আলমডাঙ্গা রেলস্টেশন টিকিট কালোবাজারির আখড়ায় পরিণত

 

বাড়তি টাকা দিলেই মেলে টিকিট পাওয়ার বিশেষ চিরকুট বা টোকেন

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা রেলস্টেশন টিকিট কালোবাজারির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এখানে সাধারণ যাত্রীর কেউই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় টিকিট পান না। বাড়তি টাকা দিলেই টিকিট মেলে। তবে এ ব্যাপারে তারা বেশ কৌশল অবলম্বন করেন, যাতে ধরা না পড়েন। নির্ধারিত মূল্য ছাড়া ৫০ থেকে ১শ টাকা দিলেই একটি চিরকুট ধরিয়ে দেয়া হয়। ট্রেন আসার আগ মুহূর্তে ওই চিরকুট দেখালেই টিকিট দিয়ে দেয়া হয় হাতে। তারা বলেন, জায়গা থেকে ম্যানেজ করে দেয়া হলো। দীর্ঘদিন ধরে টিকিট নিয়ে আলমডাঙ্গা স্টেশনে এ ধরনের সিন্ডিকেট করে ব্যবসা চালানো হচ্ছে। দিনের পর দিন এই অরাজক পরিস্থিতি চলায় সাধারণ ট্রেনযাত্রীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন।

চুয়াডাঙ্গার পরেই জেলার বৃহত্তর রেলস্টেশন আলমডাঙ্গা। সব আন্তঃনগর ট্রেনই এখানে যাত্রা বিরতি করে। দীর্ঘদিন ধরে এখানে বেপরোয়াভাবে টিকিট কালোবাজারি হয় বলে ব্যাপক অভিযোগ আছে। এ কারণে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দূর পাল্লার রেলযাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হন। বিপাকে পড়তে হয় ঢাকা, রাজশাহী, সৈয়দপুর ও খুলনামুখী যাত্রীদের। কতিপয় অসাধু কর্মচারীর সহযোগিতায় লাগাতারভাবে টিকিট কালোবাজারি করে চলেছেন স্টেশন মাস্টার শরিফুল ইসলাম ও সহকারী স্টেশন মাস্টার তহিদুল ইসলাম। তারা দুজনই আলমডাঙ্গার স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় তাদের জন্য এ সিন্ডিকেট চালানো খুব সহজ হয়ে উঠেছে। আর টিকিট নিয়ে প্রতিদিনই বিড়ম্বনায় পড়ছেন যাত্রী সাধারণ। স্টেশন মাস্টার কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে দাপটের সাথে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে যাত্রীদের অভিযোগ। ঢাকাগামী আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও চিত্রা এক্সপ্রেসের আলমডাঙ্গায় ৩৫টি করে আসন সংখ্যা থাকলেও যাত্রীরা টিকিট কিনতে গেলে পান না। যেদিনই আর যখনই হোক স্টেশন কর্তৃপক্ষ বলে থাকে টিকিট শেষ হয়ে গেছে। ওই টিকিটের মূল্য ৩৭৫ টাকা হলেও তারা নিয়ে থাকেন ৪২৫ থেকে সাড়ে ৪শ টাকা। আর ঈদ পার্বনে কোনো কোনো যাত্রীর কাছে দুইশত টাকা পর্যন্তও বেশি নিয়ে থাকেন তারা।

অভিযোগকারীরা জানান, রাজশাহী ও খুলনাগামী আন্তঃনগর এক্সপ্রেস কপোতাক্ষ ও সাগরদাড়ী ট্রেনের যাত্রীদের কাছ থেকে ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেশি নিয়ে টিকেট দিয়ে থাকেন তারা। এছাড়া সৈয়দপুর গামী আন্তঃনগর রূপসা এক্সপ্রেস যাত্রীদের কাছ থেকেও একই হারে বাড়তি টাকা নিয়ে টিকেট দেয়া হয়। যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, ৪-৫ দিন আগেও টিকিট নিতে গেলে পাওয়া যায় না। তবে কোনো যাত্রী যদি টিকিটের জন্য খুব আকুতি মিনতি করেন সেক্ষেত্রে বাইরে থেকে ম্যানেজ করে দেয়ার কথা বলে বাড়তি টাকা আদায় করা হয়। এজন্য তারা সরাসরি টিকিট না দিয়ে একটি বিশেষ চিরকুট বা টোকেন হাতে ধরিয়ে দেন। ট্রেন আসার এক ঘণ্টা বা আধা ঘণ্টা আগে গোপনে টোকেন বা চিরকুট দেখালেই টিকিট দিয়ে দেন তারা। একটি সূত্র জানায়, কর্মচারীদের যোগসাজশে স্টেশন মাস্টার ও সহকারী স্টেশন মাস্টার আগেভাগেই নামে-বেনামে সিংহভাগ টিকিটই কম্পিউটার থেকে প্রিন্ট দিয়ে গোপন করে রাখেন। পরে একটা একটা করে বাড়তি টাকা নিয়ে তা বিক্রি করেন। শফিউজ্জামান নামের এক ট্রেনযাত্রী অভিযোগ করে বলেন, টিকিটের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৫০ টাকা বেশি দিয়ে নাম লিখিয়ে সিরিয়াল করে টিকিট নিতে হয়। তিনি বলেন, টিকিট কাউন্টারে টিকিট না পেয়ে ফেরত আসছিলাম এ সময় স্টেশন মাস্টার পেছন থেকে ডেকে বলেন ৫০ টাকা বেশি দিলে বাইরে থেকে টিকিটের ব্যবস্থা করে দেয়া যাবে। বাধ্য হয়েই ৫০ টাকা বেশি দিয়েই টিকিটটি নিয়েছি। ছামাদ নামের অপর এক ট্রেনযাত্রী টিকিট ক্রয় প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আজ পাঁচদিন যাবৎ টিকিটের জন্য ব্যর্থ হয়ে ৫০ টাকা বেশি দিয়ে টিকিট পেয়েছি। এ ব্যাপারে সহকারী স্টেশন মাস্টার তহিদুল ইসলাম অভিযোগ আংশিক স্বীকার করে বলেন, আমরা বেশি টাকা নিই না। অন্য জায়গা থেকে টিকিট ম্যানেজ করে দিই বলে দু বিশ টাকা বেশি নিয়ে থাকি। আসন স্বল্পতার কারণে যাত্রীদের সুবিধার্থে এটা করি। যাত্রীরা খুশি হয়েই তা দেয়। স্টেশন মাস্টার শরিফুল ইসলাম সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, একটা অভিযোগও সঠিক নয়। সরকারি বিধি বিধান মেনেই টিকিট বিক্রি করা হয়। কারোর কাছ থেকে একটি টাকাও বেশি নেয়া হয় না।