সক্রিয় জালনোট কারবারিদের টার্গেট পশুহাট

ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে উচ্ছ্বাস। কিন্তু আমাদের দেশের একশ্রেণির অসৎ ব্যবসায়ী এই উপলক্ষগুলোকে নানাভাবে তাদের বাড়তি অর্থ কামাইয়ের মাধ্যম হিসেবে টার্গেট করে। আর সাধারণ মানুষকে এর চরম মূল্য দিতে হয়। ঈদের বাজারে বিপুল পরিমাণ টাকা লেনদেন হয়। এই সময়টাতেই জালনোট কারবারিরা ভয়ঙ্করভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা মার্কেট, বিপণি-বিতান ও পশুর হাটে জালনোট ছড়িয়ে দেয়। দিন যতো যাচ্ছে সংঘবদ্ধ এই চক্র ততোই যেন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এবারো কোরবানির ঈদকে লক্ষ্য করে ১০ কোটি টাকার জালনোট বিক্রির টার্গেট নিয়েছে এরা। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, রাজধানীর বাইরে বিশেষ করে পশুর হাটগুলোতে শতাধিক চক্র প্রায় ৪০ কোটি টাকার জালনোট বিক্রির টার্গেট নিয়ে মাঠে নেমেছে।

প্রচলিত আইন অনুযায়ী যার কাছেই জালনোট পায়া যাবে তিনিই অপরাধী হিসেবে গণ্য হবেন। তাতে জালনোট বহনকারী ব্যক্তি জ্ঞাত হোন বা না হোন। যে কারণে একজন নিরীহ বাহকের বিপদগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সাধারণ দৃষ্টিতে জালনোট শনাক্ত করা সহজ নয়। সব সময় সব অবস্থায় মেশিনের মাধ্যমে সব নোট যাচাই করাও সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে বিপদের ঝুঁকি বিবেচনায় রেখেই কোনো কোনো গ্রাহককে জালনোট বহন করতে হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জালনোট চক্রের সাথে অর্থ লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশ থাকে এমন তথ্য প্রকাশিত সংবাদগুলোতে তুলে ধরা হয়েছে। বিভিন্ন সময় এর সত্যতাও মিলেছে। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রা জাল করার সাথে অবৈধভাবে বাংলাদেশে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকদের সম্পৃক্ততাও প্রমাণিত।

সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা হলো, এসব চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করা হলেও আইনের ফোকর গলে তারা ঠিকই বেরিয়ে আসে এবং পূর্ণোদ্যমে একই অপরাধ করতে থাকে। সম্প্রতি রাজধানীর পল্টন, কোতোয়ালি ও লালবাগ থেকে এ চক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে এক কোটি ১৫ লাখ ৭৭ হাজার টাকা, ৮ হাজার ভারতীয় রুপি ও জালনোট তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা পেশাদার জালটাকা প্রস্তুতকারী ও বিক্রেতা। এই চক্রটি পুলিশকে জানিয়েছে যে ইতোমধ্যে তারা ২ কোটি থেকে ৩ কোটি টাকার জালনোট রাজধানীর বাজারে ছেড়েছে। আরও ৭ কোটি থেকে ৮ কোটি টাকা পর্যন্ত জালনোট বাজারে ছেড়ে দেয়ার পরিকল্পনা ছিলো। সুতরাং পরিস্থিতি কতোটা ভয়ঙ্কর তা সহজেই অনুমেয়।

বাজারে জালনোটের ছড়াছড়ি শুধু সাধারণ মানুষের জন্যই বিপজ্জনক নয়। সার্বিক অর্থনীতির জন্যও এটি ঝুঁকিপূর্ণ। দেশের অর্থনৈতিক গতিশীলতা রক্ষা এবং নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে জালনোট কারবারিদের কঠোর হাতে দমন করতে হবে। আইনের ফোকর গলে তারা যেন বেরিয়ে না আসতে পারে সেটিও বিবেচনায় রাখতে হবে। কঠোর হস্তে এদের দমন করতে না পারলে ক্রমেই তারা আরো বেপরোয়া হয়ে দেশ ও জাতির জন্য বিপদ ডেকে আনবে যা আমাদের কারো কাম্য নয়।