কাঁদামাটির কাজ শেষ : ছোঁয়ানো হচ্ছে রং তুলির শেষ প্রলেপ

 

মহাসিন আলী: আর মাত্র কয়েকদিন পরেই হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা। এ উৎসবকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন মেহেরপুরের প্রতিমা কারিগররা। কোনো মণ্ডপে চলছে কাঁদামাটির কাজ। আবার কোথাও ছোঁয়ানো হচ্ছে রং তুলির প্রলেপ। পূজা অর্চনার মাধ্যমে অশুরকে নিধণ করে শুভ শক্তির উদয় হবে বলে মনে করেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তারা।

শিশির ভেজা ঘাসে শিউলি ফুল, নীল আকাশে শাদা মেঘের ভেলা, আর শুভ্র কাশ ফুল বলে দেয় এখন শরৎ। শরৎ মানেই শারদীয় উৎসব, আলোর উৎসব, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচাইতে বড় উৎসব। ওসুরকে নিধন করে শুভশক্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতি বছরে পালিত হয় শারদীয় দুর্গোৎসব।

৩০ সেপ্টেম্বর চণ্ডিপাঠের মধ্যদিয়ে মহলয়ার দেবী পর্বের শুরু। মূল পর্ব শুরু হবে ৭ অক্টোবর মহা ষষ্ঠীর মাধ্যমে। ১১ অক্টোবর শুভবিজয়া দশমীর মধ্যদিয়ে শেষ হবে এ উৎসব। হিন্দু সম্প্রদায়ের মতে এবারে দেবী দুর্গা আসবে ঘটকে আর গমন করবে ঘটকে। পঞ্জিকার মতে এবার দেবীর আগমন ও গমন দুটিই ভালো নয়। দেশের জন্য অকল্যাণ বয়ে আনতে পারে। তবে রামচন্দ্রের মতো পূজা অর্চনার মাধ্যমে দেবী দুর্গাকে খুশি করে অশুর নিধনের মাধ্যমে শক্তি জাগ্রত করে শুভ শক্তির সূচনা করতে পারলেই দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে। এবার তিন উপজেলায় ৩৪ টি পূজা মণ্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়েছে।

হিন্দু ধর্মাবলম্বী শাশ্বত নিপ্পন জানান, সাধারণত একইভাবে মায়ের আগমন ও প্রস্থান হয়না। এবার সেটিই ঘটেছে। এটি একটি বিরল ঘটনা। শাস্ত্রেও বলা হয়েছে এর কারণে দেশে ঝঞ্জা ও দূর্যোগময় হয়ে উঠতে পারে। তিনি আরও বলেন, সকল সম্প্রদায়ের সম্প্রীতির বাংলাদেশের ঐক্যকে বিনষ্ট করার জন্য কিছু অশূর মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। রামচন্দ্রের পূর্জা অর্চনার মাধ্যমে দেবীকে খুশি করতে পারলেই সমস্ত বিপদ আপদ থেকে দেশকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। আর এ কয়েটি দিন তারা অশুভ শক্তিকে ধ্বংসের জন্য মায়ের কাছে প্রার্থনা করবেন।

তপন কুমার জানান, ধর্ম যার যার; উৎসব সবার। প্রতি বছর যেভাবে সকল ধর্মের মানুষ একসাথে হৈ হৈল্লড় ও  আনন্দর মাধ্যমে পূজার দিনগুলো পালন করেন। এবারও তাই করবেন।

এদিকে প্রতিমা তৈরির কারিগর উজ্জ্বল বিশ্বাস জানান, কাদা মাটির কাজ শেষে। চলছে প্রতিমাকে সুসজ্জিত করার কাজ। রং তুলির আঁচড়ের মাধ্যমে প্রতিমাগুলোকে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। সবার কাছে আকর্ষণীয় করার জন্য সব ধরনের চেষ্টা তারা করছেন। আবার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পূজা কমিটির কাছে প্রতিমাগুলো তুলে দিতে হবে। সেই লক্ষে রাত দিন পরিশ্রম করছেন তারা। তিনি আরও জানান, দুর্গোৎসবের সময় প্রচুর কাজ থাকে তাদের হাতে। কিন্তু সময়টি পেরিয়ে গেলে তাদের আর কোন কাজ থাকে না। শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য সরকারের কাছে সহযোগীতা চাইলেন তারা।

মেহেরপুর পূজা উদ্যাপন কমিটির সহসভাপতি অ্যাড. পল্লভ ভট্টাচার্য জানান, এটি শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উৎসব নয়, সকল সম্প্রদায়ের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উৎসব পালন করে। সর্বস্তরের মানুষ যোগ দেয় এ উৎসবে। এখানে কোন ধর্মীয় ভেদাভেদ থাকেনা। কোন দুর্ঘটনা ছাড়ায় এ জেলায় প্রতি বছর দুর্গোৎসব পালন হয়ে থাকে। এ বছরও কোন অপ্রিতকর ঘটনা ছাড়ায় এ উৎসব পালন হবে বলে মনে করেন তিনি। এবং আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।

পুলিশ সুপার আনিছুর রহমান জানান, দুর্গা উৎসবককে কেন্দ্র করে কড়া নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রতিটি মণ্ডপে আনসার, পুলিশসহ ১৩ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়াও প্রতিটি থানায় মণ্ডপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শাদা পোশাকের পুলিশের পাশাপাশি ডিবি ও মোবাইল টিম থাকবে। এছাড়া ৫ জন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। কোন অপ্রীতিকর ঘটনায় ছাড়ায় শারদীয় দুর্গা উৎসব পালন হবে বলে আমরা আশা প্রকাশ করেন।