সন্ত্রাসী হামলায় পঙ্গুত্বের শিকার জয়রামপুরের হেলালের দিন কাটছে আতঙ্কে

 

স্টাফ রিপোর্টার: ধারালো অস্ত্রাঘাতে দু হাত প্রায় অচল। চিকিৎসার জন্য দেশের বড় বড় হাসপাতাল আর অপারেশনে কেটে গেছে ৩ বছর। নির্ধারিত সময়ে ভর্তি না হওয়ায় থেমে গেছে লেখাপড়া। আর এইসব যারা ঘটিয়েছে, সেই হামলাকারীরা ঘুরছে মুক্ত বাতাসে। মামলা করে পড়তে হয়েছে বিপাকে, উল্টো জুটছে প্রাণনাশের হুমকি। পরিবারের অন্য সদস্যরা দিন কাটাচ্ছেন আতঙ্কে। চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর গ্রামের কাঁঠালতলা  এলাকার মেধাবী ছাত্র হেলালউদ্দিনের জীবনে ঘটেছে এই ঘটনা ।

২০১৩ সালে রোজার মাসে (৭ আগস্ট ২০১৩) কাঁঠালতলায় স্থানীয় শামীম গ্রুপের সাথে পূর্ব বিরোধের একই এলাকার হাজিপাড়ার রাজু গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। ইফতারের পর পরই এ সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় নামাজ পড়ে বাড়ি ফিরছিলো জয়রামপুর কাঁঠালতলা পাড়ার মৃত রজব আলীর দুই ছেলে হেলাল ও শাহীন। পথিমধ্যে দুজনেই রাজুর হামলার শিকার হয়। শাহীনের গলায় ধারালো অস্ত্র ঠেকিয়ে চড় থাপ্পড় মেরে ছেড়ে দেয়া হলেও হামলাকারীর নৃশংসতার শিকার হয় হেলাল। রাজু তার পিতা রাজ্জাক ড্রাইভার, রমজানের ছেলে আ. ওহাব, সাগরের ছেলে তারিকসহ অন্যরা চাপাতি, রামদা দিয়ে হেলালকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয় হেলালকে। দুই হাতের জখম গুরুতর হওয়ায় স্থানীয় ডাক্তাররা তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে রেফার করেন। সেখানে কয়েক দফা অপারেশন করে হাতের লিগামেন্ট, পেশি ও হাড়ের চিকিৎসা করা হয়। যা চলে পরবর্তী দু বছর। হেলালের ওপর হামলার ঘটনার ছোটভাই শাহীন বাদী হয়ে ২০১৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট (দামুড়হুদা অঞ্চল) আদালতে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত দামুড়হুদা থানাকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেন। বাদীর অভিযোগ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আবু জাহের ভূঁইয়া আসামিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আদালতে একপেশে ও মিথ্যা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাদী আর মামলা চালাতে ইচ্ছুক নয়। পরবর্তীতে হাউলি চেয়ারম্যান মিন্টু শাহকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার আদেশ দেয়া হলে তিনিও গত বছরের ১৯ আগস্ট মিথ্যা ও বানোয়াট রিপোর্ট দাখিল করেন। আর এই সুযোগে ৪ আসামির মধ্যে ৩ জন গত ২ জুলাই মঙ্গলবার আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করে। মামলার প্রধান আসামি রাজু ঘটনার পর থেকে ভারতে আত্মগোপন করে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। অন্য ৩ আসামি সশরীরে আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বিজ্ঞ আদালত ৪ নং আসামি তারিক ছাড়া অন্য দুজনের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন। মামলা দায়েরের পর গত তিন বছরে এই প্রথমবারের মতো কোনো আসামি জেলহাজতে যাওয়ায় ক্ষিপ্ত অন্য আসামিরা। পলাতক রাজুর পিতা রাজ্জাক ড্রাইভার, অপর আসামি ওহাব জামিন পেয়ে এলাকায় ফিরে মঙ্গলবার রাত থেকেই মামলার বাদী শাহীনের পরিবারের সদস্য ও হামলার শিকার হেলালকে প্রাণনাশের হুমকি দিতে শুরু করেছে বলে জানা গেছে।

হেলালের আফসোস, যাদের কারণে আমার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেলো। দু হাত প্রায় অচল তারা কীভাবে মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়ায়? রাজনৈতিক চাপ আর টাকার বিনিময়ে পুলিশ, ইউপি চেয়ারম্যান সবাই বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাহলে ন্যায় বিচার হবে না? মামলার বাদী শাহীন আলীর আশঙ্কা ওরা যেকোনো সময় তার পরিবারে থাকা বৃদ্ধা মা অথবা পঙ্গুত্বের শিকার বড় ভাইকে প্রাণে মেরে ফেলতে পারে। আসামিদের ভয়ে মামলার বাদীকে চুয়াডাঙ্গা শহরে অবস্থান করতে হচ্ছে। মামলা আদালতে বিচারাধীন থাকায় নিজ পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তায় চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের সহায়তা প্রার্থনা করেছেন শাহীন আলী। আর সশস্ত্র হামলায় পঙ্গুত্বের শিকার কুষ্টিয়া পলিটেকনিকের প্রাক্তন ছাত্র হেলাল উদ্দিনের দাবি, যাদের কারণে তার ভবিষ্যত অন্ধকারের পথে ওই আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। যারা গত তিন বছর আইনের ফাঁক ফোকর গলিয়ে বার বার চলে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।