আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তদবির
স্টাফ রিপোর্টার: পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে এলাকামুখি হচ্ছেন এমপিরা। নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করে প্রতিদিনই সকাল-বিকেল অংশ নিচ্ছেন দলীয় সভা-সমাবেশসহ সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে। তবে অন্য সব বারের মতো এবার স্বাধীনভাবে এলাকায় অবস্থান ও বিচরণ করছেন না তারা। সামনে-পেছনে দলীয় নেতাকর্মী বেষ্টিত হয়ে বের হচ্ছেন ঘর থেকে। পুলিশ প্রশাসনকে অবগত না করে হুটহাট কোথাও যাচ্ছেন না। অনেকে আবার প্রাইভেট বাহিনীও গড়ে তুলেছেন। বাহিনীকে শক্তিশালী করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তদবির করে তাদের নামে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স করে দেয়ারও ব্যবস্থা করছেন অনেক এমপি। আর এতোসব ঘটছে সম্প্রতি জঙ্গি হামলার ঘটনার প্রেক্ষিতে।
গুলশান ও শোলাকিয়ায় নাশকতা এবং এরপর কয়েক দফা জঙ্গিদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এমপিরা। এছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের একের পর এক ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় জামায়াত-শিবিরের আক্রমণেরও ভয় রয়েছে তাদের। এ নিয়ে একাধিক এমপি জাতীয় সংসদে নিজেদের নিরাপত্তা বিধানের বিষয়টি তুলে ধরে সরকারের কাছে প্রটেকশন দাবি করেছিলেন। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। একাধিক এমপি এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মন্ত্রীদের প্রটেকশনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সচিব, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা পেলে তাদের চেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন এমপিরাও নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার রাখেন। অথচ দাবি করার পরও এমপিদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হয়নি। সম্প্রতি পরিস্থিতির নিরিখে তারা মনে করেন, সুষ্ঠু উন্নয়নের স্বার্থে জনপ্রতিনিধি তথা আইনপ্রণেতাদের নিরাপত্তা বিধান জরুরি। যে কারণে বাধ্য হয়ে নিজেদের নিরাপত্তা নিজেদেরই নিশ্চিত করতে হয়েছে। তবে এটিকে প্রাইভেট বাহিনী বলতে নারাজ এমপিরা। তাদের মতে, সারা পৃথিবীতেই জনপ্রতিনিধির নিরাপত্তা দেয় জনগণ। এখানেও তাই হচ্ছে। দলীয় নেতাকর্মী এবং সাধারণ জনগণই সব সময় সাথে থাকছে। এটাই তো হওয়া উচিত।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং চট্টগ্রাম-৭ আসনের এমপি ড. হাছান মাহমুদ বলেন, এমপিদের নিরাপত্তা দরকার। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপাররা ব্যক্তিগত নিরাপত্তা পান। তাদের চেয়ে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন হওয়ায় এমপিরাও তা দাবি করতে পারেন। কিন্তু কীভাবে, কোন প্রক্রিয়ায় নিরাপত্তা দেয়া হবে, সেটা সরকারেরই ঠিক করার কথা। যতোদিন সেটা না হচ্ছে ততোদিন জনগণকে সাথে নিয়েই নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
দিনাজপুর-৩ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি এবং জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, নিরাপত্তার মালিক আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন। কিন্তু দেশের সম্প্রতি অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কেউ নিরাপত্তা চাইতে পারেন। এমপিদের নিরাপত্তা প্রশ্নে ইতোমধ্যে স্পিকারের সাথে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, স্পিকার বিষয়টি দেখবেন। প্রাইভেট বাহিনীর বিষয়ে তিনি বলেন, এলাকার জনগণ নিজেদের নির্বাচিত প্রতিনিধিকে ভালোবেসে প্রটেকশন দিলে ক্ষতি কী? এতে তো আইনের ব্যত্যয় হচ্ছে না।
কিশোরগঞ্জ-২ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিন বলেন, সারাবিশ্বে জনপ্রতিনিধিদের নিরাপত্তা দেয় জনগণ। সেটাই এদেশে হচ্ছে। তাছাড়া এলাকায় গেলে সামনে-পেছনে নেতাকর্মীরা তো থাকবেই। এটাকে বাহিনী না বলাই ভালো।