তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে এসক্যাপের প্রতিবেদন : ব্রডব্যান্ড ব্যবহারে ভারতের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশে প্রতি ১০০ জন অধিবাসীর মধ্যে গড়ে ২ দশমিক ৪ জন ফিক্সড ব্রডব্যান্ড বা উচ্চ গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৫৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩তম। সম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিকের (এসক্যাপ) তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের এ চিত্র উঠে এসেছে।

এসক্যাপের প্রতিবেদনটি বিবেচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ধরলে এ দেশে প্রায় সাড়ে ৬ লাখের বেশি ফিক্সড ব্রডব্যান্ড গ্রাহক আছেন। ‘এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের তথ্যপ্রযুক্তি পরিস্থিতি ২০১৬’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনে এসক্যাপের সদস্য ৫৩টি দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের হালনাগাদ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। যেকোনো দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ভূমিকার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে প্রতিবেদনে বাংলাদেশের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৭০টির বেশি উন্নয়ন কার্যক্রমে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। সেখানে দেখা গেছে, সরকারি কেনাকাটার অনলাইনে ব্যবহার বা ই-প্রকিউরমেন্টে সবচেয়ে সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। ১ ডলার খরচ করে ৬৬৩ ডলারের সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। এরপরই রয়েছে ভূমি নিবন্ধনের ডিজিটালাইজেশন। সেখানে ১ ডলার খরচ করে ৬১৯ ডলারের সুবিধা মিলছে। এ ছাড়া সারা দেশে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা সরকারি তথ্য সেবাকেন্দ্রেও ব্রডব্যান্ড ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে দেশব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ছড়িয়ে পড়েছে বলে এসক্যাপের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অনলাইনে সরকারি সেবা ও তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে সহায়ক হবে। আর এ জন্যই তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অবকাঠামো যত বেশি গড়ে উঠবে, তত বেশি সরকারি-বেসরকারি সেবা নিশ্চিত হবে। এসক্যাপের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জন্য আরও সুখবর আছে। ব্রডব্যান্ড বা উচ্চ গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট ব্যবহারে ভারতের ওপরে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে যেখানে প্রতি ১০০ জনে ২ দশমিক ৪ জন উচ্চ গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, সেখানে ভারতের গড়ে মাত্র ১ দশমিক ৩ জন তা ব্যবহার করেন। এ ইন্টারনেট ব্যবহারে এমনকি পাকিস্তান, নেপাল ও আফগানিস্তানের চেয়েও ভালো অবস্থানে বাংলাদেশ। পাকিস্তানে প্রতি ১০০ জনে ব্যবহারকারী মাত্র একজন এবং নেপালে গড়ে ১ দশমিক ১ জন ব্যবহারকারী আছেন। তবে দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষস্থানে আছে মালদ্বীপ। এসক্যাপের সদস্য ৫৩টি দেশের মধ্যে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটির প্রতি ১০০ জনে গড়ে ৪০ দশমিক ২ জনই উচ্চ গতিসম্পন্ন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। এর পরে হংকংয়ের বাসিন্দারা প্রতি ১০০ জনে গড়ে ৩১ দশমিক ৫ জন এ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। তৃতীয় স্থানে থাকা নিউজিল্যান্ডবাসীর এ হার গড়ে ৩০ দশমিক ৫।

তবে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা আফগানিস্তানের। তালিকার তলানিতে থাকা এ দেশটির প্রতি ২০ হাজার জনে মাত্র একজন উচ্চ গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। উচ্চমূল্যের কারণে ২০টি দেশ এখনো প্রতি ১০০ জনের মধ্যে দুজনও ব্রডব্যান্ড ব্যবহার করতে পারেন না। দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, মিয়ানমার, তাজিকিস্তান, তুর্কমিনিস্তান ও লাওস।
এ তালিকায় চীনের অবস্থান ১১তম। তা সত্ত্বেও এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ব্রডব্যান্ড সুবিধার প্রবৃদ্ধি চীনের ওপরই নির্ভরশীল। এ অঞ্চলে যত ব্রডব্যান্ড গ্রাহক আছে, এর অর্ধেকের বেশি চীনেই। যদিও চীনে প্রতি ১০০ জনে ১৮ দশমিক ৬ জন ব্রডব্যান্ড ব্যবহার করেন। কিন্তু জনসংখ্যা প্রায় ১৫০ কোটি। এ ছাড়া উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মোবাইল ফোনে উচ্চ গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট ব্যবহারে উন্নত দেশের চেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সালে সারা বিশ্বে যত ব্রডব্যান্ড গ্রাহক আছেন, এর ৫২ দশমিক ৩ শতাংশই এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর। আর ইউরোপে ২১ দশমিক ৯ শতাংশ এবং উত্তর আমেরিকার ১৪ দশমিক ১ শতাংশ গ্রাহক আছেন। ২০০৫ সালে এসক্যাপ সদস্যদেশগুলোতে বিশ্বের ৩৮ শতাংশের বেশি গ্রাহক ছিলো। এক দশকের ব্যবধানে অন্য অঞ্চলে কমলেও এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশে এ অংশীদারত্ব বেড়েছে।