শিক্ষার্থীর পোষাক এবং শিক্ষকের অমানবিক আচরণ

 

প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পোশাক নিদৃষ্ট করার অন্যতম কারণ হলো- কমলমতি শিক্ষার্থীদের সম মানসিকতা নিয়ে বেড়ে ওঠার পরিবেশ গড়ে তোলা। একই বর্ণের অধিকাংশ অভিভাবকের ক্রয়সামর্থ্যের স্বাচ্ছন্দবোধ নিদৃষ্ট পোশাকে আরো কিছু সুফল আছে। সব সুফলই কুফল হয়ে দাঁড়ায় যখন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক পোশাক প্রশ্নে শিক্ষার্থীর সামনে অমানবিক হয়ে ওঠেন।

চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জ জান্নাতুল মাওয়া আদর্শ মহিলা মাদরাসার ৫ম শ্রেণীর এক ছাত্রী বোরকা পরলেও পায়ে ও হাতে মুজা না পরার কারণে শিক্ষক অমানবিক নির্যাতন করেছেন। তিনি হালকা মারপিটের কথা স্বীকার করে বলেছেন, হাত ও পা মোজা না পরার কারণে শাসন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ঠ এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ সচেতন অভিভাবকদের অধিকাংশই অভিযুক্ত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। পক্ষান্তরে কেউ কেউ মাদরাসা শিক্ষকের পক্ষ নিয়ে ধর্মীয় দৃষ্টিকোনের বিষয়টি সামনে মেলে ধরেছেন। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

আদর্শ মহিলা মাদরসা মানে বুঝতে বাকি থাকার কথা  নয় যে, সেখানে ধর্মীয় অনুশাসনের গুরুত্বটাই বেশি। তাই বলে বোরকা পরা তথা হেজাব নেয়া এক শিশু শিক্ষার্থীকে কি হাত ও পায়ে মোজা না পরার জন্য ওইভাবে মারা যায়? যেভাবে মারা হলে একজন শিশু শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে বিছানায় কাতরায়? দৃশ্য দেখে অন্য শিক্ষার্থীরও আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়ে? দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোন শ্রেনী কক্ষেই যখন বেত দূরাস্ত ভিতিকর মাপকাঠি বা ব্লাকবোর্ড মোছার ডাস্টার নেয়া নিষেধ, সেখানে মুন্সিগঞ্জের ওই আদর্শ মহিলা মাদরাসার একজন শিক্ষক অতোটা অমানবিক হলেন কীভাবে?

অসংখ্য ধর্মের মাঝে অবশ্যই ইসলাম অন্যতম। ইসলাম অর্থাৎ শান্তি। মেরে ধরে বাধ্য করার চেয়ে ইসলামের আদর্শে অনুপ্রাণীত করাটাই কি উত্তম পন্থা নয়? তাছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণের পরিবেশ গড়ে তোলার বদলে যদি ভিতিকর পরিবেশ গড়ে ওঠে, তা হলে আসল উদ্দেশই কি ব্যাহত হয় না? পরিবেশের কারণে পোশাকও যদি অস্বস্তির কারণ হয় তা হলেও কি শিক্ষার্থীকে পরতে বাধ্য করা যায়? এসব বুঝাতেই দরকার প্রশাসনিক পদক্ষেপ।