স্কুলছাত্র সজিব হত্যা মামলায় আটক তিনজনের ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির মেধাবী ছাত্র সজিব হত্যা মামলায় আটক কোরবান আলী ও তার স্ত্রী-ছেলেকে ৬ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালতে বিজ্ঞ বিচারক। গতকাল সোমবার চুয়াডাঙ্গা চিফ জুডিসিয়াল আদালতে ওই রিমান্ড শুনানি শেষে আটক তিনজনকেই ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বলে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুল খালেক।

এদিকে নিহত স্কুলছাত্র সজিবকে কৌশলে খুনিচক্রের হাতে তুলে দেয়ার অপরাধে ছেলে শাকিলের প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তার মা পাপিয়া খাতুন। তিনি গতকাল সকালে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এ প্রতিবেদককে বলেন, যে ছেলে ওই সজিবদের বাড়ি খেয়ে বড় হয়েছে, যার মা তাকে নিজের ছেলের মতোই ভালবাসতো, যে সজিব তাকে ভাইয়া বলে ডাকতো সেই সজিবকে যে খুনিচক্রের হাতে তুলে দিতে পারে সেই ছেলের মুখ দেখাটাও পাপ। তিনি আবেগপ্লুত হয়ে আরও বলেন সজিব যেদিন থেকে নিখোঁজ হয়েছে সেদিন থেকে আমি সব সময় আল্লার কাছে দু হাত তুলে বলতাম হে মাবুদ তুমি এতিম সজিবকে তার মার কোলে ফিরিয়ে দাও। সজিব আমাকে প্রায়ই বলতো কাকি আমি লেখাপড়া শিখে চাকরি পেয়ে তোমার জন্য প্রথম শাড়ি কিনবো, তারপর আম্মু ও আপার জন্য। সেই সজিবকে তুই খুন করলি। এখন আমি এ মুখ দেখাবো কী করে। আমার স্বামী সজিবের মাটি পর্যন্ত দিতে যেতে পারলো না। সে এখনও পর্যন্ত ঘরে বসে বসে কাদে আর বলে আমি বাসের নীচে পড়ে আত্মহত্যা করবো। ভয়ে আমি তাকে বাড়ি থেকে বের হতে দিচ্ছিনে। সজিবের মা মাংস রান্না করলে বাটিতে করে মাংস দিয়ে বলতো শাকিলকে দিও। ডিম রান্না করলেও দুটো করতো। একটা সজিবের আর আরেকটা শাকিলের জন্য। সজিবকে আমি ছোট থেকে কোলেপিঠে করে বড় করেছি। সজিব অপহরণ হওয়ার কয়েকদিন আগে আমার মুখে জোর করে লুডুস তুলে দিয়ে বলছিলো কাকি খেয়ে দেখো খুব মজা। সজিব নিখোঁজের পর পুলিশ যখন শাকিলকে ধরে নিয়ে গেলো তখন সেই সজিবের মা তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসলো। আমি তাকে নানাভাবে জিজ্ঞেস করেছি, খোকা তুই যদি কিছু জানিস তাহলে আমার সাথে বল, আমি সজিবের মার সাথে বলবো। তোর তারা কোনো ক্ষতি করবেনা। সে যদি ওই সময়ও আমাকে সবকিছু খুলে বলতো তাহলে হয়তো সজিবকে মরতে হতো না। তিনি শেষে দৃঢকণ্ঠে বললেন তুই যেমন তার মার বুক খালি করলি তেমনি আমার বুকও খালি হোক এতে আমার বিন্দুমাত্র আফসোস থাকবে না। আমি মন থেকে চাই শাকিলের ফাঁসি হোক। আমি ওই সজিবের পাশেই তার কবর দেব। আমি একটুও কাদবোনা বলে নিরবে কাদতে লাগলেন।

উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে দামুড়হুদা উপজেলা চত্বরে অনুষ্ঠিত বৃক্ষমেলা প্রাঙ্গণ থেকে চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির মেধাবী ছাত্র দামুড়হুদা ব্রিজপাড়ার মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে সজিব নিখোঁজ হয়। এ সংক্রান্তে নিহত সজিবের নানা আব্দুল হামিদ পর দিন দামুড়হুদা মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। নিখোঁজের ৩২ দিনের মাথায় চুয়াডাঙ্গা শহরের সিঅ্যান্ডবি পাড়ার মৎস্য ভবনের পাশের একটি লাইট ফ্যাক্টরির সেফটিক ট্যাংকির ভেতর থেকে ৩১ আগস্ট বুধবার সকালে স্কুলছাত্র সজিবের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার হয়।