তানভীর তামিম একই ফ্ল্যাটে থাকতেন : ল্যাপটপ থেকে গোপন তথ্য উদ্ধার
স্টাফ রিপোর্টর: তানভীরের স্ত্রী ফাতেমা এখনো পুলিশ কর্মকর্তাদের বলে যাচ্ছেন যে, তারাই ইসলামের সঠিক পথে চলছেন। আল্লাহর রাস্তায় খেলাফত করতে হবে। তার স্বামীই তাকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন। আজিমপুরে পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অভিযানে আত্মহত্যাকারী ডাচবাংলা ব্যাংকের সাবেক সহকারী সহসভাপতি (এভিপি) তানভীর কাদেরী ওরফে আব্দুল করিমের আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের যোগাযোগ হয়েছিলো। বাংলাদেশে ইসলামী খেলাফতের আমির হিসেবে তানভীর তার নাম ঘোষণা করেছিলো ‘শায়খ আবু ইব্রাহিম আল-হানিফ’ হিসেবে। এই ঘোষণাটি গত বছরের নভেম্বরে প্রকাশিত আইএসের বার্তা ম্যাগাজিন ‘দাবিক’-এ প্রকাশ করা হয়েছে। ২০৯/৫, লালবাগ রোডের হাজি কাওসারের ৫ তলা বাড়ির ২য় তলা থেকে উদ্ধার করা বিভিন্ন আলামত পরীক্ষা করে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম ইউনিটের কর্মকর্তারা নিশ্চিত হয়েছেন যে, নব্য ধারার জেএমবির এই গ্রুপটি বেশ কিছুদিন ধরে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আইএসের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চালাচ্ছে।
কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম ইউনিটের উপকমিশনার মুহিবুল ইসলাম বলেন, হলি আর্টিজানে হামলার সময় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি ফ্ল্যাটে তানভীর কাদেরী ওরফে আব্দুল করিম ও কানাডা প্রবাসী তামিম আহমেদ চৌধুরী সপরিবারে থেকেছিলেন। হলি আর্টিজানে হামলার পরপর তারা বাসাটি ছেড়ে দিয়ে মিরপুরের দিকে একটি বাসা ভাড়া নেন। এরপর তারা আজিমপুরের ঐ বাসা ভাড়া করেন। ওই বাসা থেকে আটক করা তিন নারী জঙ্গির কাছ থেকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। তাদের চিকিত্সা শেষে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হবে। অপরদিকে তানভীরের স্ত্রী আবেদাতুল ফাতেমা ওরফে খাদিজা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে ২০০৩ সালে মাস্টার্স উত্তীর্ণ হওয়ার পর আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’-এ চাকরি করতেন। ওই সংস্থায় চাকরি করার পর ছয় মাস আগে থেকে তার মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ করেন সহকর্মীরা। তিন মাস আগে তিনি চাকরি থেকে ইস্তফা দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কল্যাণপুর, রূপনগর ও নারায়ণগঞ্জে জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনার সময় জঙ্গিরা তাদের বেশিরভাগ ইলেকট্রনিক সামগ্রী নষ্ট করে। পুলিশের হাতে যাতে তাদের তথ্য না যেতে পারে, এজন্য তারা অভিযান টের পাওয়ার পর ল্যাপটপ ও মোবাইলফোন ভেঙে তছনছ করে দেয়। গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও ডায়েরি পুড়িয়ে ফেলে। কল্যাণপুরে অভিযানের সময় জঙ্গিরা তাদের সব কয়েকটি মোবাইলফোন ভেঙে ফেলে। এমনকি মোবাইল ফোনের মেমোরি কার্ড নষ্ট করে ফেলে। সৌভাগ্য ক্রমে ভেঙে ফেলা দুটি মোবাইল ফোন ঠিক করে পুলিশ সেখান থেকে তাদের আইএসের পোশাক পরিহিত বেশ কিছু ছবি উদ্ধার করে। নারায়ণগঞ্জে অভিযানের সময় জঙ্গিরা তাদের ব্যবহূত ল্যাপটপ ভেঙেই ক্ষান্ত হয়নি, সেটি চুলায় জ্বালিয়ে দেয়।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা জানান, আজিমপুরের বাড়ি থেকে পুলিশ বেশি সংখ্যক গুরুত্বপূর্ণ আলামত জব্দ করতে পেরেছে। বিশেষ করে সেখান থেকে ৪টি ল্যাপটপ অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়। এসব ল্যাপটপে তাদের নব্য জেএমবির সাংগঠনিক কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের যোগাযোগও হয়েছে। ল্যাপটপে আইএসের প্রশিক্ষণ, অপারেশন ও উদ্বুদ্ধকরণ বিষয়ে ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। তারা বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম অবহিত করতে আইএসের ওয়েবপেজে তথ্য পাঠানোর চেষ্টা করেছে।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা জানান, তানভীর কাদেরী নব্য জেএমবির পক্ষ থেকে আইএসের সাথে যোগাযোগ করতে পেরেছিলো। সে নিজেকে বাংলাদেশে ইসলামী খেলাফতের আমির হিসেবে ঘোষণা দেন। তার এই ঘোষণা আইএসের সাময়িকী ‘দাবিক’-এ প্রকাশও হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, হলি আর্টিজানের হামলার পরিকল্পনার সাথে জঙ্গি তামিম আহমেদ চৌধুরী, মেজর (চাকরিচ্যুত) সৈয়দ জিয়াউল হক, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ও মারজানের পাশাপাশি তানভীর কাদেরীও জড়িত ছিলেন।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা তানভীরের স্ত্রী আবেদাতুল ফাতেমা ওরফে খাদিজাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য দিয়ে বলেন, এখনো ফাতেমা পুলিশ কর্মকর্তাদের বলে যাচ্ছেন যে, তারাই ইসলামের সঠিক পথে চলছেন। আল্লাহর রাস্তায় খেলাফত করতে হবে। তার স্বামীই তাকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন। এজন্য তিনি বিপথগামী নারীদের ইসলামের সঠিক পথে ফেরার জন্য প্রচার চালাচ্ছেন। তার স্বামী শহীদ হয়েছেন। এজন্য তার কোনো দুঃখ নেই।