বৃদ্ধি পাক সচেতনতা, নিশ্চিত হোক শ্রমিকের নিরাপত্তা

 

মানুষসহ অধিকাংশ প্রাণির হৃদপিণ্ডের স্পন্দন অব্যাহত রাখে মূলত অক্সিজেন। বাতাসে সেটা ঘাটতি হলেই শ্বাসটা যেন বন্ধ হয়ে আসে। আর যদি অক্সিজেন শূন্য কোনো স্থানে যাওয়া যায়? মৃত্যু অনিবার্য। বারবার অনিবার্য এ মৃত্যু দেখার পরও শিখিনা বলেই অসংখ্য মানুষের প্রাণ অকালেই ঝরে ঝরে যাচ্ছে। আর এই ঝরে যাওয়া মানুষ প্রায় সকলেই দিন আনা দিন খাওয়া। দিনমজুর।

গত বছরের ২৮ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গা জীবননগরের বৈদ্যনাথপুরে দিনমজুর পিতা-পুত্রসহ ৪ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এরা একটি নির্মাণাধীন বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্কের শাটার খুলতে নেমে অক্সিজেনের অভাবে দমবন্ধ হয়ে মারা যান অর্থাৎ তাদের হৃদপিণ্ডের স্পন্দন থেমে যায়। থমকে যান ওদের পরিবারের সদস্যরা। এর বছর কয়েক আগে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের সিনেমাহলপাড়ার একটি বাড়িতে একইভাবে নির্মাণাধীন সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে নেমে প্রাণ হারান দু সহোদর। সর্বশেষ যশোরের কেশবপুরের একটি নির্মাণাধীন সেপটিক ট্যাঙ্কে নেমে বাবা ছেলেসহ মারা গেছেন ৫ জন। জীবননগরের বৈদ্যনাথপুরে যেমনভাবে সেপটিক ট্যাঙ্কে নামার পর ছেলের সাড়া না পেয়ে পিতাও নেমে প্রাণ হারান। তাদের উদ্ধারে অন্যরা নেমে মারা যান, ঠিক সেভাবেই যশোরের কেশবপুরে ঘটেছে মর্মান্তিক ঘটনা। সঙ্গত কারণেই, এভাবে আর কতোটা মৃত্যুর পর শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে? শ্রমিকরাও আবার কবে হবেন সচেতন?

নির্মাণাধীন সেপটিক ট্যাঙ্কই শুধু নয়, পরিত্যক্ত কুয়ো বা কম ব্যাসার্ধের গভীর গর্তেও অক্সিজেন তাড়িয়ে অন্য গ্যাস অবস্থান নিতে পারে। সে কারণেই ওরকম কোনো কুয়োর সেপটিক ট্যাঙ্কে নামার আগে অবশ্যই বাতাস সঞ্চালন সৃষ্টি করে অক্সিজেনের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। একটি টেবিলফ্যান দিয়েও কুপের বাতাস সঞ্চালনের মাধ্যমে কুপ নিরাপদ করা যেতে পারে। বাতাস সঞ্চালনের পর নিরাপত্তা রশি বেঁধেই কুপে নামা উচিত। কেননা, গর্তে নেমে অক্সিজেন আছে কি-না তা দেখতে গেলে ক্ষতিটা অনেক বেশি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। চোখের পলকেই দম বন্ধ হয়ে জ্ঞান হারায়। নিরাপত্তা রশি বাঁধা থাকলে দ্রুত তুলে তাকে যেমন বাঁচানো সম্ভাবনা থাকে, তেমনই অন্যের প্রাণহানির ঝুঁকিও থাকে না। এ বিষয়ে সকলকেই সচেতন হওয়া দরকার। একই সাথে কাজ করার সময় কোনো শ্রমিকের মৃত্যু হলে তার পরিবারকেও বিধিসম্মতভাতে উপযুক্ত আর্থিক সহযোগিতা করা উচিত। ক্ষতগ্রস্ত পরিবাকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পাইয়ে দেয়ার বিষয়ে প্রশাসনেরও দায়িত্বশীলতা প্রয়োজন।