অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বাড়ি মালিকদের তথ্য দেয়ার আহ্বান পুলিশের

 

উজ্জ্বল মাসুদ: চুয়াডাঙ্গায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে বাড়ি মালিক ও ভাড়াটেদের তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়েছে। জেলা পুলিশের উদ্যোগে গত সোমবার থেকে পৌর এলাকার সকল বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফরম বিতরণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ পুলিশ লেখা ও সিলযুক্ত ফরম বিতরণে সহযোগিতা করছে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা। বাড়ি মালিক ও ভাড়াটেদের পূর্ণ পরিচয় যাচাইয়ের জন্য তাদের তথ্য নিচ্ছে পুলিশ। একই সাথে পৌরসভার পরিসংখ্যানে বাসা-বাড়ির তালিকা হালনাগাদসহ যুক্ত হবে ভাড়াটেদের তালিকাও। গতকাল বৃহস্পতিবার ফরম জমা দেয়ার শেষ দিন থাকলেও অধিকাংশ ফরম জমা না হওয়ায় তার সময় বাড়ানো হয়েছে। তবে দ্রুত ফরম জমা দিয়ে পুলিশের সাহায্যের জন্য বাড়ি মালিকদের আহ্বান জানিয়েছেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডে ফরম বিতরণ করছেন পৌরসভার আদায়কারীরা। সহযোগিতা করছেন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও পুলিশ কর্মকর্তা। বিতরণকৃত ফরম জমা নেয়া হচ্ছে পৌরসভায়। জেলা পুলিশ ও পৌরসভার উদ্যোগে বাড়ি মালিক ও ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহের পর ডাটাবেজ করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

সারাদেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে প্রশাসন। ইতোমধ্যে রাজধানীতে বাড়িমালিক ও ভাড়াটেদের তথ্য সংগ্রহ করেছে পুলিশ। শুরু হয়েছে জেলাগুলোতেও। চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের উদ্যোগে পৌরসভার সহযোগিতায় ফরম বিতরণ শুরু হয়েছে। গত সোমবার পৌর এলাকার নয়টি ওয়ার্ডের ফরম বিতরণ শুরু হয়। বিতরণকৃত ফরম পূরণ করে জমার শেষ দিন ছিলো গতকাল বৃহস্পতিবার। কিন্তু বিতরণকৃত ফরমের অধিকাংশ জমা না হওয়ায় এর সময় বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া বেশকিছু এলাকায় এখনও পর্যন্ত ফরম বিতরণ করা হয়নি। ফলে আরও কয়েক দিন সময় বাড়িয়েছে পুলিশ। দ্রুত সময়ের মধ্যে বাড়ি মালিক ও ভাড়াটেদের তথ্য পূরণ করে পৌরসভায় জমা দেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। যার ফলে পৌর এলাকায় কোনো অপরাধীর বসবাস আছে কি-না তা খতিয়ে দেখতে পারবে প্রশাসন। চুয়াডাঙ্গায় বাড়িভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন অনেকে। তবে এমন কিছু মালিক আছেন যে তার ভাড়াটিয়াদের ঠিক ঠাক পরিচয়টুকুও জানেন না। তারা অপরাধমূলক ঘটনা ঘটিয়ে লাপাত্তা হলে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে। কিন্তু হয়রানির শিকার হতে হয় বাড়ি মালিককে। ফলে সমাজের অপরাধমূলক ঘটনা নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনকে সাহায্যের জন্য নিজের ও ভাড়াটিয়ার তথ্য দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। বর্তমান ভাড়াটে ও নতুন কোনো ভাড়াটে এলে সাথে সাথে তার তথ্য পরিচয় পৌরসভা ও থানায় জানাতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে কোনো মালিক বা ভাড়াটে তথ্য না দিয়ে থাকলে পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।

চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার পরিসংখ্যানের হিসেবে রয়েছে ১৬ হাজার ৬৪ হোল্ডিং তথা বাড়ি। এছাড়া নতুন নতুন অনেক বাড়ি নির্মাণ হয়েছে যার কোনো তালিকা এখনও দেননি বাড়ি মালিকরা। সাথে প্রত্যেক এলাকায় ভাড়াটে তো আছেই। বিতরণকৃত ফরম চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায় জমা নেয়া হচ্ছে। প্রত্যেক ওয়ার্ডের জন্য একটি করে বক্সে জমা করা হচ্ছে ফরম। গত চার দিনে ফরম জমা হয়েছে দু হাজারেরও কম। গতকাল জমাদানের শেষ দিন থাকায় কিছুটা ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তবে জমা দেয়ার সময় বাড়ানোও হয়েছে। বিকেল ৫টা পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৭৮৮ ফরম জমা হয়েছে বলে পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে।

পৌর এলাকায় ফরম বিতরণ ও তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর, সদর থানার কর্মকর্তা ও পৌরসভার আদায়কারীরা। ১ নং ওয়ার্ডে রয়েছেন কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম, এসআই জসিম উদ্দীন, এএসআই শাহ আলম ও পৌরসভার আদায়কারী আল মামুন। ২ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর মুন্সি রেজাউল করিম খোকন, এসআই জাহাঙ্গীর আলম, এসআই সুমন সরকার, এএসআই জামিরুল ইসলাম ও আদায়কারী আশরাফুল আলম। ৩ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নাজমুস সালেহীন লিটন, এসআই ইবনে খালিদ স্ট্যালিন, এএসআই মাহাবুব ও আদায়কারী নাসির উদ্দীন। ৪ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম খোকন, এসআই পিয়ার আলী, এএসআই আল ইমরান ও আদায়কারী আমেনা খাতুন। ৫ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফা মাস্তার, এসআই শরিফুল ইসলাম, এএসআই মোকলেছুর রহমান ও আদায়কারী পলাশ উদ্দীন। ৬ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর রাশিদুল হাসান, এসআই অনুপ কুমার, এএসআই জামশেদ ও আদায়কারী আব্দুস সালাম। ৭ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর আবুল হোসেন, এসআই সুপ্রভাত, এএসআই শাফায়েত ও আদায়কারী মিনহাজ উদ্দীন। ৮ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম মনি, এসআই ওহিদুল ইসলাম, এটিএসআই মোহাম্মদ বাবুল ও আদায়কারী নূর মোহাম্মদ। ৯ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর একরামুল হক মুক্তা, এসআই মহসিন আলী, এএসআই খায়রুল, এএসআই হারুন ও আদায়কারী মিলনুজ্জামান।

চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু বলেন, সারাদেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রশাসনের সাথে জনগণ এখন সোচ্চার। চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের উদ্যোগে পৌরসভার সহযোগিতায় ফরম বিতরণ করা হচ্ছে। পৌর নাগরিকদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকায় অপরাধী থাকলেও তা শনাক্ত করে নির্মূল করা সম্ভব হবে। একইসাথে সকলকে ফরম পূরণ করে জমা দেয়ার অনুরোধ জানান মেয়র।

চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন জানান, অপরাধ কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে পুলিশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে। ইতোমধ্যে শহরের বিভিন্ন ছাত্রাবাসে অভিযান চালানো হয়েছে। ওই সময় ছাত্রাবাসে থাকা সকলের তালিকা তৈরি করা হয়। এবার বাড়ি মালিক, ভাড়াটিয়া, ছাত্র মেসসহ সকল আবাসিকে বসবাসকারীদের তথ্য নেয়া হচ্ছে। তথ্য সংগ্রহ সম্পূর্ণ হলে পৌরসভা ও পুলিশের উদ্যোগে ডাটাবেজ করা হবে। জেলা পুলিশ ও পৌরসভায় ডাটাবেজ দেয়া হলে অপরাধীরা কোনো অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটাতে পারবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। একই সাথে তথ্য দিয়ে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।