চুয়াডাঙ্গার পীরপুরকুল্লা পোস্ট অফিসে বিলিকারক না থাকায় পোস্ট মাস্টার করছেন বিলিকারকের কাজ : বিলম্বে পৌঁছাচ্ছে ডাক

 

ভোগান্তি দূর করতে অবিলম্বে বিলিকারক নিয়োগের দাবি এলাকাবাসীর

জহির রায়হান সোহাগ: ‘নাই টেলিফোন নাইরে পিওন নাইরে টেলিগ্রাম, বন্ধুর কাছে মনের খবর ক্যামনে পাঠাইতাম’। ডিজিটাল যুগে ওই গান এখন অনেকটাই বেমানান। গ্রামে, যেখানে এখনো ডিজিটালের ছোঁয়া লাগেনি সেখানে সাধারণ মানুষের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ডাক। কিন্তু সেই সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার পীরপুরকুল্লা পোস্ট অফিসের অধীনে ৭টি গ্রামের প্রায় ৩২ হাজার মানুষ। পোস্ট অফিসে পোস্ট মাস্টার ও রানার রয়েছেন। কিন্তু বিলিকারক নেই। এলাকার মানুষের কল্যাণে পোস্ট মাস্টার নিজেই করছেন বিলিকারকের কাজ। তাই সঠিক সময়ে ডাক পেতে চরম ভোগান্তি শিকার হচ্ছেন এলাকার সাধারণ মানুষ।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম কুতুবপুর। যেখানে ব্রিটিশ আমল থেকেই পীরপুরকুল্লা পোস্ট অফিসের কার্যক্রম চলে আসছে। পোস্ট অফিসটি কোনো সরকারি ভবনে নেই। বিভিন্ন ভবনে ভাড়ায় থাকার কারণে পোস্ট অফিসের নির্দিষ্ট অবস্থান নিয়েও বিভ্রান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। সরকার থেকে ভাড়া বাবদ কিছু অর্থ বরাদ্দ এলেও তা অতি নগণ্য। তাই মাসে মাসে অতিরিক্ত ভাড়ার টাকা গুনতে হচ্ছে পোস্ট মাস্টারকে। ওই পোস্ট অফিসের অধীনে রয়েছে ঠাকুরপুর, ওসমানপুর, বয়রা, পীরপুরকুল্লা, মুন্সিপুর, কুতুবপুর ও জাহাজপোতা গ্রাম। ওই এলাকা থেকে জেলা শহরের দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। তাই যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে সাধারণ মানুষকে অনেকাংশে নির্ভর করতে হয় ওই পোস্ট অফিসের ওপর। অফিসে পোস্ট মাস্টার ও রানার থাকলেও বিলিকারক নেই। অবসর সময়ে পোস্ট মাস্টার ওই পোস্ট অফিসের অধীনে বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে ডাক বিলি করছেন। তাই সময়মতো ডাক পেতে ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।

পীরপুরকুল্লা পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার রাজু আহমেদ মাথাভাঙ্গাকে জানান, পোস্ট অফিসের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বিলিকারক (ইডিডিএ) নেই। প্রতিমাসে গড়ে প্রায় ৬শ ডাক আসে। এর মধ্যে রয়েছে ভিপি, পার্সেল, মানি অর্ডার, দেশ ও বিদেশ থেকে পাঠানো চিঠি। অফিসের কাজ করে অবসর সময়ে ডাকগুলো বিলি করতে হয়। তবে পোস্ট অফিসে নতুন করে ই-সেন্টার চালু হওয়ায় কাজের চাপ আরও বেড়ে গেছে। তাই ডাক বিলি করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে।

কুতুবপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কুদ্দুস জানান, ডাক এলেও তা সময়মতো পাওয়া যায় না। ডাক পেতে নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। আত্মীয়স্বজনরা কোনো পার্সেল পাঠালেও তা হাতে পেতে বেশ সময় লাগছে। পোস্ট মাস্টার এলাকার ছেলে। এলাকাবাসীর স্বার্থে তিনি নিজেই অবসর সময়ে ডাক বিলি করে থাকেন। তাই পোস্ট অফিসে একজন বিলিকারক অত্যন্ত প্রয়োজন।

জেলা পোস্ট অফিস পরিদর্শক শামস গোলাম হোসেন জানান, প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই ওই পোস্ট অফিসে কোনো বিলিকারক নেই। এলাকার মানুষ তাদের ভোগান্তির বিষয়টি একাধিক বার আমাকে জানিয়েছেন। ডাকঘরগুলো জিপিও বিভাগীয় অফিস খুলনা ও আঞ্চলিক অফিস কুষ্টিয়া থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করাপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। এদিকে ভোগান্তি দূর করতে অবিলম্বে ওই পোস্ট অফিসে বিলিকারক নিয়োগের দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।