পেনশনের ৫০ শতাংশ বিক্রিযোগ্য বছরে ৪ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট

 

স্টাফ রিপোর্টার: সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পেনশনের ওপর বছরে পাবেন ৪ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট। নতুন এ সুবিধা দেয়ার বিনিময়ে পেনশনের অর্ধেক অর্থ সরকারের কাছে রাখা হবে। বর্তমানে শতভাগ পেনশন বিক্রি করা গেলেও নতুন ব্যবস্থায় ৫০ শতাংশ বিক্রিযোগ্য হবে। এ ধরনের একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন অর্থমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর তা চূড়ান্ত হবে। এরপর প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে তা কার্যকর হবে। আগামী বছরের ১ জুলাই থেকে এটি কার্যকরের সম্ভাবনা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এ তথ্য।

প্রধানমন্ত্রীর জন্য তৈরি করা এ সংক্রান্ত সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, পেনশন ধারণার সাথে একজন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর পূর্ণ পেনশন সমর্পণ সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। শতভাগ পেনশন বিক্রি করা হলে শেষ জীবনে তার আর্থিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। পাশাপাশি পূর্ণ পেনশন সমর্পণ করলে তাদের এককালীন বিপুল পরিমাণ অর্থ পরিশোধে সরকারের রাজস্বের ওপর বেশি চাপ পড়ে। সে কারণে পূর্ণ পেনশন সমর্পণের বিধান বাতিল হওয়া যুক্তিযুক্ত। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন প্রথায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। সরকারের পক্ষে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের এককালীন পেনশনের অর্থ দেয়া কঠিন হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এই পরিবর্তন হয়তো অনেকে মানতে চাইবে না। তবে নতুন প্রথায় তা কার্যকর করা হবে। তিনি আরও বলেন, বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্যও আলাদা পেনশন পদ্ধতি চালুর চিন্তাভাবনা রয়েছে। তবে এটি করতে সময় লাগবে। এ জন্য একটি পেনশন ফান্ড গঠন করা যেতে পারে।

সূত্র জানায়, নতুন বিধান কার্যকর হওয়ার পরও পুরনো পেনশনভোগীরা নির্ধারিত সময় পর্যন্ত আগের পদ্ধতিতেই সুবিধা ভোগ করবেন। তবে পুরনোদের মধ্যে যারা শতভাগ পেনশন উত্তোলন করেননি, বেঁধে দেয়া সময় শেষে তাদের পেনশন নতুন বিধানের সঙ্গে সমন্বয় হবে।

উল্লেখ্য, বিদ্যমান পে-স্কেলে একজন চাকরিজীবী অবসরে যাওয়ার সময় চাইলে শতভাগ পেনশন বিক্রি করতে পারেন। আবার অর্ধেকও করতে পারেন। কিন্তু নতুন নিয়মে পেনশনের সর্বোচ্চ অর্ধেক বিক্রি করা যাবে। বাকি পেনশনের ওপর ৪ শতাংশ হারে বছরে ইনক্রিমেন্ট প্রদান করা হবে। বর্তমানে অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে ১১তম গ্রেডের দ্বিতীয় ধাপের অবসরগ্রহণকারী একজন কর্মকর্তার অবসরকালীন মূল বেতন ১৩ হাজার ১৩০ টাকা। মূল বেতনের ৯০ শতাংশ হারে পেনশন ধরে তার গ্রস পেনশনের পরিমাণ দাঁড়াবে ১১ হাজার ৮১৭ টাকা। নতুন নিয়মে তার মাসিক পেনশন ৫০ শতাংশ হারে হবে ৫ হাজার ৯০৮ টাকা। এই টাকার ওপর ৪ শতাংশ হারে এক বছরে ইনক্রিমেন্ট যোগ হবে ২৩৬ টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর পেনশনের ওপর ইনক্রিমেন্ট দেয়ার কারণে মূল্যস্ফীতি পেনশনভোগীকে চাপের মুখে ফেলতে পারবে না।

সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য তৈরি করা সারসংক্ষেপে বলা হয়, বিদ্যমান বিধানে অবসরগ্রহণের পর একজন কর্মকর্তা বা কর্মচারী মাসিক নির্দিষ্ট হারে পেনশন পাচ্ছেন। নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়ন ছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীর পেনশনের অর্থ বৃদ্ধির কোনো সুযোগ থাকছে না। পাশাপাশি প্রতিবছর মূল্যস্ফীতির কারণে সংশ্লিষ্ট পেনশনভোগীর ক্রয়ক্ষমতা দিন দিন কমতে থাকে। ফলে অবসরের পর বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার আর্থিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে থাকে। এছাড়া প্রতি ৫ থেকে ৮ বছর পর নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়ন করা হয়। সংশ্লিষ্ট পেনশনভোগীর সর্বশেষ আহরিত পেনশনের ওপর ভিত্তি করে একটি নির্দিষ্ট হারে বাড়ানো হয় পেনশন। এতে বাজারমূল্যের তুলনায় পেনশন খুব একটা বাড়ে না।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ১৯৯৪ সালে পেনশনের একশ’ শতাংশ বিক্রির বিধান চালু হয়। অনেকেই অবসরে যাওয়ার সময় সম্পূর্ণ পেনশন সরকারের কাছে বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা পাচ্ছেন। ওই টাকা বিভিন্নভাবে খরচ করে শেষ করছেন। পরবর্তী সময়ে তাদের বেশিরভাগই আর্থিক দৈন্যদশায় পড়েন। তাদের অনেককেই মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়। নতুন পেনশন ব্যবস্থা চালু হলে এ অবস্থা থেকে তারা পরিত্রাণ পাবেন। কারণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীর পেনশনের ৫০ শতাংশ সরকারের কাছে থাকলে তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিধান অনুযায়ী প্রতিমাসেই পেনশনের যাবতীয় সুবিধা ভোগ করবেন। পাশাপাশি পেনশনভোগীর পরিবারের সদস্যরা এর সুবিধা ভোগ করবেন।

জানতে চাইলে অষ্টম জাতীয় পে-কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন বলেন, পে-কমিশনের রিপোর্টে চাকরিজীবীদের পেনশনের শতভাগ বিক্রির বিধান বন্ধ করার সুপারিশ করা হয়। কারণ পেনশনের ৫০ শতাংশ রাখা হলে এটি বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হবে। এতে সুবিধা বেশি পাবেন পেনশনভোগীরা। তিনি আরও বলেন, পেনশন হার আগের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে। ফলে চাকরিজীবীরা এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। অনেকে পেনশনের টাকা তুলেই বাড়িঘর নির্মাণসহ নানা খাতে দ্রুত ব্যয় করেন। তাদের বেশিরভাগই জীবনের শেষ সময়ে এসে অর্থকষ্টে ভোগেন। নতুন বিধান চালু হলে, কোনো চাকরিজীবী মৃত্যুবরণ করলেও তার স্ত্রী ও সন্তানরা একই সুবিধা ভোগ করবেন।

জানা গেছে, বর্তমানে দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মাত্র ৫ শতাংশ সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত আছেন, যাদের জন্য পেনশন সুবিধা রয়েছে। আর বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা ৪ লাখ ৫৫ হাজার জন। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে পেনশন সুবিধা এককালীন প্রদান করতে গিয়ে আর্থিক বাজেটের ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।

বর্তমান বেতন স্কেল অনুযায়ী, চাকরিকাল ৫ থেকে ৯ বছর হলে আনুতোষিকের হার প্রতি এক টাকার বিপরীতে ২৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি পুরনো বেতন কাঠামোতে ছিল না। বিদ্যমান অষ্টম বেতন স্কেল অনুযায়ী পেনশনের হার ৮০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০