চুয়াডাঙ্গা সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজ জেলার নারীশিক্ষার বাতিঘর : নিপক কর্মসূচি ঘটিয়েছে ইতিবাচক পরিবর্তন

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজ জেলার নারীশিক্ষার বাতিঘর  হিসেবে ভূমিকা রেখে চলেছে। বিশেষ করে ছাত্রীদের নিয়মিত কলেজে উপস্থিতি ও শিক্ষার মানোন্নয়নে অধ্যক্ষ প্রফেসর নওরোজ মোহাম্মদ সাঈদের নেতৃত্বে এবং উপাধ্যক্ষ ড. জাহাঙ্গীর আলমসহ শিক্ষক মণ্ডলীর সহযোগিতায় গৃহিত ‘ নিপক’ কর্মসুচি কলেজে নবযুগের সূচনা করেছে।

নিবিড় পর্যবেক্ষণ কমিটি সংক্ষেপে নিপক কর্মসূচি বিষয়ে কলেজটির শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও অভিভাবকদের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে। শিক্ষকেরা জানান, কয়েকমাস আগেও যেখানে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ছাত্রী কলেজে আসলেও নিপক কর্মর্সূচির পর ছাত্রী উপস্থিতির হার গড়ে ৮৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এতে কলেজ সংশ্লিষ্ট সকলেই খুশি।

১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ চুয়াডাঙ্গা সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজা। কলেজটিতে একাদশ,দ্বাদশ স্নাতক (পাশ) শ্রেণির পাশাপাশি অনার্সে ৪টি বিষয়ে পাঠদান করা হয়। বর্তমানে কলেজটিতে ১ হাজার ৪৮৮ ছাত্রী পড়াশুনা করছে। কলেজের  শিক্ষক ও  ছাত্রীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে,অধ্যক্ষ প্রফেসর নওরোজ মোহাম্মদ সাঈদের  নেতৃত্বে ও সময়োপযোগী কর্মতৎপরতায় ছাত্রীদের পড়াশোনায় ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে।

ইতিবাচক এই পরিবর্তনের পেছনের গল্প  শোনাবো আজ।  অধ্যক্ষ প্রফেসর নওরোজ মোহাম্মদ সাঈদের ঢাকা, যশোরসহ দেশের বেশ কয়েকটি শহরে নামকরা কলেজে চাকরির অভিজ্ঞতা রয়েছে। অভিজ্ঞতার ঝুলিতে যেমন ভালো কিছু আছে, তেমনি মন্দের হারও কম না। চুয়াডাঙ্গা কলেজে যোগদানের পর অনেকটা মন্দ অভিজ্ঞতার মুখোমুখী হন অধ্যক্ষ প্রফেসর নওরোজ মোহাম্মদ সাঈদ। বিশেষ করে ছাত্রীদের কলেজে অনিয়মিত উপস্থিতি তাকে ভাবিয়ে তোলে। ছাত্রীদের অনুপস্থিতির কারণে কলেজের পড়াশোনাও ব্যহত হতে থাকে। ছাত্রীর অভাবে কোনো কোনো দিন ক্লাসই হয়নি। যার প্রভাব পড়েছে বিগত দিনে পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে।

এদিকে, কলেজের এই নিস্তরঙ্গ পরিবেশ থেকে সার্বিক উন্নয়নে অধ্যক্ষ সকল শিক্ষককে নিয়ে বৈঠক করেন। প্রথমে তিনি সহকর্মীদের কাছ থেকে তাদের পরিকল্পনার কথা জানতে চান। এরপর  সহকর্মীদের পরিকল্পনার সাথে নিজের চিন্তা-চেতনা মিশেল ঘটিয়ে পরিকল্পিতভাবে মাঠে নামেন। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে তোলেন, নিবিড় পর্যবেক্ষণ কমিটি-নিপক। এরপর থেকে কলেজে ছাত্রীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রতি  ৪০ জন শিক্ষার্থী প্রতি একজন শিক্ষককে দায়িত্ব দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা ওই ৪০ ছাত্রীর মধ্যে কেউ অনুপস্থিত থাকলে তার অভিভাবকের কাছে খোঁজ নিচ্ছেন। ছাত্রীর সাথেও কথা বলছেন। সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া কেউ অনুপস্থিত থাকলে তাদেরকে কলেজমুখী করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সাধারণ শিক্ষক ছাড়াও অধ্যক্ষ নিজেও ক্লাস নেন। পাঠ্যবইয়ের বাইরে সপ্তাহে একটি সঙ্গীতের ক্লাস, রোভার ও রেডক্রিসেন্ট চালু রয়েছে। কলেজ চত্বরে চালু করা হয়েছে ক্যান্টিন।

দাতা সদস্য আলী আহসান বাবলু মাস্টার জানান, আগে মেয়েরা কলেজে এসেই এক আধ ঘন্টা থাকার পর মেয়েরা দলবেঁধে বাইরে চলে যেতো। তিনি বলেন, কলেজ প্রশাসন কড়াকড়ি আরোপ করায় মেয়েরা নিয়মের মধ্যে চলে এসেছে। একাদশ শ্রেণির জান্নাতুল নাঈমা, নাসরিন আক্তার কলেজের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। কমনরুমে কেরামবোর্ডের আয়োজন থাকায় ছাত্রীরা সকলেই খুশি।  তারা কলেজে হ্যান্ডবল, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন খেলার ব্যবস্থার দাবি জানায়।

অধ্যক্ষ প্রফেসর নওরোজ মোহাম্মদ সাঈদ জানান, কলেজের বর্তমান পড়াশোনার পরিবেশ ধরে রাখতে কলেজ প্রশাসন, শিক্ষক-কর্মচারী ,শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিরা সকলেই আন্তরিক। তিনি বলেন,‘কলেজের শিক্ষক সঙ্কট দূরীকরণ, অবকাঠামোর উন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা, আবাসিক সঙ্কট সমাধান করা অতি প্রয়োজন। এক্ষেত্রে, এ অঞ্চলের সব মানুষের চাওয়া শিক্ষামন্ত্রী ও হুইপ মহোদয় এবং স্থানীয় প্রশাসন সহযোগিতার ধারা অব্যাহত রাখলে তা দ্রুততম সময়েই সমাধান সম্ভ