ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে কুঁচে শিকারে ৫ হাজার পরিবারে এসেছে সচ্ছলতা

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে কুঁচে শিকারে ৫ হাজার পরিবারে এসেছে চ্ছলতা

কালীগঞ্জ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহ জেলার একই উপজেলার কুঁচে শিকারি দিপক ও কিশোর জানান, তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কুঁচে শিকার করেন। এর মধ্যে ঝিনাইদহ জেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের কেজুলি বিল, কোটচাঁদপুর উপজেলার দোপিলা, সদর উপজেলার গাড়াগঞ্জ, যশোর বাস টার্মিনালের পাশের জলাভূমি, বরিশালের বিভিন্ন হাওড় ও বিল থেকে কুঁচে শিকার করেন। এছাড়া কুষ্টিয়া কুমারখালী, যশোর জেলার কেশবপুর, চৌগাছা, বসুন্দিয়া, খুলনার ফুলতলা, চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার জলাবদ্ধ অঞ্চল থেকেও কুঁচে শিকার করা হয় বলে তারা জানান। কুঁচে সাধারণত হাত দিয়েই ধরা হয়। তবে বর্ষা মরসুমে বড়শি ও চাই নামক বাঁশের তৈরি এক ধরনের যন্ত্র দিয়ে কুঁচে শিকার করা হয়। কালীগঞ্জ ও শৈলকুপার কয়েকজন কুঁচে শিকারির সাথে কথা বলে জানা যায়, মাঝারি সাইজের প্রতি কেজি কুঁচে ১৪০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়। তবে শীত মরসুমে কুঁচের সাইজ বেশ বড় হয়। এ সময় কেজিপ্রতি কুঁচে ২৫০ টাকা থেকে ৩শ টাকা দরে বিক্রি হয়। এতে সিজেনে জনপ্রতি প্রতিদিন কমপক্ষে ৫শ থেকে ৬শ টাকা আয় হয়।

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কুঁচে ব্যবসায়ী বিপুল দাস জানান, তিনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কুঁচে কিনে পরে পিক-আপে করে ঢাকায় মাল পাঠান। শুধু তিনি নন উপজেলার বেজপাড়া গ্রামের গনি দাস, তোতা দাস, যাদব দাস, রিপন দাস, শঙ্কর দাস ও দেবেন দাসও বিভিন্ন এলাকা থেকে শিকারিদের নিয়ে আসা কুঁচে কিনে তা ঢাকার আড়তদারদের কাছে বিক্রি করেন। ঝিনাইদহ জেলা থেকে প্রতিমাসে কমপক্ষে ২০ টন কুঁচে ঢাকায় পাঠানো হয় বলে তিনি জানান। ঢাকার আড়তদাররা দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে কুঁচে সংগ্রহ করে তা চীনে রফতানি করে। তিনি দাবি করেন, কুঁচে রফতানির মাধ্যমে দেশীয় অর্থনীতিতে প্রতিবছর যোগ হচ্ছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। দেশীয় অর্থনীতিতে নিজেদের সম্পৃক্ত রাখতে পারায় গর্ববোধ করেন বিপুল দাস।

শৈলকুপার কুঁচে ব্যবসায়ী কুমার বিশ্বাস জানান, বছরের আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন এই চার মাস অফ সিজেন। এ সময় কুঁচে তেমন পাওয়া যায় না। পেলেও সেগুলো খুব ছোট। যার কারণে বাজর দর ভালো পাওয়া যায় না। এ সময় কুঁচে শিকারিরা বেকার হয়ে পড়ে। এই ৪ মাস পরিবার পরিজন নিয়ে কুঁচে শিকারিদের বেশ কষ্টে দিন কাটে। নদী এলাকার মৎসজীবীদের সরকারি সহায়তার কথা তুলে ধরে কুমার বিশ্বাস ঝিনাইদহ জেলার কুঁচে শিকারিদের অফ সিজেনে সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতার দাবি করেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা মৎস কর্মকর্তা সাইদুর রহমান রেজা বলেন, উপজেলায় কুঁচে শিকারির সঠিক পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই। তবে উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকার কয়েকশ লোক এ পেশার সাথে জড়িত আছে। যাদের অনেককে মৎস্য শিকারীর আইডিকার্ড প্রদান করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাহায্য সহযোগিতা এলে এই কার্ডধারীরা তা পাবেন। তিনি আরো বলেন, কুঁচে শিকারীরা মৎসজীবীদের আওতায় পড়েন। এ পেশাজীবীদের জন্য কাঁকড়া ও কুঁচিয়া নামে সরকারের একটি প্রোজেক্ট আছে। এমন একটি প্রোজেক্ট এই উপজেলায় চালু করার জন্য তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে আবেদন করবেন বলে জানান।