নাইদহের শৈলকুপার দেবতলা গ্রামের ৯৮ বছরের বৃদ্ধ একদিল মণ্ডলের বাড়ি

 

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের শৈলকুপার দেবতলা গ্রামের ৯৮ বছরের বৃদ্ধ একদিল মণ্ডলের বাড়ি। ছেলে-মেয়ে তাদের দেখভাল করে না। তাই এই বয়সেও ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয় তাকে, সাথে আছেন বৃদ্ধা স্ত্রী।

গত ৪ বছর ধরে ভিক্ষা করছেন। সরকারিভাবে ভিক্ষুক তালিকা ফরম পূরণ হচ্ছে, অথচ তার নাম সেই তালিকাতে নেই। তাকে কেউ বলেওনি। ৮০ বছরের বৃদ্ধা আউশিয়া গ্রামের বিবিজান, তিনিও প্রায় ২৫ বছর ধরে ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন-যাপন করছেন। কিন্তু জানেন না সরকার পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছেন ভিক্ষুকদের। এমন অসংখ্য ভিক্ষুক রয়েছে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলাতে। শুধু শৈলকুপা নয় জেলা জুড়েই তালিকাতে নাম লেখাতে ব্যস্ত সুযোগ সন্ধ্যানী কিছু মানুষ। ভিক্ষুক সমিতির হিসেব মতে শৈলকুপায় প্রায় সাড়ে ৩শ ভিক্ষুক রয়েছে অথচ ৬শতাধিক মানুষ এই ভিক্ষুক তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত করেছে ইতোমধ্যে। এ তালিকা রয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দফতরে। যারা কোনোদিনও ভিক্ষাবৃত্তি বা অসহায় জীবনযাপন করেনি এমন মানুষের নামেই পরিপূর্ণ ভিক্ষুক তালিকা ফরম। এনিয়ে খোদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় ইতোমধ্যে ভিক্ষুক তালিকার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তালিকাতে ৬শ ৬ জনের নাম অন্তর্ভুক্তি করা হয়েছে। এদের অর্ধেকই ভিক্ষুক নয় বলে ভিক্ষুকদের অভিযোগ। সরকার কিছু সুযোগ-সুবিধা দিবে ভিক্ষুকদের তাই অনেক সাধারণ মানুষ, স্বচ্ছল মানুষ রীতিমতো ধর্না ধরে, তদবির করে, লড়াই করে তালিকায় নাম দিয়েছে। আর ইউনিয়ন পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে এ তালিকা সম্পন্ন করেছে উপজেলা নির্বাহী অফিস।

শৈলকুপার পৌরসভাসহ ১৪ ইউনিয়ন রয়েছে। তালিকা অনুসারে পৌরসভায় ৯ ওয়ার্ডেই ১শ ৪৭ জন অন্তর্ভূক্তি হয়েছে। এছাড়া ত্রিবেণী ইউনিয়নে ৩১, মির্জাপুর ইউনিয়নে ৫৫, দিগনগর ইউনিয়নে ১৫, কাঁচেরকোল ইউনিয়নে ২৭, সারুটিয়া ইউনিয়নে ৩৫, হাকিমপুর ইউনিয়নে ৩০, ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নে ৩৭, মনোহরপুর ইউনিয়নে ৩৮, বগুড়া ইউনিয়নে ২৯, আবাইপুর ইউনিয়নে ৩৮, নিত্যানন্দনপুর ইউনিয়নে ১৮, উমেদপুর ইউনিয়নে ৩৬, দুধষর ইউনিয়নে ৪৭ ও ফুলহরী ইউনিয়নে ২৩ জনের নাম ভিক্ষুক তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।

শৈলকুপা ভিক্ষুক সমিতি নামে ভিক্ষুকদের একটি সংগঠন রয়েছে। যারা বিভিন্নভাবে ভিক্ষুকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কাজ করে। এই সংগঠনের একজন সদস্য আউশিয়া গ্রামের ইনতাজ শেখ। তিনি ক্ষোভের সাথে জানান, তালিকায় তার নাম দেয়া হয়েছে তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে যারা ভিক্ষুক না এমন নাম দেয়া হয়েছে। তাদের ভিক্ষুক সমিতির সবার নাম দেয়া হয়নি তালিকায়।

শৈলকুপার সারুটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান জানান, তাদের ইউনিয়নে ২১টি গ্রাম রয়েছে, এসব গ্রাম থেকে বেঁছে মাত্র ৩৫ জনের নাম দেয়া হয়েছে। যারা প্রকৃতভাবেই ভিক্ষুক। ১২ নং নিত্যানন্দনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন জানান, তালিকা হয়েছে তবে কারা অন্তর্ভূক্ত হয়েছে, তা বলতে পারছেন না।

শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিদারুল আলম জানান, ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। সে অনুযায়ী জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে তালিকা চাওয়া হয়েছে। তাদের দেয়া তালিকা মতে ৬০৬ জনের নাম দেয়া হয়েছে। তবে এই তালিকার নাম নিয়ে তিনি সংশয় প্রকাশ করেছেন, তিনি মনে করছেন অনেক প্রকৃত ভিক্ষুক বাদ পড়েছেন। ঝিনাইদহ জেলায় প্রকৃত ভিক্ষুক তালিকা বানাতে দাবি তুলেছে তারা। অসংখ্যক ভিক্ষুক রয়েছে জেলা জুড়ে। সরকারি এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে অসহায় ভিক্ষুক মানুষগুলো।