ব্যবহারিক পরীক্ষায় নম্বর কম : গুমরে কাঁদছে চুয়াডাঙ্গার বহু মেধাবী

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা পৌর ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক শামিমা সুলতানার বিরুদ্ধে পদার্থ বিজ্ঞান ব্যবহারিক পরীক্ষায় নম্বর কম দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর থেকে বেশকিছু অভিভাবক ওই অভিযোগ করেন। পদার্থ বিজ্ঞান ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৩৬২ জনের মধ্যে অধিকাংশ মেধাবীদেরই নম্বর কম দেয়ার কারণে তারা ওই বিষয়ে এ প্লাস বঞ্চিত হয়েছে। ফলে তারা বুয়েটসহ বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগই পাচ্ছে না।

প্রত্যাশিত নম্বর না পেয়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ অভিভাবক অভিন্নভাষায় জানান,  চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হয় গত ৩ এপ্রিল। চলে গত ১২ জুন পর্যন্ত। পরীক্ষায় এবার চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের মোট ১ হাজার ২৩২ শিক্ষার্থী পৌর কলেজ কেন্দ্রে অংশগ্রহণ করে। এরমধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৩৬২, মানবিক বিভাগে ৪৬২ এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ৪০৮ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীদের ব্যবহারিক পরীক্ষা শুরু হয় গত ১৪ জুন। চলে গত ২০ জুন পর্যন্ত।

অভিভাবকদের অভিযোগ, গত ১৮ আগস্ট পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হলে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধিকাংশ পরীক্ষার্থীর পদার্থ বিজ্ঞানে এপ্লাস না পাওয়ার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে।  কেনো পদার্থ বিজ্ঞানে নম্বর কম? প্রশ্নের জবাব খুঁজতে পাওয়া যায় ব্যবহারিকে কম নম্বরের বিষয়টি। যে সকল পরীক্ষার্থী পদার্থ বিজ্ঞান ব্যবহারিকে কম নম্বর পেয়েছে তারা পরীক্ষা দিয়েছিলো পৌর ডিগ্রি কলেজে। ব্যবহারিকে কম নম্বর দিলেন কেনো? এ প্রশ্ন নিয়ে গতপরশু ও গতকাল পৌর ডিগ্রি কলেজে হাজির হয়ে বেশ কজন অভিভাবক জবাব জানতে চান। উত্তেজনাও দানা বাধে।

অভিভাবকরা বলেন, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ কেন্দ্রে পৌর ডিগ্রি কলেজ ও মহিলা কলেজ থেকে অংশ নেয়া বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের সন্তোষজনক নম্বর দেয়া হয়েছে। অথচ চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় সুযোগ না পাওয়া শিক্ষার্থীরা পৌর ডিগ্রি কলেজ ও সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজে ভর্তি হয়ে থাকে। যেখানে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই এসএসসিতে জিপিএ ৫ পাওয়ার কৃতৃত্ব অর্জনকারী, তারা এইচএসসিতে পদার্থ বিজ্ঞান ব্যবহারিক পরীক্ষায় কম নম্বর কেনো? অধিকাংশেরই অভিযোগ পৌর ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক শামীমা সুতলানার বিরুদ্ধে। অভিযোগকারীরা বলেছেন, যেখানে ব্যবহারিক প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিই ছিলো না, যা ছিলো তা জং ধরা, অকেজো। সেখানে একজন মেধাবীর মেধার মূল্যায়ন হবে কীভাবে? তাছাড়া ব্যবহারিক পরীক্ষায় যেখানে ২৫ নম্বর, সেখানে কোনো শিক্ষার্থীকে ১২ দেয়া হলো কোন কারণে? লিখিতপরীক্ষায় ভালো নম্বর পেয়েও ব্যবহারিকে কম নম্বর দেয়ায় জিপিএ-৫ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়ার কষ্ট কুঁরে কুঁরে খাচ্ছে মেধাবী শিক্ষার্থীদের। এরা জিপিএ ৫ থেকেই শুধু বঞ্চিত নয়, বুয়েট কুয়েট, চুয়েটে, রুয়েটের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি দূরের কথা ভর্তি পরীক্ষায় আবেদনেরই সুযোগ পাচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক জানান, তার মেয়ে চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পায়। মেয়েটি চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এ বছরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। ব্যবহারিক প্রতিটি বিষয়ে ভালো নম্বর পেলেও পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ের ব্যবহারিক পরীক্ষায় তাকে খুব কম নম্বর দেয়া হয়েছে। যে মেয়ে পদার্থ বিজ্ঞান লিখিত পরীক্ষায় ৪০ নম্বরের মধ্যে ৩৮ পায় সে কিভাবে ব্যবহারিক পরীক্ষায় ১২ নম্বর পেলো? বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আর কোন শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে এমটি না ঘটে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। অভিন্ন অভিযোগ আরো বেশ কজন অভিভাবকের। এক অভিভাবক বলেছেন, লিখিত পরীক্ষায় ৪০ এর মধ্যে পেয়েছে ৩৯, অথচ ব্যবহারিক পরীক্ষায় ২৫ এর মধ্যে পেয়েছে ২১। এটা আবার কোন ধরনের মূল্যায়ন? ব্যবহারিক পরীক্ষায় নম্বর কম দেয়া কি শুধু্ই কর্তৃত্ব ফলানো? নাকি মূল্যায়নের নামে অবমূল্যায়ন? নাকি আড়ালে ছিলো অন্যকিছু?

ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ব্যবহারিক পরীক্ষার অন্যান্য বিষয়ে শিক্ষার্থীরা ভালো নম্বর অর্জন করে। কিন্তু শুধু পদার্থ বিজ্ঞান ব্যবহারিক বিষয়ে তাদের কম নম্বর দেয়া হয়েছে। পদার্থ বিজ্ঞান ব্যবহারিক পরীক্ষায় যে যন্ত্রপাতি দেয়া হয়েছে তা অনেক দিনের পুরোনো। তাতে মরিচা পড়ায় সঠিক মাপ আসেনা। তাছাড়া শিক্ষক শামিমা সুলতানা পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে ব্যবহারিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের বেশি নম্বর দেয়ায় এক্সটার্নালদের সাথে বাগবিতণ্ডা করেন। পরে শিক্ষক শামিমা সুলতানা নম্বর কেটে কম করে দেন। পরীক্ষার ফলাফলে তা স্পষ্ট।

চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক কামরুজ্জামান জানান, ব্যবহারিক পরীক্ষায় কম নম্বর দেয়ার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমাদের কলেজের পরীক্ষার্থীরা দক্ষ শিক্ষকদের নিকট থেকে শিক্ষা নিয়েই পরীক্ষায় অংশ নিতে পৌর ডিগ্রি কলেজে গিয়েছিলো। ব্যবহারিক পরীক্ষায় কম নম্বরের বিষয়টি আমাদের হতবাক করেছে। অথচ তাছাড়া তাদের কলেজের শিক্ষার্থীদের তো আমাদের শিক্ষকরা খোলা মনে নম্বর দিয়েছেন।

পৌর ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক শামিমা সুলতানার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ব্যবহারিক বিষয়ে নম্বর সঠিকভাবেই দেয়া হয়েছে। পরীক্ষার খাতা চ্যালেঞ্জ করলেই তা অভিভাবকদের কাছে স্পষ্ট হবে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন অভিভাবক মহল।