স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে ১০ জঙ্গির আত্মসমর্পণ

 

স্টাফ রিপোর্টার: আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর্যুপরি অভিযানের মুখে কেঁপে উঠেছে জঙ্গিদের ভীত। এতোদিন যেসব জঙ্গি কঠোর অবস্থানে থেকে হামলার পরিকল্পনা করেছে এখন তাদেরই অনেকে আত্মসমর্পন করতে যোগাযোগ করছে পুলিশে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কাছে এরই মধ্যে আত্মসমর্পন করেছে ১০ জঙ্গি। তাদের প্রত্যাশা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় তারা ফিরে যেতে পারবে স্বাভাবিক জীবনে। এর আগে বগুড়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পন করে দুই জঙ্গি। নতুন করে আরও কয়েকজন আত্মসমর্পন করবে বলে যোগাযোগ করছে এমন তথ্য জানালেন কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম। কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত জঙ্গি হামলাগুলোর ও জঙ্গিদের গ্রেফতারের পর তদন্তে আমরা দেখেছি আজিমপুর অভিযানে আত্মঘাতী হয়ে নিহত ডাচ বাংলা ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা তানভীর কাদরী উত্তরার নিজের ফ্ল্যাট বিক্রি করে প্রায় দেড় কোটি টাকা সংগঠনের তহবিলে জমা দিয়েছেন। আবার বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের চিকিত্সক ডা. রোকনুদ্দীন খন্দকার জঙ্গিদের তহবিলে দিয়েছেন ৬০ লাখ টাকা।’ এই চিকিত্সক এখন পুরো পরিবার নিয়ে দেশের বাইরে পালিয়ে আছেন। তুরস্ক হয়ে তিনি সিরিয়া গেছেন  বলে গোয়েন্দাদের ধারণা। গুলশানে হলি আটির্জান রেস্তোরায় হামলার আগে জঙ্গিদের এ তহবিল সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া আবুধাবিসহ একাধিক দেশ থেকে জঙ্গিদের অর্থ দেয়ার বিষয়ে তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা।

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘যারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে ফিরে আসছে তাদের নিরাপত্তা দেয়া পুলিশের দায়িত্ব। পাশাপাশি তারা কোন অপরাধ করলে তার বিচারও হবে। তবে কেউ যদি অপরাধকাণ্ডে যুক্ত না হয়ে থাকে বলে প্রমাণিত হয়, তবে তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার ব্যবস্থা করা হবে।’ জানা গেছে, গত কয়েকদিনে যে ১০ জন জঙ্গি আত্মসমর্পন করেছেন তাদের মধ্যে দুই জন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, একজন কলেজছাত্র, একজন মাদরাসা শিক্ষার্থীও রয়েছেন। এরা আত্মসমর্পনের পর পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তারা জঙ্গিদের মতাদর্শে একমত হয়ে তাদের দলে যোগ দিয়েছিলেন। তারা জানান, গুলশানে হলি আর্টিজানে হামলার পর ঈদের দিন শোলাকিয়া ময়দানের অদূরে হামলার ঘটনায় তাদের বিবেক জাগ্রত হয়। তারা নিজেদের ভুল পথে জড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি উপলব্ধি করেন। এর আগে গুলশান হামলায় নিহত জঙ্গি খায়রুলের দুই সহযোগী জঙ্গিবাদ ছেড়ে র্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। তারা হলেন বগুড়ার আব্দুল হাকিম (২২) ও গাইবান্ধার মাহমুদুল হাসান বিজয় (১৭)। এই দুজনই উত্তরাঞ্চলের জেএমবির সদস্য। গত ৫ অক্টোবর র‌্যাব-১২ এর আয়োজনে বগুড়া শহরের শহীদ স্মৃতি মিলনায়তনে জঙ্গি বিরোধী সমাবেশ ও জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে তারা আত্মসমর্পণ করে। তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেয়া ঘোষণা অনুযায়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রত্যেককে পাঁচ লাখ টাকার চেক তুলে দেন। এ সময় আত্মমর্পণকারী দু’জনই নিজেদের ভুল স্বীকার করে বক্তব্য দিয়েছেন। তারা বলেছেন, তারা ভালো হওয়ার সুযোগ নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান।

বগুড়ার আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রশাসন জঙ্গিদের চিহ্নিত করেছে। তাদের সঠিক পথে ফিরে আস? সুযোগ দেয়া হবে। তাতে জঙ্গিরা সঠিক পথে ফিরে না এলে কঠোর হাতে নির্মূল করা হবে। প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিদের পুনর্বাসনের সুযোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা তাদের সুযোগ দিতে চাই। সুযোগ পেয়েও যারা আলোর পথে আসবে না, তাদের নির্মূল করা হবে।’ সরকারের এমন নীতির কারণে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে অনেকেই আত্মসমর্পণ করতে শুরু করেছে, আরও করবে বলে আশা করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।