ডাকাত দলের তাণ্ডব এবং পুলিশের গাফিলতি

 

‘পুলিশ ওখানে প্রতিরাতেই থাকে, যেরাতে থাকলো না-সেই রাতেই ডাকাতদল তাণ্ডব চালালো।’ গতপরশু সন্ধ্যার পর চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জ-গাংনী সড়কের নতিডাঙ্গা মধুখালী মাঠে দুর্ধর্ষ ডাকাতি সংঘটিত হলে স্থানীয়দের অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে উক্ত মন্তব্য করেন। পুলিশ সুপার অবশ্য বলেছেন, ‘স্থানীয় ফাঁড়ি পুলিশের কোনো প্রকারের গাফিলতি থাকলে অবশ্যই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ এ প্রতিশ্রুতির প্রতিফলনে গঠন করা হোক তদন্ত কমিটি। যদিও পুলিশের বিরুদ্ধে পুলিশি তদন্তের চেয়ে সত্য উন্মোচনে বাস্তব সম্মত পদক্ষেপই শ্রেয়।

না, গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পুলিশ ডাকাতি হওয়া টাকার ছিটেফোটাও উদ্ধার করতে পারেনি। সন্দেহভাজন একজনকে তার বাড়ি থেকে ধরে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে সূত্র জানালেও পোলতাডাঙ্গা গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় স্বস্তি মেলেনি। বরঞ্চ বহুগুণে বেড়েছে ক্ষোভ। ডাকাতদলের ধারালো অস্ত্রের উপর্যুপরি কোপে নিহত একজন গরু ব্যবসায়ীর মৃতদেহ ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল নিজ গ্রামে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়। একই গ্রামের ৯ জন চিকিৎসাধীন। তারা শুধু ব্যবসার পুঁজিই হারায়নি, জীবন বাঁচানোর যুদ্ধে।

যে সড়কে যে ফাঁড়ি পুলিশের টহল দেয়ার কথা, সেই সড়কে টহল পুলিশ ঘটনার সময় থাকলো না কেন? প্রশ্ন আছে, দায় এড়ানোর জবাবও প্রস্তুত। পুলিশে অপ্রতুলতা, মাঠ পর্যায়ে পরিবহন ব্যবস্থা না থাকার অজুহাত বহু পুরোনো। এ পরিস্থিতি যেমন পাল্টায় না, তেমনই ডাকাতির আগেই ডাকাতদলকে কেন পুলিশ ধরতে পারলো না সে প্রশ্নেরও জবাব মেলে না। অথচ গোপন সংবাদদাতা নিযুক্ত করার জন্য বছরান্তে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। গোয়েন্দা শাখায় লোকবল একেবারে কম নয়। তাছাড়া জনসংখ্যা অনুপাতে চুয়াডাঙ্গায় পুলিশ ও পুলিশ ফাঁড়ির সংখ্যা অন্য যেকোনো জেলার তুলনায় বেশি। তাহলে অপ্রতুলতার অজুহাতে অক্ষমতা আড়াল করার সুযোগ থাকবে কেন? সুযোগ থাকে তখনই যখন জবাবদিহিতার পদ্ধতিতেও থাকে ত্রুটি। ত্রুটিমুক্ত পদ্ধতি প্রণয়ণ ছাড়া সত্য উন্মোচন হয় না। যেমন, মধুখালী মাঠে ডাকাতির বিষয়ে পুলিশের গাফিলতি আছে কি-না প্রশ্নটি প্রাসঙ্গিক হলেও পদ্ধতিগতভাবেই দায় এড়ানোর পথ যেন আগেই বাতলে দেয়া আছে।

চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জ-গাংনী সড়কের পোলতাডাঙ্গার মধুখালী মাঠটি মুন্সিগঞ্জ থেকে খুব দূরে নয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিরাতেই ওই সড়কে পুলিশি টহল চোখে পড়ে। গতপরশু রাত সাড়ে ৮টার দিকে ২৫/৩০ জনের একদল ডাকাত যখন বোমা ফাটিয়ে তাণ্ডব শুরু করলো তখন পুলিশের টিকি দেখা গেলো না। টহল পুলিশ নাকি ওই সময় সোনাতনপুর মোড়ে অবস্থান করছিলো। ডাকাতদল ধারালো অস্ত্র দিয়ে যেভাবে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে শ্যালোইঞ্জিনচালিত লাটাহাম্বার আরোহী গরু ব্যবসায়ীদের কুপিয়ে কাড়ি কাড়ি নগদ টাকা ডাকাতি করেছে তার বর্ণনা সত্যিই গা শিউরে ওঠার মতোই। ঘটনাস্থল রক্তে লাল হয়ে গেছে। গ্রামবাসী সংগঠিত হয়ে ঘটনাস্থলে পৌছুনোর আগেই ডাকাতদল সটকে পড়ে। তার পরও পুলিশকে পাশে পেয়ে গ্রামবাসী গোটা মাঠ রাতভর ঘিরে রাখে। ডাকাত ধরা পড়লে তার পরিণাম কতোটা ভয়ঙ্কর হতো তা অনুমান করাও কঠিন। যতো দ্রুত সম্ভব ডাকাত দলের সদস্যদের ধরতে হবে। ডাকাতি হওয়া টাকা উদ্ধার করে পুলিশ পারে তা দেখানোর মতো দক্ষতা সংশ্লিষ্ট এলাকায় কর্মরত কর্তা দেখাতে সক্ষম হলে আমজনতার ভ্রান্ত ধারণা দূর হতে বাধ্য।

না, কোনো অজুহাতে দায় এড়ানো নয়। জানমালের নিরাপত্ত নিশ্চিত করার কাজে নিয়োজিতদের আরো বেশি বেশি কর্তব্যপরায়ণ হতে হবে। ক্ষোভ, অভিযোগ অনুযোগ যতোই থাকুক, পুলিশই জনগণের নিরাপত্তার প্রতীক, আশ্রয় স্থল। পুলিশকে পারতে হবে। অপরাধীদের গতিবিধি সম্পর্কে এলাকাবাসীরও খবর রাখতে হবে। প্রয়োজনে পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তার নিকট এলাকার অপরাধী সম্পর্কে তথ্য দিতে হবে। সেল ফোন সে ক্ষেত্রে সহায়ক। এটা সচেতন মানুষের দায়িত্বেরই অংশ। এ দায় এড়ানো মানে নিজ এলাকার প্রতি, নিজের প্রতি অবহেলা করা।