প্রসংগ: পোশাক খাত

 

তৈরি পোশাক খাতের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম যে কোনো সময় বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে পারে। ভিয়েতনাম এগিয়ে এলে বিশ্বে পোশাক রফতানির দ্বিতীয় শীর্ষ দেশের অবস্থান হারাতে হবে বাংলাদেশকে। এতে রফতানি কমে গিয়ে বাংলাদেশকে প্রতিবছর হারাতে হবে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। পাশাপাশি প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। ফলে কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়বে শ্রমিকদের বড় একটি অংশ। যা সামগ্রিক অর্থে দেশের তৈরি পোশাকশিল্প খাতের ওপরই দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সম্প্রতি গণমাধ্যমে দেশের তৈরি পোশাক খাতের প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং ভিয়েতনামের এগিয়ে আসা নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তা এই আশঙ্কাকেই স্পষ্ট করে। পোশাক খাত জাতীয় রাজস্বের বড় একটি অংশের জোগান দিয়ে থাকে। ফলে ভিয়েতনামের এগিয়ে আসার এ খবরটি আমাদের পোশাক খাতের ভবিষ্যতের জন্য গভীর উদ্বেগের।

প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশ দু বছর আগেও ভিয়েতনামের চেয়ে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখেছিলো। এমনিতেই বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিকদের কর্মপরিবেশসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদিতে বিদেশি ক্রেতারা বার বার অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছেন। এসবের সাথে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে যুক্ত হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ের জঙ্গি তৎপরতা। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশিরা জঙ্গিদের অন্যতম টার্গেটে পরিণত হওয়ায় বিদেশি ক্রেতারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। বিশেষ করে গুলশান হত্যাকাণ্ড সবচেয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। কেননা, গুলশানে নিহত ইতালিয়ানরা ছিলেন বাংলাদেশের পোশাক আমদানিকারক। এসব ঘটনার কারণে বিদেশি ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। যাতে ভবিষ্যতে এ খাতে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা স্পষ্ট হচ্ছে। যা অত্যন্ত পরিতাপেরই জন্ম দেয়।

সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, বর্তমানে বিশ্বের তৈরি পোশাক খাতের বাজারের ৩৪ শতাংশই চীনের দখলে। এরপর ৪ দশমিক ৯ শতাংশ রফতানি নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। আর ৪ দশমিক ৬ শতাংশ রফতানি করছে ভিয়েতনাম। ৩ বছর আগেও ভিয়েতনামের রফতানির পরিমাণ ছিলো ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। শ্রম বাজারের কারণে ভিয়েতনামের চেয়ে বাংলাদেশ কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও ভিয়েতনামের অবকাঠামো এখন আরো উন্নত হয়ে উঠছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশে আবারো যদি গুলশান হত্যাকাণ্ডের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত জঙ্গি ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়, তাহলে বিদেশে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বাজার হারানোর শঙ্কা তৈরি হবে। যা কখনো কাম্য হতে পারে না। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার তথা সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া জরুরি, এসব শঙ্কা নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া।

জানা গেছে, শ্রমের দাম বেড়ে যাওয়ায় তৈরি পোশাকের বাজার ক্রমেই ছেড়ে দিচ্ছে চীন। আর বাজার দখলের প্রতিযোগিতায় রয়েছে বাংলাদেশসহ ভিয়েতনাম, ভারত, তুরস্ক ও ইন্দোনেশিয়া। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশের পোশাক রফতানি আয় ৫০ ইউএস ডলারে উন্নীতকরণের যে পরিকল্পনা রয়েছে বিজিএমইএর, তা অর্জনে চীনের ছেড়ে দেয়া বাজারে বাংলাদেশের প্রবেশের কোনো বিকল্প নেই। আর এর জন্য অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যেমন জরুরি তেমনি জঙ্গি তৎপরতা বন্ধও অপরিহার্য। বৈশ্বিক রাজনৈতিক ও জঙ্গিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে আমদানিকারকরা যদি নিজেদের স্বার্থে ভিয়েতনামকেই বেছে নেয় তাহলে সে পরিস্থিতি আমাদের জন্য নানা সঙ্কটের জন্ম দেবে। এমনিতেই পোশাক রফতানিতে আমাদের দ্বিতীয় অবস্থানে ভাগ বসাতে চতুর্থ অবস্থানে থাকা ভারত বিভিন্নভাবে এগিয়ে আসছে। ফলে বিদ্যমান এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশের পোশাকশিল্পের উত্তরণে সংশ্লিষ্টদেরই বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা নিয়ে দ্রুত এগিয়ে আসতে হবে।

সর্বোপরি বলতে চাই, আমাদের পর্যাপ্ত শ্রমশক্তি রয়েছে। যা বর্তমান ভিয়েতনামের চেয়েও সহজলভ্য। ফলে এ বিপুল শ্রমশক্তি বিনিয়োগের মধ্যদিয়েই বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পকে আরো অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া অসম্ভব নয়। পোশাক ব্যবসায়ীদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতেও নিতে হবে নানা পদক্ষেপ। ভুলে গেলে চলবে না, তৈরি পোশাক খাত জাতীয় রাজস্ব সমৃদ্ধ করছে। আমাদের প্রত্যাশা, সরকার ও সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিশ্চিতের মাধ্যমে এ খাতের উত্তরণে কার্যকর উদ্যোগ নেবে।

Leave a comment