মহিলাসহ জারিকারক ওসমান তার স্ত্রীর হাতে আটক

চুয়াডাঙ্গার যুগিরহুদায় বাড়িভাড়া নিয়ে খ্রিস্টান নারীর সাথে অবৈধভাবে বসবাস

 

পাঁচমাইল প্রতিনিধি: মহিলা নিয়ে অবৈধভাবে থাকা ভাড়াবাড়ি থেকে স্ত্রীর হাতে আটক হয়েছেন ইউএনও অফিসের জারিকারক ওসমান আলী। গতকাল বুধবার সকালে চুয়াডাঙ্গার যুগিরহুদা গ্রামের ভাড়াবাড়ি থেকে এক খ্রিস্টান ধর্মালম্বী মহিলার সাথে অবৈধভাবে থাকা অবস্থায় তাকে আটক করে স্ত্রীসহ স্বজনরা। বরিশালের রুনা বিশ্বাসের সাথে গত ৬ মাস আগে ওসমানের অবৈধ সম্পর্ক হয়। তবে রুনাকে বিয়ে করেছেন বলে দাবি করলেও তার প্রমাণ দেখাতে পারেননি ওসমান। বিবাহিত স্ত্রীর দাবি করায় রুনা বিশ্বাসও চমকে ওঠেন। স্ত্রী না হয়েও বাড়িভাড়া করে অবৈধভাবে থাকার প্রমাণ পেয়ে গ্রামবাসী তাদেরকে উত্তমমধ্যম দিলে পালিয়ে যায় রুনা। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের জারিকারক ওসমান আলীকে স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও জামাতার হাতে তুলে দেয় গ্রামবাসী। এছাড়াও ওসমানের বিরুদ্ধে ইউএনও অফিসের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন বিয়ে বাড়ি থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সদর উপজেলার গ্রাম্য এলাকার বিয়ে বাড়ি থেকে চাঁদা আদায়ের একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের জারিকারক ওসমান আলী মাস দেড়েক আগে উপজেলার যুগিরহুদা গ্রামে বাড়িভাড়া নেন। সিরাজুল ইসলামের বাড়িভাড়া নিয়ে বরিশালের মেয়ে রুনা বিশ্বাসকে (৩৮) স্ত্রী পরিচয়ে তোলেন তিনি। বেশির ভাগ রাতই সেখানে কাটাতেন জারিকারক ওসমান আলী। রুনা তার দ্বিতীয় স্ত্রী বলে জানতেন এলাকার অনেকেই। ওসমান আলীর বাড়ি চুয়াডাঙ্গা শহরের সবুজপাড়ায়। এদিকে গতকাল বুধবার সকাল ৮টার দিকে সরোজগঞ্জ যুগিরহুদা গ্রামের সিরাজুলের বাড়িতে হাজির হন ওসমানের স্ত্রী নাছিমা খাতুন। ছেলে, মেয়ে ও জামাতাকে নিয়ে ওই বাড়ির একটি কক্ষ তাদেরকে আটক করা হয়। ভিড় জমতে শুরু হয় এলাকাবাসীর। এদিকে কিছুদিন আগে তার স্ত্রীকে মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেন ওসমান। মাঝেমধ্যেই মারধর করেন তিনি। এর আগেও ওসমান বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন মেয়ে নিয়ে অবৈধভাবে রাত কাটিয়েছে। শুধু তাই নয় এমন ঘটনা অনেক জায়গায় ঘটিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওসমান আলীর স্ত্রী নাসিমা খাতুন। এ সময় উত্তেজিত গ্রামবাসী এবং ওসমানের স্ত্রী ও স্বজনরা বিয়ের কাবিননামা দেখাতে না পারলে তাদেরকে উত্তমমধ্যম দেয়া হয়।

বরিশাল জেলার মৃত অনন্ত বিশ্বাসের মেয়ে রুনা বিশ্বাস জানান, তিনি খ্রিস্টান পরিবারের মেয়ে। বছরখানেক আগে বরিশাল থেকে চুয়াডাঙ্গায় আসেন তিনি। ডিঙ্গেদহের এক চাচার বাড়িতে থেকে বিভিন্ন প্রকার বইসহ পত্র-পত্রিকা বিক্রি করতেন। কিছুদিন পরেই পরিচয় হয় ইউএনও অফিসের জারিকারক ওসমান আলীর সাথে। তিনি ইউএনও’র সহযোগিতায় আমার বেশকিছু হেলথের বই বিক্রি করে দেন।

রুনা বিশ্বাস আরও জানান, কিছুদিন পর হঠাৎ রুনার সাথে তার বিয়ে হয়ে গেছে বলে জানান ওসমান। বিয়ের কথায় কিছুটা চমকে ওঠেন রুনা। বিয়ে কিভাবে হলো তা জানতে চান তিনি। এর আগে ফরিদা পারভীন নাম লেখা একটি কাগজে রুনার স্বাক্ষর নেন ওসমান আলী। ওই স্বাক্ষর করা কাগজটিই তাদের বিয়ের কাগজ বলে জানান ওসমান। কিন্তু সেখানে ফরিদা পারভীনের নাম থাকায় সরল মনে স্বাক্ষর করেন রুনা। ফরিদা পারভীন অনুপস্থিত ছিলো, কিন্তু স্বাক্ষরটি খুব প্রয়োজন এই ভেবেই কাগজে স্বাক্ষর করেন রুনা। অন্য নামের কাগজে আমাদের বিয়ে কিভাবে হলো? একথা জানতে চাইলে রুনাকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিতে থাকে। ওসমানের কথা মতো না চললে মোবাইলফোনে রুনার পরিবারের লোকজনের কাছে রুনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা কথা বলবে। বিভিন্ন ভয়-ভীতি দেখিয়ে রুনাকে তার সাথে ভাড়া ভাড়িতে থাকতে বাধ্য করেন ওসমান আলী। গতকাল সকালে ওসমান আলীর স্ত্রী ও স্বজনের সামনে এভাবেই বলছিলেন রুনা বিশ্বাস।

ওসমান আলীর স্ত্রী নাছিমা খাতুন বলেন, তাকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে আসছিলেন ওসমান। কিছুদিন আগে নাছিমাকে মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেন তিনি। নাছিমার মাথায় ৫টি সেলাই দিতে হয়। এছাড়া এর আগেও বিভিন্ন মেয়েকে নিয়ে মাঝমধ্যেই বিভিন্ন এলাকায় রাত কাটিয়েছেন ওসমান। এরকমই ঘটনা আগেও ঘটিয়েছে বলে জানান নাছিমা খাতুন।

ওসমান আলী জানান, চু্য়াডাঙ্গার হাসেম কাজির কাছে বিয়ে করেছেন তারা। সময় দিলে বিয়ের কাগজ নিয়ে দেখাতে পারবেন বলে জানান ওসমান আলী। তবে তাৎক্ষণিক কোনো কাগজ দেখাতে পারেননি তারা।

চু্য়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কেএম মামুন উজ্জামান বলেন, যেহেতু ঘটানাটি ওসমানের পারিবারিক। তারপরও সে যদি বিয়ে না করে থাকে এবং অপরাধ করলে তাকে শাস্তি পেতে হবে। পরে জারিকারক ওসমান আলীকে তার স্ত্রী ও সন্তানের হাতে তুলে দেয়া হয়। তাকে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সবুজপাড়ার বাড়িতে নিয়ে যান বলে জানা গেছে। এদিকে খ্রিস্টান মেয়ে রুনা বিশ্বাসকে উত্তমমাধ্যম দেয়ার পর সুযোগ বুঝে পালিয়ে যান তিনি।