ধৈর্য সহ্য সহিষ্ণুতা মসৃণ করে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের পথ

 

চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার গোবিন্দপুর বাউলদের আখড়ায় দুর্বৃত্ত হানা অন্যের প্রতি অসহিষ্ণুতারই নগ্ন বহির্প্রকাশ। হামলার ধরন দেখে, বর্ণনা শুনে যে বিষয়টি স্পষ্ট তা হলো দুর্বৃত্তরা সম্পদ সম্পত্তি লুটতে নয়, তারা বাউল আখড়া উচ্ছেদেরই অপচেষ্টা চালিয়েছে। হুমকিধামকিতেও ভিন্ন মতাবলম্বীদেরই হিংস্রতাই ফুটে উঠেছে। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন, যারা হামলা চালিয়েছে তাদের বিশ্বাসের ওপর অন্যরা যখন আঘাত হানবে তখন তারা সেই আঘাতকে কীভাবে দেখবে? সে কারণেই বোধকরি প্রায় সকল ধর্মেই ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি বারণ। যাদের মধ্য থেকে বাড়-বাড়ন্তের বিষয়টি বেরিয়ে আসে তাদেরকে কী বলা যায়- ধর্মের অপব্যাখ্যায় বিপথগামী? নাকি অন্ধ বিশ্বাসে ধর্মান্ধ?

অবশ্যই সম্প্রীতি তথা সহাবস্থান সর্বাগ্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সংখ্যাগুরু হয়ে সংখ্যালঘুর ওপর চোখ রাঙানো বা পেশিশক্তি প্রয়োগে স্বধর্মে নেয়ার চেয়ে নিজ ধর্মের ধর্মীয় গুণে অন্যকে আকৃষ্ট করাই কি উত্তম পন্থা নয়? যুক্তিতে না পারলে অযৌক্তিক পথ পরিহার করে পরবর্তী যুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ায় বুদ্ধিমানের কাজ। যদিও বিশ্ব সংসারের কোথাও কোথাও দুর্বলদের ওপর সবলদের আগ্রাসন, হিংসা হানাহানি ভয়ানক পরিণামের দিকেই টেনে নিয়ে যাচ্ছে। ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি আচরণ-আগ্রাসন, সোমালিয়ার ভয়াবহতার পাশাপাশি ইরাক যুদ্ধ এবং ধর্ম প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। একই সাথে প্রাসঙ্গিকতা পাচ্ছে, গোমাংস খাওয়ার অভিযোগ তুলে পিটিয়ে হত্যা, বাউল আখড়ায় নৃশংস হামলাসহ রাখাইন চিত্র। এসবের মধ্যে কি ধৈর্য-সহ্য, শিক্ষা-দীক্ষা, সহিঞ্চতায় ঘাটতির বিষয়টিই পরিলক্ষিত হচ্ছে না? অন্যকে অবিশ্বাস, অশ্রদ্ধা থেকেই ছড়াচ্ছে অসহিষ্ণুতা। পরস্পর শ্রদ্ধাবোধ? হিংসায় যেন তছনছ করে দিয়েছে সেই বন্ধন। রাজনীতি? সমাজের যেকোনো সঙ্কট উত্তরণের দায় রাজনীতির ওপরই বর্তায়। যদিও হিংসা ছড়ানোর আড়ালেও রাজনীতি থাকা অমূলক নয়। হিংসা হানাহানি যেমন কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য কল্যাণকর হয় না, তেমনই কোনো আদর্শ বা বিশ্বাসে উদ্বুদ্ধ কোনো দলকে নির্যাতন নিপীড়নে নিশ্চিহ্ন করার আশাও অবান্তর। অশান্তির জন্য অসুস্থ ধারার রাজনীতিও যে বহুলাংশে দায়ী তা অস্বীকার করার জো নেই।

সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা যদি সকল ধর্মেরই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুশাসন হয়ে থাকে, তাহলে অশান্তি কেন? যা কিছু সুন্দর, যা কিছু ভালো যুগে যুগে সেটাই তো গ্রহণযোগ্য হয়েছে, হচ্ছে। দরকার শুধু ধৈর্য আর ভালোগুলো মেলে ধরা। হিংসা ছড়িয়ে, পেশিশক্তি প্রয়োগে শান্তি আসে না। অশান্তি বাধিয়ে ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের চেষ্টাও গ্রহণযোগ্য হয় না। সে কারণে তা যুগে যুগে হিংসা ধিক্কৃত হয়েছে। নিক্ষিপ্ত হয়েছে ইতিহাসের আস্তাকুড়েই। এরপরও কেন অন্যের প্রতি অন্যায়, অনাচার? কেন হিংসাত্মক পথে হেঁটে নিজের বিশ্বাসকে বিশ্ব দরবারে খাটো করা? উগ্রতা পরিহারে সকলকে সহিষ্ণু হতে হবে। একে অন্যের প্রতি দেখাতে হবে সম্মান।

Leave a comment