শেষে নিজ গ্রামে দাফন সম্পন্ন : গ্রামজুড়ে উত্তেজনা
আলমডাঙ্গা ব্যুরো: কুষ্টিয়ার মিরপুর আমবাড়িয়ার দুখুর লাশের ময়নাতদন্ত শেষে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের সদস্যদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। গত সোমবার আলমডাঙ্গার পাইকপাড়া গ্রামের বিলের ঢাল নামকস্থান থেকে জাহাঙ্গীর আলম দুখু মিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা পুলিশের। এদিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমবাড়িয়া গ্রামে আওয়ামী লীগ ও জাসদের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে গ্রামবাসি।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম পাইকপাড়া বিলের ঢাল থেকে উদ্ধারকৃত মিরপুর উপজেলার আমবাড়িয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম দুখুর লাশ ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল মঙ্গলবার নিজ গ্রামে দাফন করা হয়েছে। গতকাল চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে ময়না তদন্ত শেষে দুপুরে লাশ নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। জানাযা শেষে বেলা সাড়ে ৩টায় গ্রামের গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এদিকে লাশ উদ্ধারের দুদিন অতিবাহিত হলেও এখন কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি। সীমানা জটিলতা, জাসদ-আওয়ামী লীগ ক্ষমতার দাপটের কারণেই মূলত এখনও মিরপুর কিংবা আলমডাঙ্গা থানায় কোনো মামলা দায়ের হয়নি বলে নিহতের পরিবার জানিয়েছেন। কুষ্টিয়া আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করা হবে বলে আভাসও দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, আলমডাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ আকরাম হোসেন বলেছেন, আমাদের কোনো সমস্যা নাই। এজাহার দায়ের করতে নিহতের পরিবারকে বলা হয়েছে। তারা কিছু সময় চেয়েছেন। আত্মীয়-স্বজনের সাথে আলোচনা করে করবেন বলে জানিয়েছেন। গ্রামবাসি জানায়, গত ইউপি নির্বাচনে নিহত যুবক দুখু বর্তমান আমবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মিলনের পক্ষে ছিলেন। এ নিয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান টুটুলের সাথে তার দ্বন্দ্ব ছিলো। ভোটের এই দ্বন্দ্ব এক সময় সংঘর্ষে রুপ নিয়েছিলো। সে সংঘর্ষের মামলার আসামি হিসেবে দুখুকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছিলো। জেলহাজতমুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরলে গ্রামে শত্রুতার জন্য আর থাকেন নি। বেশ কয়েক মাস তিনি বড়বোন-জামাইয়ের বাড়ি একই উপজেলার মেকুরপুর অবস্থান করছিলেন। গত প্রায় ১ মাস পূর্বে তিনি আবারও বাড়ি গিয়েছিলেন। সংবাদ পেয়ে তার প্রতিপক্ষরা রাতে বাড়িতে হামলা চালায়। কোন মতে জান বাঁচিয়ে তিনি পুনরায় বোন-জামাই বাড়ি গিয়ে আশ্রয় নেন। কিন্তু তাও বাঁচতে পারলেন না। নিহত দুখুর মামা আবু বকর সিদ্দিকী জানান, এক মাস আগে বাড়ি থেকে প্রতিপক্ষের তাড়া খেয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর দুখুর প্রতিপক্ষ একই গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে ডাক্তার সাবু ও মৃত নহর মালিথার ছেলে ঝন্টু তাকে হত্যার জন্য প্রকাশ্যে পুরস্কার ঘোষণা করে। এবং সেই রাতে একই গ্রামের আলা, আনুর নেতৃত্বে তার বাড়িতে হামলা করা হয়েছিল ডাক্তার সাবুর নির্দেশে। এই অপচক্রই দুঃখুকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে বলে তাদের দাবি।
অন্যদিকে, গ্রামে গুঞ্জন উঠেছে ওই রাতে আমবাড়িয়া গ্রামের জসিম উদ্দিন বুড়ো তাকে ফোন করে ডেকে নিয়ে যায়। বুড়ো ও দুখু দুজনই বর্তমান চেয়ারম্যান মিলনের কাছের মানুষ। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তাহলে প্রতিপক্ষ চেয়ারম্যান প্রার্থীর লোকজনই যদি তাকে হত্যা করে তাহলে বুড়ো তাকে ডেকে নিয়ে যাবে কেনো? প্রতিপক্ষ সাবেক চেয়ারম্যান টুটুল বলেন, বর্তমান জাসদ সমর্থীত চেয়ারম্যান মিলন গত সাত মাস যাবত এলাকা ছাড়া। সে বাড়িতে থাকে না। এই সাত মাস ধরে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। দুখুকে তার নিজের লোক বুড়োকে দিয়ে ডেকে নিয়ে গিয়ে হত্যা করিয়ে নিরপরাধ মানুষকে ফাঁসানোর অপচেষ্টা করছে বলে তিনি দাবি করেন। তিনি আরো বলেন ঝন্টু একজন সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। সে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। আমবাড়িয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের রাজনীতি শেষ করে দিতে চেয়ারম্যান মিলন নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছে। সেই হীন তৎপরতারই অংশ দুখু হত্যাকাণ্ড।