পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুট বিপর্যস্ত : ভেসে গেছে চার পন্টুন

 

স্টাফ রিপোর্টার: পদ্মার প্রবল স্রোতে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়াগ নৌরুটের সব কিছু ওলট-পালট হয়ে গেছে। পাঁচ পন্টুনের মধ্যে চারটিই ভেসে যাওয়ায় ঘাটের দুপ্রান্তে কয়েক হাজার যাত্রী। নিদারুণ দুর্ভোগে পড়েন তারা। পরে অবশ্য কিছু কোচ ফেরিপারাপারের বদলে লঞ্চ পারাপারের মাধ্যমে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌছুনোর ব্যবস্থা করেন। এদিকে গতপরশু থেকে চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরের প্রায় সকল ঢাকা কোচই বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুন হয়ে চলাচল করে।

জানা গেছে, শনিবার একটি মাত্র ছোট ফেরি ওই একটি পন্টুন ব্যবহার করে চলাচল করতে থাকে। তাতে শুধুমাত্র ক্ষুদ্র যানবাহন পারাপারের ব্যবস্থা করা হয়। এ সুযোগে ক্ষুদ্র যানবাহনের ভাড়াও বাড়িয়ে নেয় কর্তৃপক্ষ। গাড়ি প্রতি ৫০ থেকে ১শ টাকা বাড়িয়ে নেয় তারা। কোচের যাত্রী যারা কোচ ছেড়ে ফেরিতে উঠেন তাদেরকে গুণতে হয় জনপ্রতি ৫০ টাকা করে। এমন অভিযোগ যাত্রীদের কাছ থেকে পাওয়া যায়।

জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসির ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম জানান, একটি ফেরি দিয়ে সীমিত আকারে যানবাহন পারাপার চলছে। অন্যগুলো ঠিক করার চেষ্টা হচ্ছে। পদ্মার তীব্র স্রোত ও ভাঙনে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটের দৌলতদিয়া প্রান্তে চারটি ফেরি ঘাটই বিকল হয়ে পড়ায় রোববার সকাল থেকে বহরের ছোট-বড় সকল ফেরি চলাচল সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ সময় এ রুটে ফেরি সার্ভিস বন্ধ থাকার পর দুপুরে তিন নম্বর ঘাটটি পরীক্ষামূলক চালু করায় সীমিত আকারে ছোট-ছোট যানবাহন পারাপার করা হয়। এতে ফেরি পারের অপেক্ষায় উভয় পাড়ে আটকে পড়েছে বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের সহস্রাধিক যানবাহন। হাজারো যাত্রী চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। ভোগান্তি এড়াতে এ নৌপথের বিকল্প হিসেবে যানবাহন চালক-মালিকদের যমুনা সেতু ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়ায় বন্ধ হওয়া ফেরিঘাটের মধ্যে ২টি ফেরিঘাট গতকাল রোববার থেকে চালু করা হয়েছে। নতুন করে আরো ২টি ফেরিঘাট নির্মাণের কাজ চলছে। আশা করি, ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে তা নির্মাণ সম্পন্ন হবে। বিআইডব্লিউটিসি’র আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটের দৌলতদিয়া প্রান্তে ঘাটের কাছে পদ্মায় তীব্র স্রোতে ভাঙনের মুখে পড়ে ঘাট এলাকা। পক্ষকাল যাবত সৃষ্ট স্রোতে মাত্রাতিরিক্ত গতিতে ফেরি চালাতে হয়েছে। অনেক ফেরি স্রোতের প্রতিকূলে চলাচল করায় ইঞ্জিন সমস্যায় বসিয়ে রাখা হয়েছে। এই অবস্থায় সচল ফেরিগুলো দিয়েও যানবাহন পারাপারে মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছিলো। এতে উভয় পাড়ের ঘাট এলাকায় যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।

বিআইডব্লিউটিসি’র আরিচা কার্যালয় উপ-মহাব্যবস্থাপক শেখ মোহাম্মদ নাসিম সাংবাদিকদের জানান, নৌপথ ও ঘাট তদারকি সংস্থা বিআইডব্লিউটিএ ঘাট ভাঙন রোধ ও সংস্কারে নিরলশ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে। ঘাট মেরামত না করা পর্যন্ত ফেরি চালু করা সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় ভোগান্তি এড়াতে যানবাহন চালকদের বিকল্পপথ হিসেবে যমুনা সেতু ব্যবহার করার অনুরোধও করেন তিনি।

বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নিজাম উদ্দিন পাঠান জানান, পাটুরিয়া প্রান্তের ঘাট সচল করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। তিন নম্বর ঘাট দিয়ে পরীক্ষামূলক ছোট-ছোট যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। এদিকে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রোববার দুপুরে বিআইডব্লিউটিসি’র চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান দৌলতদিয়া ঘাটে যান। তিনি সাংবাদিকদের জানান, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং বিআইডব্লিউটিএ’র সমন্বয়ে জরুরিভাবে সড়ক ও ঘাট নির্মাণ করে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক করা হবে। পাটুরিয়া ফেরিঘাটের ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন জানান, ঘাট এলাকায় যানবাহনের চাপ থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।