আহাদ আলী মোল্লা: বিশ্বের সবচেয়ে খাটো দুই বোনোর বাড়ি চুয়াডাঙ্গায়। বয়সে তারা যুবতী হলেও স্বভাব-আচরণে শিশু। দিনভর পাড়ার শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলা করেই তাদের সময় কাটে। রাতে ঘুমায় মায়ের গলা ধরে। বাবার কোলে-পিঠে চড়ে ঘোরে এ বাড়ি ও বাড়ি। তল্লাটে সবাই তাদেরকে পুতুল মেয়ে বলেই জানে। এ কারণে ওদের বাড়ির নাম পড়েছে পুতুল বাড়ি। পুতুল বাড়ির পুতুল মেয়ে রূপা আর মিম কথা বলে তোতা পাখির মতো ছোট ছোট করে। শুনে মনে হয় কোনো যন্ত্র থেকে যেন মিষ্টি মিষ্টি কথাগুলো বেরিয়ে আসছে। দূর-দূরান্ত থেকে তাদেরকে অনেকেই দেখতে আসে। অচেনা
মানুষ দেখে খুব লজ্জা পায় ওরা। কথার ফাঁকে ফাঁকে মুচকি মুচকি হাসে।
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার আঠারখাদা গ্রামে রূপা আর মিমের বাড়ি। বাবা আবদুর রশিদ একজন ক্ষুদ্র কৃষক। মা ফাতেমা খাতুন গৃহিণী। তাদের সংসারে তিন সন্তান। রূপা বড়, মিম ছোট। তাদের একমাত্র ভাই নূর আলম জিকু মেজ। তিনি স্বাভাবিক। বর্তমানে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র জিকু। রূপার বয়স ২৬ বছর, আর মিমের ১৭। গ্রামের সেলিম আহমেদ ও সাংবাদিক ইখলাস হোসেন জানান, ‘আমরা মনে করি রূপা ও মিম বিশ্বের সবচেয়ে ছোট নারী। পত্রপত্রিকার খবর পড়ে যদ্দুর জানি এদের মতো খাটো নারী বিশ্বে আর নেই।’ বাবা আবদুর রশিদও একই দাবি করে বলেন ‘রূপার উচ্চতা ৩৪ ইঞ্চি, আর মিমের ৩৩। আমি মনে করি আমার মেয়েদের মতো এত কম উচ্চতার সহোদর পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই।’ তাই গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডে রূপা ও মিমের নাম লেখাতে চান তিনি। এ জন্য জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন আবদুর রশিদ। রূপা ও মিমের মা ফাতেমা খাতুন জানান, ‘ওদের জন্মের সময় ওরা খুবই ছোট আকৃতির হয়েছিলো। বেঁচে থাকবে এ বিশ্বাস কারোরই ছিল না।’ তিনি জানান, ‘ছোট মেয়ে মিমের জন্মের পর নিজের দেশসহ ভারতের অনেক নামী-দামি ডাক্তার দেখানো হয়েছে। কিন্তু ওদের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার ব্যাপারে সবাই নিরাশ করেছেন।’
রূপা খুব অভিমানী। কেউ কিছু বললে ওর সহ্য হয় না। রেগে গেলে ঘরের এটা ওটা আছাড় মারে। যা বায়না ধরে তাই দিতে হয়। বাবার পকেট থেকে টাকা নিয়ে একা একাই বাড়ির পাশের দোকানে চলে যায়। দিনভর খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকে। আর মোবাইলে শিল্পী মমতাজের গান শোনে। গানের তালে তালে নাচে। ছোট মিমের রাগ-অভিমান অনেক কম। বাড়িতে এই আছে, এই নেই। খেলতে চলে যায় পাড়ায়। অন্য শিশুদের সাথে চুটিয়ে খেলায় মাতে সে। ওদের রয়েছে হরেক কিছিমের খেলনা। সেসব খেলনা সাজানো গোছানোতে তাদের সময় কাটে। খিদে পেলে দৌড়ে ছুটে যায় মায়ের কাছে। অন্য শিশুরা স্কুলে গেলেও রূপা আর মিমের ভাগ্যে তা জোটেনি। প্রতিবেশীরা জানান, রূপাকে ১০-১৫ বছর আগে স্কুলে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তাকে নিয়ে স্কুলের অন্যান্য শিক্ষার্থীকে সামলাতে হিমশিম শিক্ষকরা। সব
ছাত্র-ছাত্রী রূপাকে দেখার জন্য হামলে পড়ে চিড়িয়াখানায় জন্তু দেখার মতো।
শিক্ষকদের বেকায়দা অবস্থার কারণে ওদেরকে আর স্কুলে পাঠানো হয়নি। তাছাড়া ওরা বুদ্ধিতে ৪-৫ বছরের শিশুর মতো। পড়াশোনা ওদের ভাল্লাগে না। রূপা ও মিমের দাদা হাবিবুর রহমান বিশ্বাস জানান, ‘আমার দুই নাতনিকে নিয়ে আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি বা বাজার ঘাটে যাওয়া যায় না। কৌতূহলী হাজারো মানুষ ওদের দেখার জন্য ঘিরে ধরে।’
ওদের পিতা কৃষক আবদুর রশিদ অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার দুই মেয়েকে দেখতে অনেকেই আসেন। প্রশাসনের অনেক কর্তা ব্যক্তিও রূপা-মিমের খবর জানেন, কিন্তু উপজেলা বা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওদের জন্য কোনো সাহায্য সহযোগিতা করেন না কেউ। কোনো ভাতাও পায় না তারা।’ এ ব্যাপারে স্থানীয় বাড়াদী ইউপি চেয়ারম্যান তবারক হোসেন বলেন, ‘ওরা ভাতা পায় না, তবে দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।’ আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজাদ জাহান বলেন, ‘আমি ঠিক ওদের কথা শুনিনি। তবে শিগগিরই সরেজমিনে গিয়ে ওদের সহযোগিতার ব্যবস্থা নেব।’