেড়ে কাউন্সিলর, ডেলিগেটস, আমন্ত্রিত অতিথিদের শুভেচ্ছা জানান এবং হাত নেড়ে শুভেচ্ছার জবাব দেন।

প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হয়েই সোজা গিয়ে দাঁড়ান মঞ্চের সামনে ডানদিকে জাতীয় পতাকার স্ট্যান্ডের পাশে। কাছেই আওয়ামী লীগের দলীয় পতাকার স্ট্যান্ড, সেটির পাশে দাঁড়িয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। আগে থেকেই ৭৩টি সাংগঠনিক জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একেকটি স্ট্যান্ডের কাছে দাঁড়িয়ে যান। ঠিক মঞ্চের সামনে ততক্ষণে স্থান করে নিয়েছেন লাল-সবুজে সজ্জিত নারী-পুরুষ শিল্পীরা। ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি…..’ জাতীয় সঙ্গীতের তালে তালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় পতাকা এবং সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফসহ ৭৩টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এরপরই প্রধানমন্ত্রীসহ জেলার নেতারা রঙিন বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়ানোর পর আনুষ্ঠানিকভাবে দু দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

উদ্বোধনের পর দেশি-বিদেশি আমন্ত্রিত অতিথি ও কাউন্সিলর-ডেলিগেটরদের সামনে সাংস্কৃতিক উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানে নিয়ে আসা হয় বিশেষ দ্যোতনা। পরে শুরু হয় ‘আলোর পথে যাত্রা’ শীর্ষক গীতি নৃত্যানুষ্ঠান। এ অংশ পরিচালনা করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী ও দলের সাংস্কৃতিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান নূর। এরপর সাংস্কৃতিক উপস্থাপনার অংশ হিসেবে প্রথমেই গান ‘এখন সময় বাংলাদেশের… এখন সময় আমাদের’। এ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনা। যা শেষ হয় জয় বাংলা স্লোগানে। এরপর একে একে ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’, ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’, ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত লাল’ আর মোরা একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠে..’ দেশাত্মবোধক গানের তালে তালে নৃত্যানুষ্ঠান। এরপর শুরু হয় সম্মেলনের মূল পর্ব। প্রধানমন্ত্রী তার প্রারম্ভিক সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। এ সময় তিনি অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব দেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। এরপর প্রথমেই শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন দলের দফতর সম্পাদক আবদুল মান্নান খান। এরপর স্বাগত বক্তব্যে রাখেন সম্মেলনের অভ্যর্থনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি সকলের সামনে আয়োজনের নানা দিক তুলে ধরেন। এরপর সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট উপস্থাপন করেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এরপর সম্মেলনে উপস্থিত ১২টি দেশ থেকে আসা ৫৫ বিদেশি অতিথিকে পরিচয় করিয়ে দেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মণি।

পরিচয়পর্ব শেষে সম্মেলনের সফলতা কামনা করে ভারতের শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিক বিমান বসু, গোলাম নবী আজাদ, সাবেক মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল কুমার মহন্ত, যুক্তরাজ্যের জেনি রেথবনসহ ১৫ জন বিদেশি অতিথি। এরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতির ভাষণ প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যে শেষে সম্মেলন ২ ঘণ্টার জন্য মুলতবি ঘোষণা করেন। বিকাল সাড়ে ৩টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হয়। সেখানে অনেক কাউন্সিলর বক্তব্য রাখেন। সাড়ে ৫টার দিকে সম্মেলন আজ রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে আগত প্রায় ৩০ হাজার অতিথিকে মধ্যহ্নভোজে আপ্যায়িত করা হয়। সন্ধ্যায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল মঞ্চে পরিবেশন করা হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে পুরো সোহরাওয়ার্দী ও এর আশপাশ ছিল লোকে লোকারণ্য। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে এক জাগরণের সৃষ্টি হয়। সকাল ৭টা থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল প্যান্ডেলে আসতে থাকেন কাউন্সিলর ও ডেলিগেটররা। সকাল ৯টার মধ্যেই কানায় কানায় ভরে ওঠে প্রায় ৩০ হাজার লোকের ধারণক্ষমতার সুবিশাল প্যান্ডেল। ৩৫ বছর ধরে সভানেত্রীর দায়িত্বপালনকারী শেখ হাসিনা আসার পরও অনেক কাউন্সিলর, ডেলিগেটর ও বিভিন্ন পেশার আমন্ত্রিত অতিথিদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে প্যান্ডেলে প্রবেশ করতে দেখা যায়। প্যান্ডেলে জায়গার সাংকুলান না থাকায় প্যান্ডেলের বাইরে মাইকের সামনে দাঁড়িয়েই হাজার হাজার নেতাকর্মীকে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করতে দেখা যায়। এবারের সম্মেলনের মূল স্লোগান ছিলো ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার, এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার।

সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, বিকল্পধারার সভাপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মহাসচিব মেজর (অব.) এমএ মান্নান, বিএনপিরই এক সময়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা, জাসদের (রব) আ স ম আবদুর রব, সিপিবির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনজুরুল আহসান খান, সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (এ) প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।

১৪ দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জাসদের একাংশের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, জাসদের আরেক অংশের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, মঈনউদ্দিন খান বাদল এমপি, জাতীয় পার্টি (জেপি)র সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম, তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, ডা. অসিত বরণ রায় প্রমুখ।